গ্রেপ্তারের প্রতীকী

১৯৯৩ সালে রাজধানীর কেরাণীগঞ্জে বাবা-ছেলেকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আরিফ ওরফে সরিফুল ইসলামকে (৫২) গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) রাতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে প্রায় ৩০ বছর ধরে পলাতক থাকা আরিফকে গ্রেপ্তার করেন র‍্যাব-১০ এর সদস্যরা।

র‍্যাব জানায়, ১৯৯৩ সালের ১৩ জুলাই কেরাণীগঞ্জের মালোপাড়া বারিশুর বাজারে একটি মুদি দোকানে বাবা-ছেলেকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষে ২০০৪ সালের ২১ জুলাই আদালত আরিফসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। ২০০৮ সালে হাইকোর্ট পুনর্বিচারের জন্য মামলাটি নিম্ন আদালতে পাঠায়।

নিম্ন আদালত সব বিচারিক কার্যক্রম শেষে ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর আরিফসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন। রায় ঘোষণার সময় আরিফ ও মাসুদ পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

তাদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারির ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার রাতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে আরিফকে গ্রেপ্তার করা হয়।

শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, ভিকটিম শরিফ কেরাণীগঞ্জের মালোপাড়া বারিশুর বাজারে মুদিপণ্যের ব্যবসা করতেন। গুদারাঘাট সংলগ্ন দোকান হওয়ায় শরিফ প্রায় সময়ই মধ্যরাত পর্যন্ত বেচা-কেনা করতেন। তার দুই ছেলে খোকন (তৎকালীন বয়স ৯) ও শাহজাহান (তৎকালীন বয়স ১২) নিয়মিত শরিফের জন্য রাতের খাবার বাসা থেকে নিয়ে আসত। তারা তার বাবার সঙ্গে রাতের খাবার খেয়ে পড়াশোনা করে দোকানেই ঘুমিয়ে পড়ত।

ঘটনার দিন শরিফ বেচা-কেনা শেষ করে দোকান বন্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সেসময় দোকানের পেছনের অংশে তার দুই ছেলে ঘুমাচ্ছিল। তখন শরিফের দোকানে আরিফ এবং তার সহযোগীরা এসে সিগারেট ও অন্যান্য মালামাল জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিলে বাগবিতণ্ডা হয়।

পরবর্তী সময়ে আরিফ ও তার সহযোগীরা দোকানের ক্যাশ বাক্স থেকে নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে শরিফুল বাধা দেয়। এসময় আরিফ ও তার সহযোগীরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন। চিৎকার শুনে দোকানের পেছনের অংশে ঘুমিয়ে থাকা তার দুই সন্তান বাবাকে বাঁচাতে আরিফ ও তার সহযোগীদের হাতে-পায়ে ধরে আকুতি-মিনতি করতে থাকে।

কিন্তু তারা শরিফের দুই সন্তানকেও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। তখন তিনজনই মারা গেছে ভেবে তারা ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়।

পরদিন ভোরে স্থানীয়রা শরিফের দোকান খোলা দেখে সেখানে আসে এবং দোকানের ভেতরে তিনটি নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখে। তখন তারা শরিফের বড় ছেলেকে খবর দেয়। ভিকটিমের বড় ছেলে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখতে পায় তার বাবা ভিকটিম শরিফ ও তার ছোট ভাই খোকন মারা গেছে এবং তার অন্য ভাই শাহজাহান গুরুতর জখম অবস্থায় পড়ে আছে। এসময় শাহজাহানকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

ঘটনার পর আরিফ বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন। তিনি নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় এসে নাম ও পরিচয় গোপন করে সরিফুল ইসলাম নামে একটি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে ঢেউটিন ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন।

তার ধারণা ছিল ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করলে তিনি গ্রেপ্তার এড়াতে পারবেন। পরে ঢেউটিন ফ্যাক্টরিটি বন্ধ হয়ে গেলে আরিফ নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে সরিফুল পরিচয়ে মুদি ও লন্ড্রি দোকানের ব্যবসা করে আসছিলেন।

গ্রেপ্তার আসামির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।