সংবাদ সম্মেলনে মাইশা হত্যারহস্য উন্মোচন করে ঘটনাটির বিবরণ তুলে ধরেন পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

চুয়াডাঙ্গার ভোগাইল বগাদী গ্রামের শিশু মাইশা হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। মা পপি খাতুন নিজেই তাঁর মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যার পর মাইশা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে বলে দাবি করেছিলেন। পরে পুলিশি তদন্তে তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন মেয়েকে শ্বাসরোধে হত্যার কথা। হত্যার দায় স্বীকার করে পপি খাতুন আদালতে বিচারকের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। খবর বিডি টাইমসের।

গতকাল সোমবার (৬ মে) সকাল ১০টায় চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে পুলিশ সুপার আর এম ফয়জুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে মাইশা হত্যারহস্য উন্মোচন করে ঘটনাটির বিবরণ তুলে ধরেন।

পুলিশ সুপার জানান, শিশু মাইশা তার মায়ের সঙ্গে আলমডাঙ্গার ভোগাইল বগাদী গ্রামে বসবাস করত। ২৯ ফেব্রুয়ারি সকালে শিশু মাইশা খাতুন বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা গেছে বলে প্রচার করেন মা পপি খাতুন। সে সময় মাইশার গলায় মোবাইল ফোনের চার্জারের তার জড়ানো ছিল। প্রতিবেশীরা মাইশাকে দ্রুত নিয়ে যান চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকেরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মাইশা মারা গেছে বলে জানান।

তিনি আরও জানান, পাশাপাশি চিকিৎসকেরা নিহত মাইশার গলায় দাগ থাকার কথাও পুলিশকে বলেন। পুলিশ লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, মাইশা খাতুন বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা যায়নি। তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। মাইশাকে তার মা পপি খাতুন গলা টিপে হত্যা করেছেন। ৫ মে পপি খাতুন আলমডাঙ্গার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জহুরা বেগমের আদালতে হাজির হয়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন। পরে পুলিশ পপি খাতুনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে।

পুলিশ সুপার জানান, মারা যাওয়ার পর মা পপি খাতুন ঘটনার দিন রাত ১০টা ৫ মিনিটে তাঁর মেয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা গেছে, এমন তথ্যসংবলিত একটি লিখিত অভিযোগ চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবর দাখিল করেলে সেখানে একটি অপমৃত্যু মামলা নথিভুক্ত হয়। এরপর অপমৃত্যু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আতিকুর রহমান জুয়েল রানা ঘটনাস্থলে তদন্ত করতে গেলে সেখানে নানা ধরনের নেতিবাচক তথ্য পান। এ কারণে মেয়েটির দুর্ঘটনামূলক স্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হলে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেন। মেয়েটি মারা যাওয়ার পর তার পরিবারের পক্ষ থেকে বিনা ময়নাতদন্তে লাশ দাফনের অনুমতি চেয়ে আবেদন করলেও পুলিশ সুপারের মৌখিক নির্দেশে সুরতহাল প্রতিবেদনসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কর্তৃক সুনির্দিষ্ট মতামত গ্রহণের জন্য ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করা হয়।

তিনি আরও জানান, শিশুটিকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুনির্দিষ্ট মত দেন। তারপর মাইশার নানা শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে ৩ মে আলমডাঙ্গা থানায় লিখিত অভিযোগ করলে তা হত্যা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। ৫ মে সকাল ৮টায় পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল), ডিআইও-১ এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই বিকাশ কুণ্ডু ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে পপি খাতুনের সঙ্গে কথায় সন্দেহ হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চুয়াডাঙ্গায় নেওয়া হয়। এরপর নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি এ হত্যার দায় স্বীকার করেন।