স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে অর্থনৈতিক অঞ্চলে (ইজেড) ৫০টি শিল্পকারখানা, প্রকল্প ও অন্যান্য অবকাঠামো উদ্বোধন করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০ নভেম্বর দেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চল ও বেজার আটটি স্থানে ভার্চুয়ালি ৫০টি শিল্পকারখানা, প্রকল্প ও স্থাপনা উদ্বোধন করবেন। খবর কালের কণ্ঠের।

শেখ ইউসুফ হারুন আরও জানান, এগুলোর মধ্যে রয়েছে: চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের (বিএসএমএসএন) চারটি বাণিজ্যিক কারখানা এবং বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলের আটটি কারখানা।

বেজার চেয়ারম্যান বলেন, এই শিল্পকারখানাগুলোতে ইতোমধ্যে ৯৬৭ দশমিক ৭৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে এবং আরও প্রায় ৩৩১ দশমিক ২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিযোগ করা হবে।

তিনি আরও জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলের ২৯টি শিল্পকারখানার ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করবেন যেগুলোতে এখন পর্যন্ত ৬১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে এবং আরও ১ হাজার ৯২২ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ইজেডের যেসব স্থাপনা উদ্বোধন হতে যাচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে বিএসএমএসএনের প্রশাসনিক ভবন, জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল, শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চল ও সাবরাং পর্যটন পার্ক।

বেজার প্রধান বলেন, পাশাপাশি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে বিএসএমএসএনে ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ শেখ হাসিনা সরণি, ২৩০-কেভিএ গ্রিডলাইন ও সাবস্টেশন উদ্বোধন করবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি পানি শোধনাগারের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করবেন। এটি দৈনিক ৫০ মিলিয়ন লিটার পানি পরিশোধন করতে সক্ষম।

যে শিল্পকারখানাগুলো উদ্বোধন করা হবে, এগুলোর মধ্যে চারটি কারখানা বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে স্থাপিত। এগুলোর একটি ম্যাকডোনাল্ড স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। এতে প্রিফ্যাব্রিকেটেড স্ট্রাকচারাল স্টিল উৎপাদিত হবে। এই স্টিল বহুতল ভবন, কারখানা ও বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে ব্যবহৃত হয়। নিপ্পন অ্যান্ড ম্যাকডোনাল্ড স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড আমদানি করা স্টিল, পারলিন, স্লিটিং শিট ও কয়েল থেকে এমএস প্লেট উৎপাদন করবে।
এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে এশিয়ান পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড ৩৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এশিয়ান পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড রং ও ইমালশন (বিভিন্ন তরল পদার্থের মিশ্রিত রাসায়নিক যৌগ) উৎপাদন করবে।

সামুদা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড চার একর জায়গাজুড়ে তাদের কারখানা নির্মাণ করছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলে তাদের বিনিয়োগ ৮ দশমিক ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

বেজা শিল্প, উৎপাদন ও রপ্তানি বহুমুখীকরণের মাধ্যমে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সব পিছিয়ে পড়া ও সম্ভাবনাময় এলাকায় অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলবে। পরিকল্পিত ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে সরকার এখন পর্যন্ত ৯৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনুমোদন দিয়েছে। এগুলোর মধ্যে বর্তমানে ২৮টির কাজ চলছে।
এখন পর্যন্ত, ১২টি বেসরকারি মালিকানাধীন অর্থনৈতিক অঞ্চল ছাড়পত্র পেয়েছে এবং এ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে প্রায় ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। ১ কোটি লোকের সরাসরি ও পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থান অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর লক্ষ্য। এ ছাড়া এই অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বছরে ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি হবে। অর্থনৈতিক অঞ্চলের বিনিয়োগকারীরা কর অবকাশ এবং শুল্কমুক্ত কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানির সুবিধা পাবেন।

অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো হচ্ছে জাপান, চীন, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, আমেরিকা, ব্রিটেন, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, নরওয়েসহ বিভিন্ন দেশের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করেছে। গত ২৬ অক্টোবর এগুলো উদ্বোধন করার কথা ছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের কারণে এটি বিলম্বিত হয়।