প্রতারণা করে বিয়ে করা রূপচাঁদকে অলংকার, টাকাসহ গ্রেপ্তার করে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ। ছবি: বিএমপি

নিজেকে গাজীপুর কৃষি অধিদপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ পদের চাকরিজীবী হিসেবে পরিচয় দেন সুজন শেখ। মোবাইল কলে পরিচয় হওয়া বরিশাল এয়ারপোর্ট থানার পঞ্চাশোর্ধ বিলকিস বেগমের (ছদ্মনাম) কাছে এমন পরিচয় দেন তিনি।

মোবাইলে কথোপকথনের একপর্যায়ে বিলকিস ও সুজনের মধ্যে গড়ে ওঠে মা-ছেলের সম্পর্ক। সুজন শেখ জানতে পারেন, শেফালি (ছদ্মনাম) নামে বিলকিসের এক অবিবাহিত মেয়ে আছে। তাঁর জন্য একটি চাকরি খুব প্রয়োজন। এ কথা শুনে ত্রাণকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন সুজন।

বিলকিসের কাছ থেকে মেয়ে শেফালির মোবাইল নম্বর নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলা শুরু করেন সুজন। চাকরি দেবেন বলে শেফালিকে আশ্বস্ত করেন তিনি। এমনকি চাকরি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বিভিন্ন সময় সুজন তাঁর কথিত অফিসের বিভিন্ন বড়কর্তাদের সঙ্গে শেফালিকে ফোনে কথা বলিয়ে দেন। এতে করে শেফালি ও তাঁর মা চাকরি পাওয়ার বিষয়ে অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যান।

চাকরির প্রলোভনে পড়ে সুজনের সঙ্গে মোবাইলে কথা চলতে থাকে শেফালির। একপর্যায়ে ঘনিষ্ঠতা বাড়লে সুজন বরিশালে শেফালিদের বাসায় বেড়াতে যান। সেখানে গিয়ে তিনি শেফালির মায়ের কাছে শেফালিকে বিয়ের প্রস্তাব দেন।

ওই সময় সুজন নিজের পরিচয় নিশ্চিত করতে শেফালি ও তাঁর মায়ের কাছে নিজের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি দেন। যেখানে অস্পষ্ট ছবির নিচে তাঁর নাম সুজন শেখ লেখা রয়েছে।

একদিকে চাকরিজীবী ছেলের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে, অন্যদিকে মেয়ের চাকরির সুযোগ। বিলকিস বেগম যেন হাতে আকাশের চাঁদ পেলেন। মেয়ে শেফালির সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করলে তিনিও বিয়ের বিষয়ে সম্মতি জানান।

মা-মেয়ের সম্মতিতে সুজন তাঁর সঙ্গে করে নিয়ে আসা কাজী দিয়ে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করেন। তিনি শেফালিদের বাড়িতে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে থাকা শুরু করেন।

শেফালি শ্বশুরবাড়ি যেতে বিভিন্ন সময় অনুরোধ করলেও চতুর সুজন নানা অজুহাত দেখিয়ে কালক্ষেপণ করতে থাকেন। শেফালিদের বাড়িতে যাওয়া-আসার মধ্যে থাকেন সুজন।

তিনি শেফালিকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে (রিটার্ন পরীক্ষা, ভাইভা পরীক্ষা, নিয়োগপত্র ইত্যাদি বাবদ) বিভিন্ন সময় নগদ ছয় লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। সর্বশেষ আরও ২ লাখ টাকা এবং ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার স্বর্ণালংকারসহ শেফালিকে চাকরিতে যোগদানের কথা বলে বরিশাল থেকে লঞ্চে করে ঢাকা নিয়ে যান।

ঢাকার সদরঘাটে সুজন সিএনজিচালিত অটোরিকশা আনার কথা বলে শেফালিকে রাস্তায় ফেলে রেখে পালিয়ে যান। কিছু সময় পর শেফালিকে ফোন করে সুজন জানান, তিনি শেফালি ও তার মায়ের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। তিনি আর কখনোই বরিশাল যাবেন না; শেফালি যেন বরিশাল চলে যান।

এ কথা শুনে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়া শেফালি বরিশাল চলে আসেন। সবকিছু শেষ করে শেফালি বুঝতে পারেন, সুজন তাঁর এবং মায়ের সরলতার সুযোগ নিয়ে তাঁদের সঙ্গে প্রতারণা করে বিয়ের নাটক সাজিয়ে তাঁকে অনেকবার ধর্ষণ করেছেন। একই সঙ্গে চাকরি দেওয়ার মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণামূলকভাবে তাঁদের কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা এবং ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার স্বর্ণালংকারসহ ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

উপায়ান্তর না দেখে শেফালি তাঁর মাকে সঙ্গে নিয়ে বিএমপির এয়ারপোর্ট থানায় এ সংক্রান্ত অভিযোগ করেন। এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ মামলা করে কালবিলম্ব না করে তদন্ত শুরু করে।

তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় পুলিশ পাবনা জেলা থেকে অভিযুক্ত সুজন শেখকে গ্রেপ্তার করে এবং শেফালি ও তাঁর মায়ের কাছ থেকে আত্মসাৎ করা টাকার মধ্যে ২ লাখ, ২টি স্বর্ণের চেইন, ১ জোড়া স্বর্ণের কানের দুল, একটি স্বর্ণের আংটি এবং স্বর্ণালংকার রাখার একটি কৌটা উদ্ধার করে।

জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে সুজন জানান, তার আসল নাম রূপচাঁদ সরদার (৩৫)।
মূলত ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করেছেন তিনি। তাঁর বাড়ি পাবনার বেড়া উপজেলার আমিনপুর থানার কাবাসকান্দা গ্রামে।

সুজন নাম ব্যবহার করা ব্যক্তি আরও জানান, তিনি আসলে কোনো চাকরি করেন না। মূলত প্রতারণামূলকভাবে বিয়ে করে নারীদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক, অর্থ ও স্বর্ণালংকার আত্মসাৎ করাই তার নেশা ও পেশা। এ পর্যন্ত তিনি দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৭টি ভুয়া বিয়ে করেছেন। আরও তিনটি বিয়ের পরিকল্পনা ছিল তাঁর।