রাজধানীর ধানমন্ডিতে মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সংস্থার সমন্বয়ক সানাউল হক। ছবি: বাসস

১৯৭১ সালে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের দায়ে সংগঠন হিসেবে প্রকাশ্য আদালতে জামায়াতে ইসলামীর বিচার হওয়া উচিত বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক সানাউল হক।

মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে আনা পৃথক দুটি মামলার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশকালে তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক এ কথা বলেন। রাজধানীর ধানমন্ডিতে সংস্থার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। মানবতাবিরোধী অপরাধে একটি মামলায় কুড়িগ্রামের ১৩ জন ও অপর একটি মামলায় সাতক্ষীরার চারজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জামায়াত বিষয়েও কথা বলেন সানাউল হক। খবর বাসসের।

সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচারের প্রসঙ্গ ওঠে। তখন সানাউল হক বলেন, সংগঠন হিসেবে জামায়াতের ইসলামীর বিচার, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিচার। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই বিচার শুরু করা উচিত। তিনি বলেন, যখন সংগঠনের বিচার হয়, তখন ওই সংগঠনের অঙ্গসংগঠন ও জড়িত ব্যক্তিদেরও বিচার হয়। সংগঠনের নেতৃত্বের দায় চলে আসে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক আরও বলেন, আজকে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান হচ্ছে, ধর্মান্ধতার সুযোগ নিয়ে অনেকে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। এদের সমূলে উৎপাটন করতে গেলে জামায়াতের স্বরূপ উন্মোচনে প্রকাশ্যে বিচারটি হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা এ পর্যন্ত ৮০টি মামলার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচারে গঠিত হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক ইশতেহার ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা। সে নির্বাচনে তারা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে বিজয়ী হয়। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০০৯ সালের ২৯ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রস্তাব পেশ করলে তা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। অবশেষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের ৩৯ বছর পর মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচারের জন্য ২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইবুনাল, আইনজীবী প্যানেল এবং তদন্ত সংস্থা গঠন করা হয়।

তদন্ত সংস্থা ৮০টি মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দেয়।
বিচার শেষে এ টাইব্যুনালে এ পর্যন্ত ৪২টি মামলার রায় হয়েছে। এসব মামলায় ৭১ আসামির মৃত্যুদন্ডের রায় হয়েছে। আমৃত্যু কারাদন্ড হয়েছে ২২ আসামির। খালাসের রায় পেয়েছেন একজন। রায়ের বিরুদ্ধে আনা আপিল শুনানির পর ৬ জনের মৃত্যুদন্ড বহাল এবং পরবর্তীকালে রায় কার্যকর করা হয়েছে। ফাঁসি হওয়া ৬ জন হলেন জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, মীর কাসেম আলী এবং বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী।