রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ

অবকাঠামো কিংবা বিভাগের সংখ্যার চেয়ে শিক্ষা ও গবেষণার মানই যে বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ঠিক করে দেয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে সে কথাই মনে করিয়ে দিলেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য, মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

শ্রমবাজার ও বাস্তবতার নিরিখে শিক্ষার্থীদের যোগ্য করে গড়ে তুলতে বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, এই জায়গায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে তিনি নেতৃত্বের জায়গায় দেখতে চান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ পূর্ণ হয়েছে গত ১ জুলাই। কিন্তু মহামারির কারণে বন্ধ ক্যাম্পাসে সেদিন সীমিত পরিসরে প্রতীকী কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করা হয়। দুই দফা পিছিয়ে বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে সেই বিলম্বিত উদযাপনের সূচনা হয়। খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

বঙ্গভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বলেন, “অবকাঠামো, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ডিপার্টমেন্ট ও ইনস্টিটিউটের সম্প্রসারণ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে ভূমিকা রাখে, কিন্তু এ ক্ষেত্রে শিক্ষা ও গবেষণার মানই মূল সূচক।”

আর সেদিকে দৃষ্টি রেখে দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের চাহিদা ও যোগ্যতা বিবেচনা করে শিক্ষার মান এবং শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। আমি আশা করব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ যাত্রাপথে নেতৃত্বের ভূমিকায় থাকবে।’

ঔপনিবেশিক আমলে বঙ্গভঙ্গ রদের রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ায় ঘটনার আবর্তে ১৯২১ সালের ১ জুলাই রমনার সবুজ প্রাঙ্গণে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল পূর্ববঙ্গের প্রথম উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের স্বাধীনতাসংগ্রামসহ বাঙালির প্রতিটি গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের সূতিকাগারের মতো ভূমিকা রাখে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠার ইতিহাস ও রাজনৈতিক সংগ্রামে এর অবদানের কথা তুলে ধরে আচার্য আবদুল হামিদ বলেন, ‘কালের পরিক্রমায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে এর অবকাঠামো ও শিক্ষা কার্যক্রমের পরিধি। আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে প্রতিযোগিতারও আন্তর্জাতিকীকরণ হয়েছে। তাই একজন শিক্ষার্থীকে ডিগ্রি অর্জনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মান অর্জন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেও কারিকুলাম নির্ধারণ ও পাঠদানের ক্ষেত্রে বিশ্বমানের কথা বিবেচনায় রাখতে হবে। মাতা-পিতা ও অভিভাবকগণ অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ছেলেমেয়েদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠান। এ ছাড়া তাদের পেছনে দেশ ও জনগণের বিনিয়োগও যথেষ্ট। তাই শিক্ষার্থীদেরকে পবিবার, দেশ ও জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।’

সম্প্রতি বাংলাদেশ যে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হয়েছে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘কিন্তু এ নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভুগলে চলবে না। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে শামিল হওয়ার লক্ষ্যে এখন থেকে সর্বাত্মকভাবে কাজ শুরু করতে হবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব এগিয়ে চলছে। কয়েক বছর পরই পঞ্চম শিল্পবিপ্লবের ঢেউ বইতে শুরু করবে। তাই চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সুযোগ কাজে লাগিয়ে পঞ্চম শিল্পবিপ্লবের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এ লক্ষ্যে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করতে হবে। আমাদের শিক্ষার্থীরা যাতে তথ্যপ্রযুক্তিসহ জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল শাখায় বিশ্বব্যাপী সফলতার সাথে এগিয়ে যেতে পারে, সেভাবে তাদেরকে গড়ে তুলতে হবে।’

মহামান্য রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তির শুভক্ষণে বাংলাদেশ পরিচালিত হচ্ছে স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার অভিযাত্রায় বর্তমানে আমরা এগিয়ে চলেছি ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজন যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে সক্ষম দক্ষ ও মেধাবী জনশক্তি তৈরি, যারা আমাদের এই অভিযাত্রাকে বাস্তবে রূপ দিতে মাঠে কাজ করবেন।’

মহামান্য রাষ্ট্রপতি এ অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উপলক্ষে একটি ওয়েবসাইটের উদ্বোধন এবং ছয়টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।

অনুষ্ঠাতে ভিডিও বার্তায় শুভেচ্ছা পাঠান ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং।

উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল্লাহ, ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে আজাদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) এএসএম মাকসুদ কামাল ও উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) মুহাম্মদ সামাদ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।