অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন পুনাক সভানেত্রী জীশান মীর্জা। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

সংসারে অভাব যেন নিত্যসঙ্গী। কখনো রাজমিস্ত্রির কাজ করেছেন, কখনো করেছেন সবজি বিক্রি। আবার কখনো পথের ধারে বিক্রি করেছেন লেবুর সরবত। এরপরও থেমে যাননি তিনি। চালিয়ে গেছেন পড়ালেখা। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে দাখিল ও আলিম পরীক্ষায় পেয়েছেন জিপিএ ফাইভ। এখন প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার। আর সেই প্রস্তুতি চলছে পথের ধারে লেবুর শরবত বিক্রির ফাঁকে পাওয়া কোনো ফুরসতে কিংবা সারা দিনের কাজ শেষে পথেই সড়কবাতির নিচে।

অদম্য এই মেধাবী সাদেকুল ইসলামের পাশে দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) সভানেত্রী জীশান মীর্জা। তাঁর উদ্যোগে সাদেকুল পেয়েছেন সাইকেল, হেলমেট ও মুঠোফোন। এতে তিনি ফুডপান্ডার খাবার সরবরাহ করে আরও বেশি আয় যেমন করতে পারবেন, একইভাবে নিজের পড়ালেখার জন্যও সময় বের করতে পারবেন।

শরবত বিক্রির ফাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন সাদেকুল। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে ।ছবি: প্রথম আলো থেকে নেওয়া

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) হেডকোয়ার্টার্সে পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি, আরএমপি আয়োজিত সামাজিক কল্যাণমূলক কার্যক্রম অনুষ্ঠানে জীশান মীর্জার পক্ষে সাদেকুলকে সাইকেল, হেলমেট ও মুঠোফোন দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন পুনাক সভানেত্রী ও ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার)-এর স্ত্রী জীশান মীর্জা। এ সময় তিনি সাদেকুলের সঙ্গেও কথা বলেন। আরএমপি কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

সম্প্রতি দৈনিক প্রথম আলোর অনলাইনে সাদেকুলকে নিয়ে ‘শরবত বিক্রির ফাঁকে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি’ শিরোনামের একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে উঠে আসে সাদেকুলের জীবনের নানা দিক, তাঁর অদম্য মেধা আর এগিয়ে চলার গল্প। ওই প্রতিবেদনটি পুনাক সভানেত্রীর নজরে আসে। এরপর তাঁর আন্তরিক উদ্যোগে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ সাদেকুলের বিষয়ে খোঁজখবর শুরু করে। জানা যায়, সাদেকুল খুবই পরিশ্রমী ও মেধাবী। রাজশাহী শহরে থেকে তিনি অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করেন। হাফেজিয়া শেষ করার পর টিউশনির পাশাপাশি অন্যান্য কাজ করে পড়াশোনার খরচ জোগাড় করেন। নগরের বালিয়াপুকুর এলাকায় বসবাস করার সময় নওগাঁর কয়েকজনকে ভ্যানগাড়িতে করে শরবতের ব্যবসা করতে দেখে তার এ পেশার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। তাঁদের কাছ থেকে শরবত বিক্রির প্রাথমিক ধারণা নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। তবে গরমের সময় শরবতের চাহিদা থাকলেও শীতে ব্যবসায় মন্দা থাকে। এ জন্য তিনি ফুডপান্ডায় যোগ দিতে চান। বর্তমানে তিনি রাজশাহী সিটি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান (সম্মান) বিষয়ে ভর্তি হয়েছেন। পাশাপাশি চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির চেষ্টা। সাদেকুলের ইচ্ছার কথা শুনে পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির মানবিক সহায়তার অংশ হিসেবে পুনাক সভানেত্রী জীশান মীর্জার পক্ষে আরএমপি কমিশনার সাদেকুলকে সাইকেল, হেলমেট ও মুঠোফোন প্রদান করেন।

অনুষ্ঠানে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন সাদেকুল ইসলাম। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আরএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন) মো. সুজায়েত ইসলাম, উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) মো. রশীদুল হাসান পিপিএম, বিশেষ পুলিশ সুপার এ এফ এম আনজুমান কালাম, বিপিএম (বার) এবং আরএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
অনুষ্ঠানে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন সাদেকুল ইসলাম। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ