অস্ত্রসহ আটক দুই রোহিঙ্গা। ছবি: প্রথম আলো।

কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সদস্যদের গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে উখিয়ার ময়নারঘোনা রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে এ ঘটনা ঘটে। খবর প্রথম আলোর।

এ সময় দুজন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে আটক করেছে পুলিশ। আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে একটি বিদেশি রাইফেল, একটি বিদেশি পিস্তল, চারটি দেশি বন্দুকসহ বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ ও ইয়াবা বড়ি জব্দ করা হয়।

গতকাল শুক্রবার দুপুরে উখিয়ায় সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানিয়েছে ৮ এপিবিএন। আটক ব্যক্তিরা হলেন ক্যাম্প-১৫–এর সি-১ ব্লকের মোহাম্মদ হোসেন (৩০) ও জাহেদ হোসেন (৩০)।

৮ এপিবিএন ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সিহাব কায়সার খান বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে পাঁচ-ছয়জন সন্দেহভাজন ব্যক্তি ক্যাম্প-২০–এর দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় এপিবিএন সদস্যরা তাঁদের চ্যালেঞ্জ করলে তাঁরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালান। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা পালানোর চেষ্টা করলে পুলিশ তাঁদের ধাওয়া করে। এ সময় সন্ত্রাসীরা নীল রঙের একটি ব্যাগ ফেলে যান। পরে ওই ব্যাগ তল্লাশি করে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি একটি স্বয়ংক্রিয় রাইফেল ও ৪৯১টি গুলি পাওয়া যায়।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সিহাব কায়সার খান বলেন, ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর রাত দেড়টার দিকে একটি ক্যাম্পে (ক্যাম্প-১৮) অভিযান চালিয়ে পুলিশ একটি বিদেশি পিস্তল, তিনটি তাজা গুলিসহ দুজন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীকে আটক করে। পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলির ঘটনায় এ দুই রোহিঙ্গা অংশ নিয়েছিল এবং পালানোর সময় পুলিশের হাতে অস্ত্রসহ ধরা পড়ে।
তবে গোলাগুলির ঘটনায় পুলিশের কেউ হতাহত হয়নি বলে জানানো হয়েছে।

রোহিঙ্গা শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরান হোসেন বলেন, শিবিরে রোহিঙ্গাদের কাছে ভারী অস্ত্র কীভাবে এল, সে বিষয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

ড্রোনের সাহায্যে অস্ত্র শনাক্ত

এদিকে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টায় টেকনাফের নয়াপাড়া রেজিস্টার্ড আশ্রয়শিবিরের একটি পাহাড়ি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে চারটি অস্ত্র উদ্ধার করেছে ১৬ এপিবিএন ।

১৬ এপিবিএনের অধিনায়ক ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার বেলা দুইটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত আশ্রয়শিবিরে অভিযান চালানো হয়। পরে নুরালীপাড়া পাহাড়ের একটি আস্তানা থেকে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের ফেলে যাওয়া চারটি দেশে তৈরি বন্দুক ও চারটি তাজা কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। এসব অস্ত্র ড্রোনের মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে এপিবিএন।

রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, ১৫ জুন রাতে উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে মুন্না বাহিনীর গুলিতে আরসা সদস্য সলিম উল্লাহ নিহত হওয়ার পর আরসা সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সন্ত্রাসীরা সাধারণ রোহিঙ্গাদের ভয়ভীতি দেখানোর জন্য ভারী অস্ত্র প্রদর্শন করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আশ্রয়শিবিরের দুজন
নেতা বলেন, আরসা কমান্ডাররা ক্যাম্পে এসব ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে। আরসা সদস্যরা মাদক বিক্রির টাকায় মিয়ানমারের বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীর কাছ থেকে ভারী অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ কিনে থাকে। বাংলাদেশে রোহিঙ্গারা আসার পর গত প্রায় পাঁচ বছরে কক্সবাজারের আশ্রয়শিবির থেকে এর আগে রাইফেলের মতো ভারী অস্ত্র উদ্ধারের নজির নেই বলে তাঁরা দাবি করেন।

পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৫ জুন রাতে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের গ্রুপ মুন্না বাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলিতে আরসা সদস্য মো. সলিম উল্লাহ (৩০) নিহত হন। তিনি ওই আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-২, পশ্চিম) সি-২ ব্লকের বাসিন্দা আবদুস শুক্কুরের ছেলে। এ ঘটনার পর আরসা সদস্যরা সাধারণ রোহিঙ্গাদের ওপর চড়াও হয়েছে বলে রোহিঙ্গা নেতারা অভিযোগ করেন।