‘অপারেশন সুন্দরবন’ সিনেমার প্রিমিয়ার শোতে কলাকুশলীদের সঙ্গে অতিথিরা। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) বলেছেন, অপারেশন সুন্দরবন কোনো ক্রিয়েটিভ গল্পের মুভি নয়, একেবারে জীবন থেকে নেওয়া। র‍্যাব ফোর্সের সদস্যরা জীবন বাজি রেখে কীভাবে দেশের জন্য কাজ করছেন, তার একটা ডকুমেন্টেশন এ মুভির মাধ্যমে আমরা দেখতে পাব।

রাজধানীর বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্সে ২০ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) ‘অপারেশন সুন্দরবন’ সিনেমার প্রিমিয়ার শোতে আইজিপি এ কথা বলেন। অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর সুন্দরবনকে ঘিরে র‍্যাবের শ্বাসরুদ্ধকর অপারেশন নিয়ে তৈরি হয়েছে ‘অপারেশন সুন্দরবন’ সিনেমা। এটি মুক্তি পাবে ২৩ সেপ্টেম্বর

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মাননীয় উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন ও আইজিপি বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার)। সভাপতিত্ব করেন র‍্যাবের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত আইজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার) পিপিএম।

প্রিমিয়ার শোতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার)। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

আইজিপি তাঁর বক্তব্যে বলেন, র‍্যাব ফোর্সের সদস্যদের জীবন বাজি রাখার গল্পের পাশাপাশি ‘অপারেশন সুন্দরবন’-এ সুন্দরবনের ঐতিহ্য আমরা দেখতে পাব। সুন্দরবন বাংলাদেশের ঐতিহ্য, ইউনেসকোর ঐতিহ্য, সুন্দরবন আমাদের গর্বের জায়গা।

আইজিপি বলেন, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের জলোচ্ছ্বাস, ঝড়-ঝঞ্ঝার হাত থেকে যে বন আমাদের বাঁচিয়ে রাখে, তার রূপমাধুর্য দেখতে পাবেন। সেই সঙ্গে জলদস্যুরা প্রায় ৪০০ বছর ধরে এখানে অ্যাকটিভ ছিল। ২৫ লাখ মানুষ সরাসরি সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল। তারা ৩২টি গ্যাং দ্বারা অত্যাচারিত হয়েছে। অত্যাচারিত বললে এর নির্মমতা বোঝানো যাবে না। এখানে অনেক ভয়াবহতা ছিল, নির্মমতা ছিল। এখন সুন্দরবন নিরাপদ। চার বছর ধরে এ বন নিরাপদ রয়েছে।

আইজিপি বলেন, করোনা না হলে সিনেমাটি আরও আগে মুক্তি পেত। সিনেমাটি যেন আলোচনায় থাকে, সে জন্য র‍্যাব অনেক কাজ করেছে। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে যখন অনুরোধ করি যে সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোঘণা করেন, তখন অনেকে বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরও যদি দস্যু বের হয়, তাহলে কেমন হবে। আমি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই যে তিনি আমাদের প্রতি আস্থা রেখেছিলেন, বিশ্বাস রেখেছিলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার বলেন, সুন্দরবন আমাদের কাছে অন্য রকম এক অনুভূতি। এই সুন্দরবন যেমন সুন্দর, তেমনি ভয়ঙ্কর। একটা সময় ছিল যখন দস্যুদের কারণে সুন্দরবন আরও বেশি ভয়ঙ্কর ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চেয়েছিলেন বলেই সুন্দরবন দস্যুমুক্ত হয়েছে। তাঁর নির্দেশনায়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে র‍্যাবের অভিযানে সুন্দরবন দস্যুমুক্ত হয়েছে। সেই সব অভিযান নিয়েই নির্মাণ করা হয়েছে ‘অপারেশন সুন্দরবন’ সিনেমা। এ সিনেমার মাধ্যমে দর্শকরা র‍্যাবের অভিযান সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাবে। এমন একটি কাজ করার জন্য র‍্যাবকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

র‍্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার) পিপিএম বলেন, ‘অপারেশন সুন্দরবন’ চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনে মাইলফলক হয়ে থাকবে। সুন্দরবনের অনন্য সৌন্দর্য বিশ্বের বুকে তুলে ধরবে এ চলচ্চিত্র। র‍্যাব ফোর্সের দুঃসাহসিক অভিযানকে দেশের সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেবে।

প্রিমিয়ার শোতে র‍্যাবের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত আইজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার) পিপিএম। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, সুন্দরবন পৃথিবীর বৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন। অথচ কিছুদিন পূর্বেও বনজীবী ও মৎস্যজীবীরা বনদস্যু ও জলদস্যুদের কাছে জিম্মি ছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় র‍্যাব ফোর্সের সাঁড়াশী অভিযানের ফলে এই অরাজক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটেছে। র‍্যাবের অভিযানের ফলে জলদস্যুদের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে সুন্দরবন এখন দস্যুমুক্ত। র‍্যাব কর্তৃক সুন্দরবন জলদস্যু মুক্ত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবনকে জলদস্যুমুক্ত ঘোষণা করেন। সুন্দরবনে অপহরণ, হত্যা এখন নির্মূল হয়েছে।

র‍্যাব মহাপরিচালক আরও বলেন, জেলেদের কাষ্টার্জিত উপার্জনের ভাগও এখন কাউকে দিতে হচ্ছে না। মৌয়ালী, বনজীবী, মৎস্যজীবী সবাই এখন নিরাপদ। দর্শনার্থী ও পর্যটকেরাও এখন নিরাপদে সুন্দরবন ভ্রমণ করতে পারছে। এখন এ অঞ্চলে শান্তির সুবাতাস বইছে। তিনি বলেন, ‘অপারেশন সুন্দরবন’ আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে দর্শকদের জন্য বিভিন্ন হলে মুক্তি পাবে। দেশি-বিদেশি অনেক কলাকুশলীর সমন্বয়ে সিনেমাটি প্রস্তুত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সিনেমাটির টিজার, অফিশিয়াল পোস্টার ও দুটি গান রিলিজ হয়েছে, যা দেশব্যাপী ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এ ছাড়া চলচ্চিত্রটি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি।

তরুণ নির্মাতা দীপংকর দীপন পরিচালিত ‘অপারেশন সুন্দরবন’ সিনেমাটির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান র‍্যাব ওয়েলফেয়ার কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড। এতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করছেন নুসরাত ফারিয়া, রিয়াজ, সিয়াম, রোশান, দর্শনা বণিক, সামিনা বাশার, শতাব্দী ওয়াদুদ, মনির খান শিমুল, তাসকিন রহমান, মনোজ প্রামানিক, দীপু ইমাম, এহসানুর রহমান প্রমুখ।