গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) সদর থানার পুলিশ অভিযান চালিয়ে অনলাইনে জুয়া খেলার মাধ্যমে হুন্ডি করে বিদেশে হাজার কোটি টাকা পাচারচক্রের ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

সদর থানার একটি চৌকস টিম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল ৭ ডিসেম্বর জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে অনলাইন জুয়ারি চক্রের ওই ৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। এরা হলেন-মো. নাসির মৃধা (৩০), মো. মারুফ হাসান (২৪), মো. জাহিদুল ইসলাম ওরফে রসুল (২২), মো. আশিকুর রহমান ওরফে আশিক (২৭), মো. কাউসার হোসেন(২৩), মো. রুবেল হোসেন (২৫), মো. আশিকুল হক (২৫), মো. আকরাম হোসেন ওরফে রিপন (২৬) ও মো. মুরাদ হাসান (২৫)।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, বাংলাদেশে অবৈধ অনলাইন জুয়ার প্লাটফর্ম ভেলকি লাইভ (সাবেক নাম নাইন উইকেটস) ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসে ইন্টারনেট সংযোগ নিয়ে গুগল ক্রোম ব্রাউজার ব্যবহারের মাধ্যমে সমাজের উঠতি বয়সের যুবকদের আসক্ত করে বিদেশে পাচার করে নেয়া হচ্ছে হাজার  কোটি টাকা। তারা মালোয়েশিয়া/দুবাইয়ের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে হোয়াটসআপ খুলে নিজেদের প্রকৃত পরিচয় গোপন করে যোগাযোগ করে থাকে। এই সার্ভারটি প্রধানত নিয়ন্ত্রণ করে থাকে ভেলকি লাইভের অ্যাডমিন আকাশ মালিক ওরফে রনি (দুবাই প্রবাসী)। তিনি এটিকে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিভিন্ন বিদেশি নম্বর ব্যবহার করে সারা বাংলাদেশকে ৫টি লেয়ারে তথা (১) অ্যাডমিন (২) সাইট সাব অ্যাডমিন (৩) সুপার এজেন্ট, (৪) মাস্টার এজেন্ট ও (৫) ইউজার (রুট লেভেলের ব্যবহারকারী) বিভক্ত করে। প্রতিটি লেয়ার তার উপরের লেয়ারের মাধ্যমে কার্যক্রম সম্পাদন করে থাকে। তার মধ্যে একজন রুট লেভেলের আগ্রহী অনলাইন জুয়াারী https://allagentlist.com/ad.php প্রবেশ করে ক্লিক করলেই ১০০০ টাকার বিপরীতে ১০ টি ডিজিটাল কয়েন প্রদান করে অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া হয়।

এই ডিজিটাল কয়েন লেনদেন মূলত সারা বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেট, ফুটবল লীগ, টেনিস এবং বর্তমানে বিশ্বকাপ ফুটবল খেলার মাধ্যমেও প্রধানত অনলাইনে জুয়া খেলা হয়। ব্যবহারকারী জয়ী হলে ডিজিটাল কয়েন ফেরত নিয়ে এর বিপরীতে আর্থিক লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে টাকা গ্রহণ করে থাকে। হারলে তার পুরো ডিজিটাল কয়েনটাই পর্যায়ক্রমে জুয়া পরিচালনাকারীর কাছে জমা হয়ে যায়। ওই velki.live এর সাইটে ১ জন অ্যাডমিন, ১৪ জন সাইট সাব অ্যাডমিন, ২৪০ জন সুপার এজেন্ট, ১ হাজার ৫০০ এর বেশি মাস্টার এজেন্ট এবং সারা দেশে প্রায় দুই লক্ষাধিক ইউজার রয়েছে বলে জানা যায় ।

এ বিষয়ে জিএমপি সদর থানাপুলিশের হাতে প্রথমে মাস্টার এজেন্ট নাসির গ্রেপ্তার হলে তার দেওয়া তথ্য যাচাই করে দেখা যায় রুট লেভেলের প্রায় ৭০ জন ব্যবহারকারীর থেকে দৈনিক লক্ষাধিক টাকা সংগ্রহ করে তিনি তার উধ্বর্তন সুপার এজেন্ট মারুফকে দেন।

মারুফকে গ্রেপ্তারের জন্য উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হলে সাথে অপর ৭ জনেরও জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়ে গ্রেপ্তার করা হয়।  তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রায় ১ হাজার ৫০০ টি মাস্টার এজেন্টের মাধ্যমে গত মাসেই ৩ হাজার কোটি টাকার অধিক লেনদেন হয়েছে যা বাংলাদেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। ফলে দেশ থেকে পাচার হচ্ছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা।

এ ব্যাপারে জিএমপির সদর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। এছাড়া সিআইডি মানি লন্ডারিং আইনে মামলা গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।