নিজের ড্রাগন বাগানে মেহেরপুরের যুবক আবদুল মাবুদ। ছবি: বাসস

বিদেশে থাকার সময় ভিডিও শেয়ারিং ওয়েবসাইট ইউটিউবে দেখে ড্রাগন ফল চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন আব্দুল মাবুদ। ইচ্ছা ছিল ফলটির চাষ করা।

বিদেশ থেকে ফিরে সে ইচ্ছা বাস্তবায়নে মনোনিবেশ করেন মেহেরপুরের এ যুবক। শুরুতে তিনি পরামর্শ নেন কৃষি বিভাগের। একপর্যায়ে স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয় তার।

এখন মাবুদ অন্যকে পরামর্শ দেন, বিদেশ নয়, দেশেই সমপরিমাণ শ্রম দিয়ে বৈদেশিক পর্যায়ের অর্থ উপার্জন সম্ভব। এর জন্য দরকার সুন্দর পরিকল্পনার সঙ্গে একাগ্রতা।

বার্তা সংস্থা বাসসের প্রতিবেদনে জানানো হয়, মাবুদ পরীক্ষামূলকভাবে এক বিঘা জমিতে ড্রাগন ফল এবং তিন বিঘা জমিতে মাল্টা চাষ শুরু করেন। তার সফলতা দেখে এলাকার অন্যরাও ড্রাগন চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। তারা ড্রাগনের পাশাপাশি মাল্টা, কাগজি লেবুও চাষ করছেন।

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার মহিষাখোলা গ্রামের আকবর আলীর ছেলে আব্দুল মাবুদ। পরিবারে তিন বোন ও এক ভাই। বাবার সংসারের হাল ধরতে ২০১৫ সালে মালয়েশিয়া যান তিনি।

পরিবার-পরিজন ছেড়ে প্রবাস জীবনে নানা কষ্টের সম্মুখীন হতে হয় তাকে। অনেক টাকা ধারদেনা করে বিদেশে গেলেও আর্থিক অনটনের মধ্যেই থাকতে হতো বেশিরভাগ সময়। এমন বাস্তবতায় বিদেশে বসেই স্বপ্ন দেখেন দেশে কৃষিকাজ করে সাবলম্বী হওয়ার।

তিনি ইউটিউব আর ইন্টারনেটে দেখতে থাকেন কৃষি প্রকল্পের নানা অনুষ্ঠান। প্রবাসে বসেই পরিকল্পনা করেন দেশে ফিরে ফলের চাষ করার।

২০১৮ সালের শেষ দিকে দেশে ফিরে আসেন আব্দুল মাবুদ। নাটোর জেলা থেকে চারা সংগ্রহ করে নিজ জমিতে ৪০ শতাংশ ড্রাগন ফলের চারা রোপণ করেন। এক বিঘা জমিতে সিমেন্ট আর রডের পিলার, চারা ও পরিচর্যা দিয়ে খরচ হয় প্রায় চার লাখ টাকা।

ড্রাগন গাছে ফল দেয়া শুরু করলে তেমন খরচ নেই। একেকটি গাছ একটানা ১০ থেকে ১৫ বছর ফল দিতে পারবে। প্রথম পর্যায়ে লাভের মুখ দেখেন আব্দুল মাবুদ। বর্তমানে তিন বিঘা জমিতে ড্রাগন ফলের আবাদ করেছেন আব্দুল মাবুদ।

ড্রাগন ফল দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। দেশের বিভিন্ন জেলাতেও চাহিদা রয়েছে। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ড্রাগন ফল বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায়। খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজিতে।

প্রবাসফেরত যুবক আব্দুল মাবুদের মতো ড্রাগন ফলের আবাদ করে অন্যরাও লাভবান হচ্ছেন। তাদের একজন মেহেরপুরের কৃষক বানাত আলী।

তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিবেশী আব্দুল মাবুদ বিদেশ থেকে বাড়ি ফিরে ড্রাগন ফল চাষ করে লাভবান হয়েছে। আমরাও পরামর্শ নিতে এসেছি ড্রাগন ফল চাষের জন্য।’

গাংনী উপজেলার মহিষাখোলা গ্রামের আব্দুল জাব্বার বলেন, ‘আব্দুল মাবুদ ড্রাগন চাষে লাভবান হচ্ছে, এমন খবর শুনে আমাদের ছেলেদের পরামর্শে বাগান দেখতে এসেছি। আব্দুল মাবুদের পরামর্শ ও সহযোগিতায় তার কাছ থেকেই ড্রাগন ফলের চারা নিয়ে ড্রাগন চাষ শুরু করব।’

এ নিয়ে জানতে চাইলে আব্দুল মাবুদ বলেন, ‘আমি পাঁচ বছর মালয়েশিয়াতে ছিলাম। প্রবাস জীবন অনেক কষ্টের। সেখানে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে হয়। বিদেশে আগের মতো আর আয় নেই। সেখানে বসেই আমি স্বপ্ন দেখি।’

তিনি বলেন, ‘দেশে ফিরে সেই পরিশ্রম করতে পারলে অনেক টাকা আয় করা সম্ভব। ইন্টারনেট ও ইউটিউব দেখে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করি। নাটোর জেলা থেকে ৬৫ টাকা করে প্রতি পিস ড্রাগন ফলের চারা ক্রয় করি এবং তা নিয়ম অনুযায়ী রোপণ করি।

‘এখন আমার তিন বিঘা জমিতে ড্রাগন ফলের আবাদ রয়েছে। আমি চারা তৈরি করেছি। অনেকেই ছাদ বাগানের জন্য এবং আবাদি জমিতে রোপণের জন্য চারা কিনতে আসছেন। এলাকায় ড্রাগন চাষের পরিধি বৃদ্ধিতে খুব কম মূল্যে চারা বিক্রি করছি।’

আব্দুল মাবুদ আরও বলেন, ‘আমি চাই আমার মতো অনেক যুবকই শিক্ষিত হয়ে বাড়িতে বসে না থেকে ড্রাগন ফলের চাষ করে লাভবান হোক।’

এ বিষয়ে মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক স্বপন কুমার খাঁ বলেন, ‘ড্রাগন একটি বিদেশি ফল। এ ফলে অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। দেখতে সুন্দর এবং খেতেও অনেক মজা। বাজারে চাহিদা এবং দাম দুটোই ভালো পাচ্ছে।

‘প্রবাসফেরত যুবক আব্দুল মাবুদ হতাশ না হয়ে ড্রাগন চাষে লাভবান হচ্ছেন। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাকে সর্বাত্মক পরামর্শ ও সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে।’