গ্রামাঞ্চলে যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত হলেও এখনো অনেক চিকিৎসক গ্রামে যেতে চান না মন্তব্য করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘মানুষ কম মূল্যে যাতে বিশেষজ্ঞের চিকিৎসা নিতে পারে, সেই উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সে জন্য গরিব মানুষ যাতে অল্প মূল্যে উন্নত চিকিৎসা পায়, সেদিকে নজর দিতে হবে সবার।’ 

আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নবনির্মিত সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অংশ নেন। খবর আজকের পত্রিকার।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সবকিছু থাকলেও অনেক চিকিৎসক যেতে চান না​, তাঁদের যেতে হবে। ১০০ শয্যার হাসপাতাল এখন ২৫০-এ উন্নীত হয়েছে। সমস্যা হলে যাতে ঢাকায় আসতে না হয়, সে জন্য উপজেলা স্তরে স্বাস্থ্যসেবার মান আরও যুগোপযোগী করতে হবে।’ 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের স্বাস্থ্যসেবা অনেক এগিয়েছে, কিন্তু এখনো স্বাস্থ্য খাতে গবেষণা অপ্রতুল। শুধু চিকিৎসা দিলে হবে না, চিকিৎসকদের গবেষণা করাটা জরুরি। গবেষণা ছাড়া কোনো উৎকর্ষ সাধন করা যায় না। কাজেই এদিকটায় অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে নজর দিতে হবে। রোগীরা যেন বৈষম্যের শিকার না হয়। তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হবে।’ 

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু একটি সংবিধান দিয়েছিলেন, যেখানে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে। গ্রামের মানুষ যাতে চিকিৎসা পায়, সেই উদ্যোগ নেন তিনি। ১৯৭২ সালে একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার উদ্যোগ নেন, কিন্তু দুঃখের বিষয়, সেটি বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি জাতির পিতা। ফলে মানুষের যে সেবাটা পাওয়ার দরকার ছিল, সেটি তারা পায়নি। ’৯৬ সালে ক্ষমতায় এলে পিজি হাসপাতালকে নতুন করে প্রতিষ্ঠা করি, যেটা করতে গিয়ে অনেক বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত সেটাকে মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে। একদিকে বিরোধিতা করেছে, অন্যদিকে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত না করে তিন গুণ ডাক্তার নিয়োগ দিয়েছিল। ব্যবসা-বাণিজ্য করত এমন লোকদের এখানে চাকরি দিয়েছিল, এভাবে তারা অরাজকতার চেষ্টা করে। দেশ ও জাতির প্রতি তাদের দায়িত্ববোধ কখনোই ছিল না। অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির আখড়া হিসেবে এটাকে গড়ে তুলেছিল। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ করতে চেয়েছিল।’ 

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতি ৬ হাজার মানুষের জন্য একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে গ্রামের মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। ১১ হাজার ক্লিনিক নির্মাণ করে ৪ হাজার চালু করি ৷ দুঃখের বিষয়, বিএনপি-জামায়াত সেগুলো ২০০১ সালের পর বন্ধ করে দেয়। ২০০৮ সালে যখন ক্ষমতায় এসে পুনরায় এগুলো চালুসহ আরও বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছিলাম। বার্ন, কিডনি, নিউরো, নাক-কান-গলাসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের কাজ শুরু করেছিলাম, সেগুলো তারা বন্ধ করে দেয়। তবে সবগুলো পারেনি। পরে একে একে সবগুলো খুলেছি আমরা। ফলে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হচ্ছে। মা ও শিশুর মৃত্যু কমেছে। তবে শুধু এগুলো হলে হবে না, পুষ্টিতে এগোতে হবে। 

প্রতিটি বিভাগে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব মেডিকেল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা হবে। বেসরকারি হাসপাতাল যাতে গড়ে ওঠে, তাদের উৎসাহ দিয়েছিলাম। শুল্কমুক্ত সুবিধা যাতে পায়, সে জন্য মেডিকেল যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সুবিধা দিয়েছি, যার ফলে আমাদের বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবার মান বেড়েছে। শুধু সরকারিভাবে করলে হবে না, বেসরকারি খাতকেও এগিয়ে নিতে হবে। চিকিৎসা পাওয়ার ফলে মানুষের গড় আয়ু ৭৩ বছর হয়েছে। 

গত ১৪ বছরে ১৮ হাজার চিকিৎসক, ২০ হাজার নার্স নিয়োগ হয়েছে। নার্সিং পেশায় যাতে আসে, সে জন্য তাদের শিক্ষা সহজ করা হয়েছে। তারা যাতে পিএইচডি করতে পারে, সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। 

অনুষ্ঠানে বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ১৩ তলাবিশিষ্ট হাসপাতালটির রয়েছে দ্বিতল বেজমেন্ট। ৭৫০ শয্যার হাসপাতালে বিভিন্ন বিভাগে থাকবে ১৪টি অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার, ১০০ শয্যার আইসিইউ। জরুরি বিভাগে থাকবে ১০০ শয্যা, ভিভিআইপি কেবিন ৬টি, ভিআইপি কেবিন ২২টি এবং ডিল্যাক্স শয্যা থাকবে ২৫টি। সেন্টারভিত্তিক প্রতিটি ওয়ার্ডে থাকবে আটটি করে শয্যা।

হাসপাতালটিতে থাকবে এক্স-রে, এমআরআই, সিটি স্ক্যানসহ অত্যাধুনিক সব ডায়াগনস্টিক সুবিধা। ফলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয় হবে। 

এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘সেন্টারভিত্তিক এই হাসপাতালে অনেক অসংক্রামক জটিল রোগের চিকিৎসা মিলবে। প্রতিদিন এখানে ৩ হাজার রোগীর চিকিৎসা হবে। আধুনিক সব চিকিৎসাই পাওয়া যাবে এখানে। এতে করে আমাদের যে সবর্জনীন চিকিৎসার লক্ষ্যমাত্রা, সেটি অর্জনে অনেকটা এগোবে।’
 
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সাইফুল হাসান বাদল, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদারসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।