আরএমপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেট কাটেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি), বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার), পিপিএম। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

‘শৃঙ্খলা, সেবা ও নিরাপত্তায় ৩২ বছর’ স্লোগানে বিভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হলো রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) ৩২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

এ উপলক্ষে মঙ্গলবার (২ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ লাইনস ড্রিল শেডে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি), বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার), পিপিএম।

এ সময় প্রধান অতিথি আরএমপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেট কাটেন এবং প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকা ‘দৌবারিক’-এর মোড়ক উন্মোচন করেন। এরপর আরএমপির ৩২ বছরের ইতিহাস ও সাফল্য নিয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আরএমপি কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার বিপিএম। এ সময় প্রধান অতিথিসহ আমন্ত্রিত অতিথিদের হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন আরএমপি কমিশনার।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইজিপি বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে বদ্ধপরিকর। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় বাংলাদেশ পুলিশ আজ জনবান্ধব ও মানবিক পুলিশে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ বিপন্ন, বিপদগ্রস্ত ও অসহায় মানুষের শেষ ভরসাস্থল। মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশ জনগণের সুদিন ও দুর্দিনে পাশে রয়েছে।

তিনি বলেন, অপরাধীরা প্রযুক্তিগত জ্ঞানের মাধ্যমে নতুন নতুন অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়টি গভীরভাবে উপলব্ধি করেছেন এবং এই ধরনের অপরাধ দমনে পুলিশ বাহিনীতে গঠন করেছেন সাইবার ইউনিটের মতো বিশেষায়িত ইউনিট। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে ঈর্ষণীয় সাফল্যের কারণে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর কাছে রোল মডেল হয়েছে বাংলাদেশ।

ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি), বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার), পিপিএম-এর হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন আরএমপি কমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার বিপিএম। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

তিনি আরও বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশ্বাস করেন, পুলিশের জন্য অর্থ ব্যয় একধরনের বিনিয়োগ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সুষ্ঠু থাকলে দেশের অর্থনীতি, উৎপাদন, বিনিয়োগ তথা সব ক্ষেত্রে প্রভাব পড়বে। ফলে তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় পুলিশের জনবল, গাড়ি, অফিস, ব্যারাক, অফিসার্স কোয়ার্টার্স তথা সব ধরনের অবকাঠামোগত উন্নয়নে এক অনবদ্য উদাহরণের সৃষ্টি হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের জনবল, প্রযুক্তিগত এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। নতুন নতুন থানা সৃজনের মাধ্যমে পুলিশি সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের ৩২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই মাহেন্দ্রক্ষণে পুলিশ সদস্যগণের পক্ষ থেকে তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা ও আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

পুলিশপ্রধান বলেন, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ নগরবাসীকে গৌরবময় সেবা দিয়ে ৩২ বছর অতিক্রম করেছে। শুধু আইন প্রয়োগ নয়, সামাজিক দায়বদ্ধতা ও গতানুগতিক পুলিশিংয়ের বাইরে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে নগরবাসীর আস্থা অর্জন করেছে। শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে মাদক, ইভ টিজিং, সাইবার ইস্যু, ট্রাফিক রুলস এবং সামাজিক অপরাধ বিষয়ে সচেতন করতে স্কুল ভিজিটিং কর্মসূচি নিয়েছে আরএমপি। এ ছাড়া কমিউনিটি পুলিশিং, বিট পুলিশিং, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের মাধ্যমে নির্যাতিত নারী ও শিশুদের পাশে থেকে প্রথাগত পুলিশিংয়ের সীমানা অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে। ৩২ বছর আগে যাত্রা শুরু করেছিল রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ। বর্তমানে এ ইউনিট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ মোকাবেলা, মাদকদ্রব্য গ্রহণ ও বিপণনসংক্রান্ত অপরাধ দমন, সাইবারসংক্রান্ত অপরাধ প্রতিরোধে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিয়ে প্রশংসিত হয়েছে।

তিনি বলেন, রাজশাহী অঞ্চলের যেকোনো সাইবার অপরাধ শনাক্তকরণে আরএমপিতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে সাইবার ক্রাইম ইউনিট ও ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব। মহানগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নগরীর সব জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে, যা অপারেশন কন্ট্রোল অ্যান্ড মনিটরিং সেন্টারের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া হ্যালো আরএমপি অ্যাপসের মাধ্যমে মহানগরবাসী তাঁদের অভিযোগ যেন পুলিশ কমিশনারকে জানাতে পারেন, সে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে রাজশাহী পুলিশের রয়েছে অসামান্য অবদান। তাঁরা নিজেদের জীবন বাজি রেখে পুলিশি দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। ঠিক একইভাবে সেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে বাংলাদেশ পুলিশের প্রত্যেক সদস্য আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাবে। একসময় বাংলাদেশে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের ভয়াবহ প্রকোপ ছিল। বাংলাদেশ পুলিশ তা কঠোর হস্তে প্রতিহত করেছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ‘রূপকল্প-২০৪১’ বাস্তবায়ন এবং বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ তথা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’-এ পরিণত করতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে, দেশপ্রেমের মহান ব্রত নিয়ে, আরএমপির প্রত্যেক সদস্য সততা, দক্ষতা ও পেশাদারত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে বলে দৃঢ় প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

আরএমপি কমিশনার বলেন, রাজশাহী নগরবাসী অত্যন্ত শান্তিপ্রিয়। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আরএমপি সব সময় সচেষ্ট থেকেছে। আরএমপির সব সদস্য পেশাদারত্বের সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করছে। শুধু আইন প্রয়োগই নয়, মানবিকতায় থেকেও সব সময় নগরবাসীর পাশে থেকেছে আরএমপি।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি, সারদার প্রিন্সিপাল (অতিরিক্ত আইজিপি) মো. মাসুদুর রহমান ভুঞা বিপিএম; রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মো. আব্দুল খালেক; রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনিসুর রহমান বিপিএম (বার), পিপিএম (বার); রাজশাহীর পুলিশ সুপার মো. সাইফুর রহমান পিপিএম (বার); রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ মোহা. আব্দুল খালেক এবং রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল। আরএমপি ও রাজশাহী রেঞ্জ পুলিশের কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, রাজনীতিক ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।