অপেক্ষাটা দুই দশকের। কিংবা তিন যুগেরও বলা চলে। ১৯৮৬ সালের পর বিশ্বকাপ অধরা রয়ে গিয়েছিল আর্জেন্টিনার। আর দুই দশক আগে সেই বিশ্বকাপের ক্ষুধা নিয়ে বিশ্বমঞ্চে আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে পথচলা শুরু লিওনেল মেসির। অবশেষে সেই মেসির জাদুতেই খরা কাটল আর্জেন্টিনার, ক্ষুধা মিটল খোদ মেসির। ৩৬ বছর পর আর্জেন্টিনার ঘরে উঠল ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ।

কাতার বিশ্বকাপ নানা দিক থেকেই স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তবে আর্জেন্টিনার ফুটবল খেলোয়াড় এবং তাঁদের দেশি-বিদেশি সমর্থকদের কাছে এই বিশ্বকাপ হয়ে থাকবে রূপকথার গল্পের মতো। এটাই তাঁর শেষ বিশ্বকাপ- আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন মেসি। সেই ঘোষণায় যেন বিশ্বকাপ জয়ের ক্ষুধা আরও বেড়ে যায় মেসির, প্রত্যাশার পারদ চড়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায় সমর্থকদের। অবশেষে সে ক্ষুধা মিটেছে।

বাংলাদেশ সময় ১৮ ডিসেম্বর রাত ৯টায় কাতারের ‘আইকনিক’ স্টেডিয়ামে শুরু হয় এবারের বিশ্বকাপের ফাইনাল। প্রতিদ্বন্দ্বী মেসির আর্জেন্টিনা ও কিলিয়ান এমবাপ্পের ফ্রান্স। খেলার প্রথমার্ধে মনে হচ্ছিল ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স নয়, তাদের ছায়া খেলছে এই ম্যাচ। ফলস্বরূপ ম্যাচের মেসি জাদুতে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। এর মধ্যে প্রথমটি আসে মেসির নেওয়া প্যানাল্টি শট থেকে। ডি মারিয়ার করা দ্বিতীয় গোলটি ছিল দারুণ এক টিমওয়ার্কের ফল।

ম্যাচের ৭০ মিনিট পর্যন্ত এভাবেই কেটে যায়। তখন মনে হচ্ছিল, বিশ্বকাপ আর্জেন্টিনার হয়ে গেছে। কিন্তু কে জানত, মরুর ধুলোঝড়ের মতো হঠাৎ ফুঁসে উঠবে ফ্রান্স শিবির, মুহূর্তে এমবাপ্পে-ঝড়ে উড়ে যাবে সব, দুলে উঠবে নিশ্চয়তার স্তম্ভ! ঠিক সেটাই হলো। প্যানাল্টি শটে এমবাপ্পে প্রথমে দলকে সমতার অর্ধেক পথ এগিয়ে নিয়ে যান। এই গোল হজম করতেও আর্জেন্টিনার কিছু সময়ের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এমবাপ্পে-ঝড় কি তা মানবে! ৯৭ সেকেন্ড পর সেই ঝড়ে আর্জেন্টিনার নিশ্চিত বিশ্বকাপের হাতছানি একেবারেই ফিকে হয়ে যায়। সমতায় ফেরে ফ্রান্স। ভিআইপি গ্যালারিতে তখন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ উত্তেজনায়-আনন্দে সমানে হাত ছুড়ছেন।
অতিরিক্ত সময়ে ১০৮ মিনিটে আবারও মেসি আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেন। কিন্তু এমবাপ্পের তা ভালো লাগবে কেন! ১১৮ মিনিটে পেনাল্টি থেকে হ্যাটট্রিক পূরণের পাশাপাশি দলকে আবারও সমতায় ফেরান তিনি। খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে।

টাইব্রেকারের প্রথম দুই শটেই এমবাপ্পে ও মেসি নিজ দলকে এগিয়ে রাখেন। কিন্তু পরের শটটি কিংসলে কোম্যানকে রুখে দেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক মার্টিনেজ। তৃতীয় শটটি গোলবারের বাইরে দিয়ে পাঠিয়ে দেন ফ্রান্সের অরিলিয়েন টিচুয়ামেনি। পরের শটে লিনদ্রো পারেডেস গোল করে আর্জেন্টিনাকে জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে দেন। চতুর্থ শটে কোলো মুয়ানি ফ্রান্সের আশা বাঁচিয়ে রাখলেও মন্টিয়েলের শট আটকাতে পারেননি লোরিস। এতেই আর্জেন্টিনার স্বপ্নের শিরোপা নিশ্চিত হয়।

পুরো ম্যাচে আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স দল যে কেবল নিজের সমর্থকদের আনন্দ দিয়েছে, তা নয়। এই ম্যাচ হয়ে উঠেছিল সবার জন্য উপভোগ্য। এককথায় সর্বকালের সেরা বিশ্বকাপ ফাইনালের তকমা দিয়ে দেওয়াই যায় ২০২২ বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচের গায়ে।