পুলিশের হেফাজতে গ্রেপ্তার খোকন ব্যাপারী। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ।

বিকাশ, রকেট, নগদসহ বিভিন্ন আর্থিক লেনদেনের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ক্রেডিট কার্ডধারীদের কাছ থেকে অভিনব কায়দায় টাকা হাতিয়ে নেওয়ার একটি চক্রের হোতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে ওই প্রতারক চক্র বিকাশ/নগদ/রকেটের অফিসের কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে আর্থিক লেনদেনের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের ক্রেডিট কার্ড থেকে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়।

অভিনব কায়দায় প্রতারণার ঘটনাগুলো দেশজুড়ে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীদের মধ্যে আতংক দেখা দেয়।

ঘটনাগুলো জানার পর সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর পিপিএম (বার) এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে ও নির্দেশনায় এলআইসির একটি চৌকস দল এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত চক্র শনাক্ত ও তাদের কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে অনুসন্ধান করে। এরই ধারাবাহিকতায় চক্রটিকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। ভিকটিম ও বিভিন্ন উৎস থেকে প্রতারক চক্র সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য সরেজমিনে সংগ্রহ করা হয়। পরে সংগৃহীত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ঘটনার সঙ্গে মো. খোকন ব্যাপারী ওরফে জুনায়েদ (৩০)সহ বেশ কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়।

এরপর সিআইডির একটি চৌকস টিম অভিযান চালিয়ে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা থেকে খোকনকে গ্রেপ্তার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার আসামি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান যে, তাঁর নেতৃত্বে ৩/৪ সদস্যের একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র মোবাইলে আর্থিক লেনদেনের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে নিজেদেরকে বিকাশ/নগদ/রকেটের কর্মকর্তা পরিচয়ে ৫/৬ বছর ধরে প্রতারণা করে আসছিল। প্রতারণার কাজটি তারা বিভিন্ন ধাপে অত্যন্ত সুনিপুণভাবে করে থাকে।

প্রথম ধাপে, প্রতারক বিকাশ কর্মকর্তা হিসেবে ভিকটিমকে ফোন দিয়ে অ্যাকাউন্ট’ আপডেট করার জন্য বলে আর অ্যাকাউন্টটি আপডেট না করলে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাবে বলে জানায়।
দ্বিতীয় ধাপে, প্রতারক ভিকটিমের ব্যবহৃত বিকাশ একাউন্টটিতে ভুল পাসওয়ার্ড ৩ বারের অধিক দিলে ভিকটিমের অ্যাকাউন্টটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ‘সাসপেন্ড’ হয়ে যায়।

তৃতীয় ধাপে, প্রতারক ভিকটিমকে জানায়, তার অ্যাকাউন্টটি সাময়িকভাবে সাসপেন্ড করা হয়েছে এবং অ্যাকাউন্টে থাকা টাকা ব্লক হয়ে গেছে। এই ব্লককৃত টাকা ভিসা কার্ড /মাস্টার কার্ডে ট্রান্সফার করা সম্ভব।

চতুর্থ ধাপে, প্রতারক ভিকটিমের ভিসা কার্ড/মাস্টার কার্ড নম্বর এবং সিভিএন জানতে চায়।
পঞ্চম ধাপে, ভিকটিম এসব তথ্য সরবরাহ করলে ভিসা কার্ড/মাস্টার কার্ড গ্রহণের সময় ভিকটিম সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে যে মোবাইল নম্বর সরবরাহ করে, সেই মোবাইল নম্বরে একটা ওটিপি কোড সংবলিত একটি মেসেজ যায়।

ষষ্ঠ ধাপে, ভিকটিম মেসেজটি রিসিভ করার পর সেই কোডটি প্রতারক জানতে চায়। কোডটি প্রতারক ভিকটিমের কাছ থেকে পাওয়ার পর ভিকটিমের ভিসা কার্ড/মাস্টার কার্ড থেকে সর্বোচ্চ পরিমাণ ক্রেডিট প্রতারক তার নিজের বিকাশ অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে। ভিকটিমের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের পরপরই তারা তাদের ব্যবহৃত সকল আইডেন্টিটি গোপন করে রাখে।

এ পর্যন্ত খোকন ব্যাপারী তাঁর অন্য সহযোগীদের নিয়ে ১ কোটির বেশি টাকা প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছে মর্মে প্রাথমিকভাবে জানান। তিনি দলনেতা হিসেবে সিংহভাগ সুবিধা গ্রহণ করে থাকেন। Òit’s khokon bro” এবং Òit’s khokon bro 02” নামে দুটি ফেসবুক পেজ খুলে বিভিন্ন ফেসবুক ব্যবহারকারীকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে তাদেরকে তাঁর ফ্রেন্ডলিস্টে অন্তর্ভুক্ত করেন। তারপর তাদের আর্থসামাজিক অবস্থা বুঝে নম্বর সংগ্রহ করে টার্গেট করা ব্যক্তিদের সঙ্গে প্রতারণার কার্যক্রম শুরু করেন।

গ্রেপ্তার আসামির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।