হত্যাকাণ্ডের শিকার মোছা. পারুল আক্তার। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ।

২০১৫ সালে নিজ হাতে মেয়েকে খুন করে তার স্বামীর বিরুদ্ধে অপহরণের মামলা করে বার বার নারাজী এবং পরে যৌতুকের জন্য নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগে মামলা করে পিবিআই ঢাকা জেলার জালে ধরা পড়লো বাবা আ. কুদ্দুছ খাঁ (৫৮)।

তার বাড়ি টাঙ্গাইলে, খুন করেছেন জয়পুরহাটে এবং ধরা পড়েছেন ঢাকা জেলা পিবিআই এর তদন্তাধীন মামলায়।

গত ২০ জানুয়ারি আদালতে ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে লোমহর্ষক ও বর্বরোচিত এ হত্যাকাণ্ডের বিবরণ তুলে ধরেন আ. কুদ্দুছ খাঁ।

ঘটনার শুরু ২০১২ সালে। সেই বছর আ. কুদ্দুছ খাঁর মেয়ে মোছা. পারুল আক্তার টাঙ্গাইলের কালিহাতির একই এলাকার মো. নাছির উদ্দিন ওরফে বাবুকে ভালবেসে ঢাকায় পালিয়ে এসে বিয়ে করেন। এই ঘটনায় কুদ্দুছ খাঁ ২০১২ সালে কালিহাতি থানায় জিডি করেছিলেন। উভয়ের পরিবার বিয়ে মেনে না নেয়ায় তারা ঢাকার আশুলিয়ার জামগড়ায় বসবাস শুরু করেন। চাকরি নেন পোশাক কারখানায়। কিন্তু নানা কারণে পারিবারিক অশান্তি চলতে থাকে। পারুল তার বাবাকে ফোন করে পারিবারিক অশান্তির কথা জানান। বাবা মেয়ের ভবিষ্যত নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিলেন। অপমানবোধ ও প্রচণ্ড রাগও ছিল। এক পর্যায়ে ভালো ছেলে দেখে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে মেয়েকে উন্নত জীবন যাপনের লোভ দেখান। ২০১৫ সালের ১৮ জুলাই জামাতা নাছির তার নানীকে দেখতে যান। সেই সুযোগে বাবার দেয়া আশ্বাসে পারুল ১৯ জুলাই তার বাবাকে ফোন করে টাঙ্গাইলে যান। একই দিন নাছির উদ্দিন শ্বশুর আ. কুদ্দুছ খাঁর বিরুদ্ধে মেয়েকে বাবার বাড়ি পালিয়ে যেতে প্ররোচনা দেয়ার অভিযোগে আশুলিয়া থানায় জিডি করেন।

১৯ জুলাই বাবা তার মেয়েকে নিজ বাড়িতে না নিয়ে বন্ধু মোকাদ্দেছ ওরফে মোকা মন্ডলের বাড়ি ভুঞাপুরে নিয়ে যান। সেখান থেকে মোকা মন্ডল ভবিষ্যতে পারুলকে প্রতিষ্ঠিত করবেন এবং কিছুদিন নাছিরের কাছ থেকে লুকিয়ে থাকতে হবে এই আশ্বাস দিয়ে পারুলকে নিয়ে জয়পুরহাটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। সঙ্গে পারুলের বাবাও যান। জয়পুরহাটের পাঁচবিবি এলাকায় একটি নদীর পাশে নির্জন জায়গায় রাতের অন্ধকারে পারুলকে তার বাবা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে মোকা মণ্ডলের সহযোগিতায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন।

তারা ভিকটিমের লাশ নদীতে ফেলে দিয়ে টাঙ্গাইলে চলে আসেন। এরপর ৪ আগস্ট নাছির উদ্দিনের পরিবারের বিরুদ্ধে টাঙ্গাইলের আদালতে পেনাল কোডের ৩৬৪/৩৪ ধারায় মামলা করেন। (মামলা নং-পি-৩৭ কালিহাতি)।

কালিহাতি থানা পুলিশ তদন্ত করে প্রেম করে বিয়ে করার সংশ্লিষ্টতা পায়। কিন্তু ভিকটিমকে না পওয়ায় ঘটনাস্থল তাদের এখতিয়ার বহির্ভূত এলাকা (ঢাকায়) মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করে।

বাদীর বারবার নারাজীর প্রেক্ষিতে ডিবি পুলিশ, টাঙ্গাইল/পিবিআই টাঙ্গাইল/সিআইডি টাঙ্গাইল তদন্ত করে একই রিপোর্ট প্রদান করে।

সবশেষে আদালত জুডিশিয়াল তদন্ত করে রিপোর্ট দেয় যে, বাদী ঢাকার আদালতে মামলা করলে প্রতিকার পেতে পারে।

গত বছরের ২৭ নভেম্বর বাদী আঃম. কুদ্দুছ খাঁ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন আদালতে উপরোক্ত তদন্তের রেফারেন্সসহ নারী নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সং-০৩) এর ১১(ক) অর্থাৎ যৌতুকের জন্য মারপিট করে হত্যা মামলার আবেদন করেন।

৩০ নভেম্বর আদালত আশুলিয়া থানাকে মামলা দায়ের ও পিবিআই ঢাকা জেলাকে তদন্তের নির্দেশ দেন। আশুলিয়া থানায় ১১ ডিসেম্বর মামলা দায়ের করা হলে পিবিআই, ঢাকা জেলা তদন্ত শুরু করে।

পিবিআই নাছির উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায় করে। ইতোমধ্যে বাদীকে ডাকা হয়। বাদীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি অসামঞ্জস্যপূর্ণ তথ্য দেন। এক পর্যায়ে তিনি বলেন যে, তিনি নিজেই তার মেয়েকে হত্যা করেছেন।

তার দেয়া তথ্য যাচাই করার জন্য পিবিআই, ঢাকা জেলা জয়পুরহাটের পাঁচবিবি থানা থেকে ২০১৫ সালের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে।

পাঁচবিবি থানার করা মামলার আলামত, সুরতহালের বর্ণনা এবং পোস্টমর্টেম রিপোর্টের সাথে আ. কুদ্দুছ খাঁর বর্ণনার মিল পাওয়া যায়।

অবশেষে ৫৪ ধারায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ঢাকার জুডিশিয়াল আদালত ১৬৪ ধারায় আ. কুদ্দুছ খাঁর জবানবন্দি গ্রহণ করেন। জবানবন্দিতে তিনি হত্যাকাণ্ডে তার সংশ্লিষ্টতা এবং তার বন্ধু মোকা মন্ডলের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছেন। আসামি মোকা মন্ডলকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শীঘ্রই তাকে আদালতে উপস্থাপন করা হবে।