ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা আবু সুফিয়ান পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশ্যে পাসপোর্ট তৈরির কথা ভাবছিলেন। ইন্টারনেট বিষয়ে তার জানাশোনা ছিল সামান্য। কীভাবে পাসপোর্ট পাবেন, এ বিষয়ে তার ধারণাই ছিল না।

আবু সুফিয়ানকে উপায় বাতলে দেন তার ছোট ছেলে। তার পরামর্শে বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়নে খোঁজ নিয়ে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট খুঁজে পান তিনি।

তথ্য বাতায়নে পাসপোর্ট তৈরির বিষয়ে সব তথ্য ও নিয়মকানুন জানতে পারেন আবু সুফিয়ান। এ নিয়ে বার্তা সংস্থা বাসসকে তিনি বলেন, ‘তথ্য বাতায়নের কারণে পাসপোর্ট বানানো অনেক সহজ হয়েছে। নিয়মকানুন মেনে আমি খুব সহজেই পাসপোর্ট পেয়েছি এবং এখন আমার হজ পালনের প্রস্তুতি প্রক্রিয়া চলছে। এ জন্য আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কারণ তিনিই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার উদ্যোগ নিয়েছেন।’

তানিয়া ফেরদৌস নামের এক তরুণী তার সদ্যোজাত শিশুর জন্ম সনদ পেতে জাতীয় তথ্য বাতায়নের সাহায্য নিয়েছিলেন। তিনি পোর্টাল ভিজিট করে রেজিস্ট্রার জেনারেল, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন কার্যালয়ের ওয়েবসাইট খুঁজে পান। সেখানে তিনি অনলাইন রেজিস্ট্রেশন শেষ করেন এবং কিছুদিনের মধ্যেই ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শিশুর জন্ম নিবন্ধন সনদ হাতে পান।

এ নিয়ে তানিয়া বলেন, ‘জাতীয় তথ্য বাতায়নের মাধ্যমেই জন্ম নিবন্ধনের ওয়েবসাইট খুঁজে পেতে সুবিধা হয়েছে। এ ছাড়া অনলাইনে নিবন্ধন প্রক্রিয়াটাও অনেক সহজ। কোনো ঝামেলা ছাড়াই আমার বাচ্চার জন্ম নিবন্ধন সনদ খুব দ্রুতই হাতে পেয়েছি।’

উল্লিখিত দুই সুফলভোগীর মতোই জাতীয় তথ্য বাতায়ন থেকে প্রয়োজনীয় সেবা পেয়েছেন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের কৃষক মোহাম্মাদ রফিক।

জমির ফসলে পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখতে পেয়ে তিনি ফসল রক্ষার জন্য পরিচিতদের পরামর্শে অনেক প্রক্রিয়া অবলম্বন করেন। তারপর তিনি স্কুলগামী ছেলের পরামর্শে উপজেলা ডিজিটাল সেন্টারে (ইউডিসি) যান। সেখানে বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন ভিজিট করেন।

তথ্য বাতায়নের মাধ্যমে রফিক কৃষিবিষয়ক ওয়েবসাইটে তার সমস্যা সম্পর্কিত প্রশ্নটি সাবমিট করেন। পরবর্তী সময়ে একজন কৃষি বিশেষজ্ঞের পরামর্শে খুব দ্রুতই তার জমির ফসল পোকামাকড়মুক্ত হয়।

রফিক বলেন, ‘পোর্টাল থাকার কারণেই আমি আমার ফসল বাঁচাতে পেরেছি। এখন ফসল পোকামাকড়মুক্ত রাখার জন্য আগে থেকেই ব্যবস্থা নিতে পারব।’

সারা দেশে আবু সুফিয়ান, তানিয়া ফেরদৌস ও মোহাম্মদ রফিকের মতো হাজারো মানুষ জাতীয় তথ্য বাতায়নের ৫১ হাজার পাঁচ শর বেশি ওয়েবসাইট থেকে সেবা পাচ্ছেন।

এ বিষয়ে অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের জাতীয় তথ্য বাতায়ন ইমপ্লিমেন্টেশন স্পেশালিস্ট মো. দৌলতুজ্জামান খান বাসসকে বলেন, ‘সরকার জাতীয় তথ্য বাতায়ন চালু করেছে। এখানে সরকারের সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগের নাম, ঠিকানা ও সেখানকার সেবা পাওয়ার জন্য যোগাযোগের পদ্ধতি সংক্রান্ত সব তথ্যই রয়েছে। এটি বাংলাদেশ সরকারের সকল তথ্য এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত করার একটি প্রয়াস।’

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, বিভাগীয় ও জেলা পর্যায় থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়ের ৫১ হাজার পাঁচ শর বেশি সরকারি অফিসের সকল তথ্য এখানে রয়েছে।’

বাংলাদেশ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে মন্তব্য করে দৌলতুজ্জামান খান বলেন, ‘বাংলাদেশ ৫১ হাজার পাঁচ শ ওয়েবসাইট একটি প্ল্যাটফর্মের অধীনে নিয়ে এসে বিশ্বে একটি অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। জাতীয় তথ্য বাতায়নে তথ্যগুলি পদ্ধতিগতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এটি একটি টপ-ডাউন পদ্ধতি অনুসরণ করে করা হয়েছে। যেমন: মন্ত্রণালয়, বিভাগ, জেলা, উপজেলা ইত্যাদি।’

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ সরকার গ্রাম ও শহরের মধ্যকার ডিজিটাল বিভাজন কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে এবং জাতীয় তথ্য বাতায়ন জনগণের তথ্যের অধিকার নিশ্চিত করতে ‘মাল্টিপ্লাইয়ার ইফেক্ট’ সৃষ্টি করছে।”

এটুআইয়ের এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ছাড়াও সারা পৃথিবী থেকেই বাংলাদেশিরা সরকারের বিভিন্ন মিশনের মাধ্যমে জাতীয় তথ্য বাতায়নের সেবা গ্রহণ করছে। বাংলাদেশ সরকার ২০১৪ সালে জাতীয় তথ্য বাতায়ন চালু করে।’