সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার ওয়াসিম।

টাঙ্গাইলের বাসাইল থানাধীন বাংড়া পূর্ব পাড়া গ্রামে এক সৌদি প্রবাসীর স্ত্রী হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে সিআইডি পুলিশ। গ্রেপ্তার করেছে হত্যাকারীকে।

গত ১২ এপ্রিল রাত আনুমানিক ১১ টা ২০ মিনিটে বাংড়া পূর্ব পাড়া এলাকার সৌদি আরব প্রবাসী জাহিদ হোসেন ময়নালের বসতঘরে তার স্ত্রী লিমা আক্তারকে (২৮) তার পরিবারের লোকজন রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, টাঙ্গাইল নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

রাতের বেলায় নিজ ঘরে প্রবাসীর স্ত্রী খুনের ঘটনাটি দেশজুড়ে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। তখন বিভিন্ন তদন্ত সংস্থার পাশাপাশি সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার, জনাব মুক্তা ধর পিপিএম (বার) এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে ও নির্দেশনায় সিআইডির এলআইসি শাখা ছায়া তদন্ত শুরু করে।

ঘটনাস্থল ও আশপাশের এলাকার বিভিন্ন উৎস থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সরেজমিনে সংগ্রহ করা হয়।

পরে সংগৃহীত বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ঘটনার সঙ্গে ওয়াসিম (৩২) নামে এক ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়।

এরপর এলআইসি’র একটি চৌকস টিম অভিযান চালিয়ে ১৯ এপ্রিল দিবাগত রাতে আশুলিয়া থেকে ওয়াসিমকে গ্রেপ্তার করতে সমর্থ হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান যে, তিনি পেশায় একজন ট্রাকচালক। গাড়ি চালিয়ে প্রাপ্ত টাকা দিয়ে প্রায়ই তার সহকর্মীদের সাথে জুয়া খেলার কারণে নিয়মিত সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো। সেজন্য প্রতিবেশী সৌদি প্রবাসী জাহিদ হোসেন ময়নালের স্ত্রী তার ভাবী লিমা আক্তারের কাছ থেকে প্রায়ই নগদ টাকা ধার করে সংসার চালাতেন। কিন্তু আজ দিচ্ছি কাল দিচ্ছি বলে কোনও টাকা পয়সা পরিশোধ না করে নিত্য নতুন ফন্দি ফিকির এটে ধারের পরিমাণ বাড়াতে থাকে। এদিকে লিমা আক্তারের স্বামী জাহিদ হোসেন ময়নাল সৌদি আরব থেকে এরই মধ্যে দেশে আসার কথা। স্বামী দেশে আসার দিন যত ঘনিয়ে আসতে থাকে স্ত্রী লিমা আক্তারের দুশ্চিন্তা ততই বাড়তে থাকে। বিদেশে স্বামীর কষ্টার্জিত টাকা কোনো ধরণের সাক্ষী না রেখে স্বামীর অনুমতি ছাড়া প্রতিবেশী জুয়াড়ী দেবরকে প্রায় ২.৫ লক্ষ টাকা ধার দিয়েও কোনও টাকা ফেরত পাওয়ার আশা না থাকায় দেনাদার ওয়াসিমকে পেয়ে তিনি গাল- মন্দ করেন। পাওনা টাকা ফেরত না দিলে তার বিরুদ্ধে গ্রাম্য সালিশ বসানো ও আইনের আশ্রয় নেওয়ার কথা বলায় ওয়াসিম ক্ষিপ্ত হন। তিনি ধারের টাকা আত্মসাৎ করার এবং তাকে অপমান করার প্রতিশোধ নেয়ার পরিকল্পনা করেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ১২ এপ্রিল রাতে ওয়াসিম ভাবী লিমা আক্তারের ঘরের সামনে যেয়ে তার পাওনা টাকা নিয়ে এসেছেন এবং দরজা খুলে টাকা নেয়ার জন্য বলেন। তখন লিমা দরজা খুললে তিনি তাকে ধাক্কা দিয়ে ঘরের ভিতর ঢুকে যান এবং তার হাতে থাকা ইট দিয়ে উপর্যুপরি লিমা আক্তারের মাথা বরাবর আঘাত করলে লিমা আক্তার মাটিতে পড়ে যান। তখন ঘরের মধ্যে থাকা ৪ বছর বয়সী লিমা আক্তারের শিশু সন্তান তাওহীদ ঘটনার আকস্মিকতায় ভয় পেয়ে চিৎকার করতে থাকলে ওয়াসিম দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে পালিয়ে যান। শিশু তাওহীদের চিৎকারে পাশের ঘরে থাকা তার দাদা মো. জোয়াহের আলী মিয়া তার ঘর থেকে বের হয়ে লিমার ঘরের দিকে যাওয়ার সময় ওয়াসিমকে দেখতে পেয়ে তাকে ঝাপটে ধরার চেষ্টা করেন। ওয়াসিম তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে পালিয়ে গেলে দাদা ঘরের ভিতর তাওহীদকে ক্রন্দনরত এবং ছেলের বউ লিমা আক্তারকে রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন। তিনি চিৎকার দিলে আশপাশের আত্মীয়স্বজন এগিয়ে এসে লিমা আক্তারকে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, টাঙ্গাইল নিয়ে যায় । সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন

এ ঘটনায় লিমা আক্তারের শ্বশুর মোঃ জোয়াহের আলী মিয়া (৭০) ওয়াসিমের বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে টাঙ্গাইল জেলার বাসাইল থানায় মামলা হয়।