নিহত রাজীব হোসেন কাজী। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

ছয় বছর আগে এক যুবককে হত্যার পর লাশ গুমের রহস্য উদ্ঘাটন করেছে যশোর জেলার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সম্প্রতি যশোর শহরের পুরাতন কসবা এলাকায় প্লাস্টিকের ড্রাম থেকে একটি কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। পরে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়, কঙ্কালটি খুলনার দিঘলিয়া থানাধীন চন্দোলি মহল এলাকার ফারুক হোসেনের ছেলে রাজীব হোসেন কাজীর (৩২)।

হত্যাকাণ্ডে জড়িত সালাম (৫৫) নামের এক ব্যক্তিকে গত সোমবার (১৬ জানুয়ারি) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর বাড়ি নড়াইলের লোহাগড়া থানা এলাকায়। যশোর সদর থানাধীন কিসমত নওয়াপাড়া গ্রামের একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন তিনি।

পিবিআই যশোরের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. জিয়াউর রহমান জানান, ২০২২ সালের ৩০ মে যশোর শহরের পুরাতন কসবা নিরিবিলি এলাকায় বজলুর রহমান নামের এক ব্যক্তির মালিকানাধীন জমিতে ভবন নির্মাণের জন্য দেয়াল ভাঙার কাজ শুরু হয়। এ সময় পরিত্যক্ত পুরাতন টয়লেটের রিং স্লাবের কুয়ার ভেতর রাখা প্লাস্টিকের ড্রামের মধ্যে থেকে রাজীবের কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। তদন্তের এক পর্যায়ে পিবিআই জানতে পারে, রাজীব তাঁর চাচা হাসমতের বাড়িতে থেকে যশোরের পুরাতন কসবা আবু তালেব সড়কের সজিবুর রহমানের অফিস ও বাসায় কাজ করতেন।

রাজীবের পরিবার জানায়, ২০১৬ সালের ২৯ মার্চ রাত ৮টার দিকে রাজীব তাঁর বাবাকে কল করে তাঁদের খুলনার বাড়িতে আসার কথা জানান। কিন্তু রাজিব খুলনায় যাননি। এরপর সজিবের বাসায় গিয়ে খোঁজ নেন রাজীবের মা মাবিয়া বেগম ও চাচা হাসমত। কিন্তু রাজীবের সন্ধান জানেন না বলে জানান সজিব। প্রয়োজনে মামলা করে ছেলেকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করতে পরামর্শ দেন তিনি।

গত বছরের ৩০ মে রাজীবের বাবা ফারুক হোসেনকে কল করে চাচা হাসমত জানান, যশোর শহরের পুরাতন কসবা নিরিবিলি এলাকায় টয়লেটের রিং স্লাবের কুয়ার মধ্যে থেকে মানুষের কঙ্কাল পাওয়া গেছে। শেখ সজিবুর রহমানের যেখানে অফিস ছিল সেখান থেকে ওই কঙ্কাল পাওয়া গেছে। রাজীব নিখোঁজ হওয়ার কিছুদিন পর সজিব তাঁর অফিস ভেঙে ফেলেছিলেন। ফারুক হোসেন তাঁর ভাই হাসমতের কথা শুনে যশোরে আসেন। ছায়া তদন্ত চলাকালে পিবিআই যশোর অফিসে এসে ছেলেকে শনাক্তের অনুরোধ করেন ফারুক হোসেন। পিবিআই যশোর কার্যালয়ে তিনি একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

জিডির সূত্র ধরে পিবিআই যশোর জেলার এসআই জিয়াউর রহমান ফারুক হোসেন ও তাঁর স্ত্রী মাবিয়া বেগমকে আদালতের নির্দেশ গ্রহণ করে কঙ্কালের সঙ্গে তাঁদের পরিচয় শনাক্তের জন্য ডিএনএ পরীক্ষার উদ্যোগ নেন। পরীক্ষায় ড্রামের মধ্যে পাওয়া কঙ্কালের সঙ্গে ফারুক হোসেন ও তাঁর স্ত্রী মাবিয়ার ডিএনএর মিল পাওয়া যায়।

পিবিআই যশোরের পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন পিপিএম (সেবা) বলেন, মামলাটির তদন্ত করতে গিয়ে যশোর সদরের কিসমত নওয়াপাড়ার আবদার ড্রাইভারের বাড়ির ভাড়াটিয়া সালামকে (৫৫) নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, পরিকল্পিভাবে রাজীবকে হত্যা করে শেখ সজিবুর রহমানের অফিসের টয়লেটের কুয়ার মধ্যে ফেলে দেন। মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) সালামকে যশোরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার দালালের আদালতে সোপর্দ করা হলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি। লাশ বহনের কাজে ব্যবহৃত রিকশা জব্দ করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।