কমলাপুর রেলওয়ে থানার হাজতখানায় গড়ে তোলা হয়েছে পাঠাগার। ছবি: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

হাজতখানার একটি দেয়ালে লেখা আছে উৎসাহ জাগানো কবিতার কিছু লাইন, তার নিচেই তাকের মধ্যে সাজানো গোটা পঞ্চাশেক বই। ভেতরটাও বেশ পরিপাটি আর পরিচ্ছন্ন।

রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের পাশেই ঢাকা রেলওয়ে থানার এমন পরিবেশ দেশের আর দশটা থানার চেয়ে আলাদা বৈশিষ্ট্য এনে দিয়েছে।

একটা সুন্দর পরিবেশই পারে অপরাধীর ভেতর মানবিকতাবোধ জাগিয়ে তাকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে- এমন চিন্তা থেকেই থানাটিকে মানবিক করে তুলতে শুরু করেন ঢাকা জেলা রেলওয়ে পুলিশের সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

চলতি বছরের মাঝামাঝি এই পুলিশ কর্মকর্তার উদ্যোগেই থানার ভেতরটা নতুন করে সাজাতে সংস্কারের কাজ শুরু হয় বলে জানান ঢাকা রেলওয়ে থানার ওসি মো. মাজহারুল হক।

দেয়ালেও স্থান পেয়েছে সাহিত্যের সবচেয়ে নতুন ধারার কবিতা ‘সাইবিতা- ‘অপরাধের সূত্রপাত এই দুটি হাত/ মানবো না এই অজুহাত/ শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি বিশ্বস্ত অস্ত্র হস্ত/ জগতে মহৎ কর্মে রাখিব ব্যস্ত।’

ওসি মাজহারুল বলেন, ‘এখানে যাঁরা আসামি হিসেবে আসেন, তাঁদের আমরা শুধু আসামি হিসেবে না দেখে মানুষ হিসেবে বিবেচনা করি। একজন মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। তাঁকে যেভাবে মূল্যায়ন করা দরকার, আমরা সেভাবেই রাখার চেষ্টা করি। এই রকম একটা পরিবেশে এসে, দেখে, থেকে একজন অপরাধীর মনে আপনা থেকেই ভালো চিন্তা জেগে উঠবে।’

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘তিনি ভাববেন, অপরাধ করার পরেও আমাকে এত সুন্দর একটা পরিবেশ দেওয়া হয়েছে, আমি কেন অপরাধ করব? এমন চিন্তা থেকেই পাঁচ থেকে ছয় মাস আগে থানাটির আধুনিকায়নের কাজ হয়।’

শনিবার হাজতখানার ভেতরে গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘কারাগারের রোজনামচা’, ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’সহ ধর্মীয় নীতিমূলক বেশ কিছু বই দেখা যায়।

এখানে ৫০টির বেশি বিভিন্ন ধরনের বই রয়েছে জানিয়ে ওসি বলেন, ‘সামনে এটা নিয়ে আমাদের আরও পরিকল্পনা আছে। আমাদের এখানে জায়গা তেমন বেশি না। অল্প জায়গার মধ্যেই আমরা যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করেছি।’

কী ধরনের মামলার আসামিরা রেলওয়ে থানায় বন্দি থাকেন জানতে চাইলে মাজহারুল হক জানান, খুব বড় ধরনের মামলার আসামিদের এই হাজতখানায় রাখা হয় না। তিনি বলেন, ‘রেলওয়েতে ঘটে যাওয়া ছোটখাটো অপরাধে হওয়া মামলার আসামিদের এখানে এনে রাখা হয় এবং এক দিনের বেশি এখানে রাখা হয় না।’

হাজতখানার ভেতরে দেখা গেল, তিনজন বন্দি নিজেদের মধ্যে গল্প করছেন। তাঁদের অপরাধ কী জানতে চাইলে ঢাকা রেলওয়ে থানার মুন্সি নুরুল আমিন তুলে ধরেন তাঁদের অপরাধের বৃত্তান্ত। তিনি বলেন, তিনজনের মধ্যে আবুল হোসেন ট্রেনের যাত্রীদের কাছে পুলিশের উপ-পরিদর্শক হিসেবে নিজের পরিচয় দেন। তাঁদের সঙ্গে গল্প করে কৌশলে তাঁদের কাছে থাকা মূল্যবান সামগ্রী সম্পর্কে ধারণা নেন। এরপর তাঁর দুই সহযোগী চানাচুর বিক্রেতা সেজে সেই যাত্রীকে চানাচুরের সঙ্গে নেশাদ্রব্য খাইয়ে দেওয়ার পর যাত্রী অচেতন হয়ে পড়লে সঙ্গে থাকা জিনিসপত্র নিয়ে তাঁরা পালিয়ে যান।’
বন্দি আবুল হোসেনের কাছে হাজতের পরিবেশ সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, ‘এক দিন যাবৎ হাজতে আছি। এর মধ্যে বই পড়ার চেষ্টা করেছি। অসমাপ্ত আত্মজীবনীর কিছু অংশ পড়লাম। হাজতের পরিবেশও বেশ ভালো, পরিষ্কার।’

তবে আধুনিকায়নের পর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়নি জানিয়ে রেলওয়ে থানার ওসি মাজহারুল হক বলেন, ‘প্রতিনিয়তই হাজতখানাটিকে সংস্কার করা হচ্ছে।’

রেলওয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, ঢাকা রেলওয়ে থানায় বর্তমানে চার-পাঁচজন বন্দি সহজেই থাকতে পারেন। কর্তৃপক্ষের চেষ্টা থাকলে ভবিষ্যতে আরও বাড়ানো যাবে।