মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যানবাহন ভাঙচুর করা শিক্ষার্থীদের কাজ নয়। অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। খবর বাসসের।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বুধবার সকালে বিজয়ের মাসের প্রথম দিন বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি ম্যুরাল এবং রাজধানীর ধানমন্ডিতে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ১২ তলাবিশিষ্ট অত্যাধুনিক ‘জয়িতা টাওয়ার’ নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চ্যুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাস্তায় নেমে গাড়ি ভাঙা এটা ছাত্রদের কাজ নয়, এটা কেউ করবেন না। দয়া করে যার যার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যান, লেখাপড়া করেন। আর যারা দোষী, তাদের খুঁজে বের করে অবশ্যই শাস্তি দেওয়া হবে, সেটা আমরা করব।’

লেখাপড়া শিখে আজকের শিশুদের আগামীতে দেশের জন্য কাজ করতে হবে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ভবিষ্যতের পথে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আজকের ছেলে-মেয়েদের নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেক সতর্ক। সঙ্গে সঙ্গেই অপরাধীদের খুঁজে বের করা হয়েছে। তা ছাড়া সবকিছুর ভিডিও ফুটেজও রয়েছে। তাই যেকোনো সময় যেকোনো অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্রে তাদের ধরে ফেলা খুব একটা কঠিন কাজ নয়। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করেই সেটা করা হচ্ছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভবিষ্যতে এই গাড়ি ভাঙচুর এবং আগুন দেওয়ার ঘটনা যারা ঘটাবে, তাদের খুঁজে বের করা হবে, শাস্তি দেওয়া হবে। কেননা, যে গাড়িতে আগুন দেওয়া হচ্ছে, সে গাড়িতে যদি কেউ মারা যায় বা আগুনে পোড়ে, তার জন্য কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। এ কথাও মাথায় রাখতে হবে।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়িতে পর পর দুজন নিহত হওয়ার ঘটনা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যথাযথভাবে তদন্ত করে দেখারও নির্দেশ দেন।

তিনি বলেন, ‘আমি এটুকুই চাই, আমাদের দেশের যে উন্নয়ন আমরা করে দিচ্ছি, সেটা ধরে রেখে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আজকের শিশুরা আগামী দিনের সোনার বাংলাদেশ গড়ার সৈনিক হবে।’

আজকের শিশুরাই হবে ’৪১ এর উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের কর্ণধার উল্লেখ করে
তাদের লেখাপড়া করা এবং বাবা-মা-অভিভাবকদের আদেশ মান্য করার পাশাপাশি রাস্তাঘাটে চলাচল করতে ট্রাফিক আইন মেনে চলারও পরামর্শ দেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এটা সকলের জন্য প্রযোজ্য, রাস্তাঘাটে চলার সময় সতর্ক থাকতে হবে, ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে। রাস্তার যেকোনো স্থান থেকে পারাপার হওয়া যাবে না। নির্দিষ্ট পারাপারের স্থান দিয়ে পার হতে হবে। কেননা, একটা চলমান গাড়ি ব্রেক ধরলে তার থামতে সময়ের প্রয়োজন হয়।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, হঠাৎ দৌড় দেবে আর দুর্ঘটনা ঘটবে, দুর্ঘটনা ঘটলেই রাস্তায় লোক নেমে গাড়ি ভাঙা, গাড়িতে আগুন দেওয়া, গাড়ি পোড়ানো, এটা কী ধরনের কথা। একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে, তখন তাকে বাঁচানোর চেষ্টা না করে, তার সেবা না করে লাঠিসোঁটা নিয়ে নেমে পড়ল গাড়ি ভাঙা এবং আগুন দেওয়ার কাজে।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমার এখানে একটা প্রশ্ন, এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সমগ্র জাতির কাছে, এই যে দুর্ঘটনার পর আগুন দেওয়া শুরু হলো, এ গাড়িতে কি নারী-শিশু বা ছাত্র-ছাত্রীরা নেই? আগুনে যারা পুড়বে, আহত হবে বা মারাও যেতে পারে, তার দায়িত্ব কে নেবে? খুব স্বাভাবিক বিষয় হচ্ছে, যারা আগুন দেবে, তাদের ওপরই দায় বর্তায়। তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকে সেভাবেই ব্যবস্থা নিতে হবে।’

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বলব, কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। আর গাড়িচালকদেরকেও আমি বলব, তাদেরকেও সতর্কতার সঙ্গে গাড়ি চালাতে হবে।’

মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বক্তৃতা করেন। বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারপারসন লাকী ইনাম এবং জয়িতা ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফরোজা খান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে জাতির পিতার ম্যুরাল এবং ‘জয়িতা টাওয়ার’এর ওপর দুটি ভিডিও চিত্রও পরিবেশিত হয়।

গত সোমবার রাতে রামপুরায় গাড়িচাপায় শিক্ষার্থী মাইনুদ্দিন ইসলাম নিহত হওয়ার পর এর প্রতিবাদে রাজধানীতে কয়েকটি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এর আগে ২৪ নভেম্বর নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসানও গাড়িচাপায় নিহত হয়।