পুলিশের হেফাজতে মোটরসাইকেল চোর চক্রের গ্রেপ্তার ৩ সদস্য। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

একটি মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে ১৫টি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা-পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে আন্তজেলা মোটরসাইকেল চোর চক্রের ৩ সদস্যকে।

জানা গেছে, কয়েক দিন ধরে কেরানীগঞ্জ এবং এর আশপাশের এলাকায় মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা বেড়ে যায়। একটি সংঘবদ্ধ মোটরসাইকেল চোর চক্র চোখের নিমেষেই মোটরসাইকেল চুরি করে পালিয়ে যাচ্ছিল। গত ১৯ জুলাই কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন জিনজিরা গোলজারবাগ রোডে এ রকমই একটি মোটরসাইকেল চুরির ঘটনায় এর মালিক জলিল উদ্দিন সর্দার অজ্ঞাতনামা চোরদের আসামি করে একটি মামলা করেন।

এ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান সংঘবদ্ধ এই মোটরসাইকেল চোর চক্রকে দ্রুত গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন।

পুলিশ সুপারের নির্দেশে আমিনুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ক্রাইম অ্যান্ড অপস্ (দক্ষিণ) এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে শাহাবু্দ্দিন কবীর, বিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, কেরানীগঞ্জ সার্কেলের নেতৃত্বে ও অফিসার ইনচার্জ মামুন-অর রশিদের সার্বিক সহযোগিতায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানা-পুলিশের একটি চৌকস তদন্ত টিম চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধারের লক্ষ্যে তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার ও সোর্স নিয়োগ করে কাজ শুরু করে। তদন্ত টিম মোটরসাইকেল চুরির মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে বুঝতে পারে, এই মোটরসাইকেল চুরির পেছনে একটি বড় চোর চক্রের হাত রয়েছে। মামলার তদন্তে পাওয়া আসামি রাজিবকে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার রসুলপুর পশ্চিম পাশের মহুয়া নার্সারির সামনে থেকে কাগজপত্র, রেজিস্ট্রেশনবিহীন একটি মোটরসাইকেলসহ গ্রেপ্তার করে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মোটরসাইকেলটি তিনি নবাবগঞ্জের গালিমপুর এলাকা থেকে চুরি করে এনেছেন। রাজিব আরও জানান, তিনি দিদার, রাসেলসহ আরও কয়েকজন সহযোগী মিলে একটি সংঘবদ্ধ আন্তজেলা মোটরসাইকেল চুরির সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। এ সিন্ডিকেট বিভিন্ন জেলায় মোটরসাইকেল চুরি করে সেগুলোর রং, আকার-আকৃতি, ইঞ্জিন নম্বর এবং চেসিস নম্বর পরিবর্তন করে ফেসবুকে ‘বর্ডার ক্রস’ নামে লোভনীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে বিভিন্ন জেলার মোটরসাইকেল ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে আসছেন।

আসামি রাজিব আরও জানান, তাঁদের মোটরসাইকেল চোর চক্রের অন্যতম সদস্য দিদার ও রাসেলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে চোরাই মোটরসাইকেলসহ চোর চক্র সম্পর্কে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে।
এরপর আসামি রাজিবের দেওয়া তথ্যমতে দিদারকে জিনজিরা মসজিদ ঘাট এলাকা থেকে কাগজপত্র, রেজিস্ট্রেশনবিহীন একটি মোটরসাইকেলসহ গ্রেপ্তার করে। তাঁর কাছ থেকে জানা যায়, মোটরসাইকেলটি চোরাই মোটরসাইকেল, যা ধৃত আসামি রাজিব তাঁকে বিক্রির জন্য দিয়েছিলেন। তাঁদের উভয়কে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করলে জানা যায়, মোটরসাইকেলটি রাজিব মোহাম্মদপুরের বছিলা থেকে চুরি করেছিলেন। মোটরসাইকেল চোর চক্র সদস্যদের সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য জানতে চাইলে রাজিব ও দিদার জানান, তাঁদের চোর চক্রের সদস্য ও চোরাই মোটরসাইকেল বিক্রয়ের অন্যতম সহযোগী নোয়াখালী মাইজদী এলাকার রাসেলের কথা উল্লেখ করেন।

পরে রাজিব ও দিদারকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশের টিম নোয়াখালী জেলার সুধারাম মডেল থানার মাইজদী এলাকায় অভিযান চালিয়ে রাসেলকে গত ২৮ আগস্ট আটক করে।

পরে তাঁদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, কেরানীগঞ্জ মডেল থানা এলাকায় হিন্দু চড়াইল এলাকায় রাজিবের চোরাই মোটরসাইকেল মজুত রাখার জন্য ভাড়া করা একটি টিনের গ্যারাজ আছে। এর ভেতরে ডিএমপি ও বিভিন্ন জেলা থেকে চুরি করা বিভিন্ন কোম্পানির মোটরসাইকেল বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে। পরে গ্যারাজে অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ১২টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। এই আভিযানিক টিমের নেতৃত্বে মোট ১৫টি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। পরে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় এই ঘটনায় একটি মামলা করা হয়।

এ মামলার পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে অভিযান চলমান রয়েছে।