পিবিআইর হেফাজতে গ্রেপ্তার চার ডাকাত। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ।

শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে ৪৭ লক্ষ টাকার সুপারিসহ ট্রাক ডাকাতির ঘটনায় জড়িত ডাকাত দলের ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), ময়মনসিংহ জেলা।এছাড়া ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত প্রাইভেটকার ও লুন্ঠিত মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে।

গত ৩ এপ্রিল ডাকাতির ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে ডাকাত দলের সদস্য মো. শুভ শেখকে (২৪) নারায়ণগঞ্জের পাইনাদি নতুন মহল্লা এলাকার তার নিজ ভাড়া বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে শুভর দেয়া তথ্য মতে নারায়ণগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ঘটনার সাথে জড়িত ডাকাত দলের সদস্য বাপ্পি, মামুন প্রধান ও রিগান খানকে গ্রেপ্তার করা হয়।

জানা গেছে, নেত্রকোণা জেলার দূর্গাপুর থানা এলাকার ব্যবসায়ী অনুকূল পাল ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন থানা এলাকার ব্যবসায়ী মো. মনিরের কাছ থেকে ৪৭ লক্ষ ১০ হাজার টাকায় ৩০০ বস্তা (১৫ টন) সুপারি কেনেন।

এরপর মনির গত ২১ সেপ্টেম্বর রাত ৮টার সময় তার বিক্রিত সুপারিগুলো কামালের “মেসার্স জুলেখা ট্রান্সপোর্ট” এর মাধ্যমে (খুলনা মেট্রো ট-১১-০৮১০) অশোক লিল্যান্ড ট্রাকে করে দূর্গাপুরের উদ্দেশ্যে পাঠান। ট্রাকটির চালক ছিলেন বাবুল। ২৩ সেপ্টেম্বর ভোর ৪টার সময় ট্রাক চালক বাবুল ট্রান্সপোর্ট মালিক কামালকে অপরিচিত একটি নম্বর দিয়ে ফোন দিয়ে জানান যে, রাত আনুমানিক ১টার সময় তিনি সুপারিভর্তি ট্রাকটি নিয়ে ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ থানাধীন হারুয়া বাজার এলাকায় পৌঁছামাত্র একটি সাদা রংয়ের প্রাইভেটকার পিছন থেকে এসে ট্রাকটিকে ব্যারিকেড দেয়। ট্রাকটি থামানোর সাথে সাথে প্রাইভেটকার থেকে ৪ জন ডাকাত ট্রাকে উঠে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে রশি দিয়ে ট্রাক চালকের হাত-পা বাঁধে এবং গামছা দিয়ে মুখ চোখ বেঁধে ফেলে। ডাকাতরা সম্পূর্ণ ট্রাকের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর ট্রাক ঘুরিয়ে পুনরায় কিশোরগঞ্জের দিকে রওনা করেন। অন্য ডাকাতরা প্রাইভেটকার নিয়ে ট্রাকের পিছনে আসতে থাকেন। রাত অনুমান সাড়ে ৩ টার সময় ডাকাত দল ভৈরব হাজী হাসমত আলী কলেজের কাছে রাস্তায় ড্রাইভার বাবুলকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ফেলে দিয়ে ট্রাক নিয়ে চলে যান।

এ ঘটনায় “মেসার্স জুলেখা ট্রান্সপোর্ট” এর মালিক কামাল হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে ঈশ্বরগঞ্জ থানার মামলা দায়ের করেন।

থানা পুলিশ গত ২৪ সেপ্টেম্বর থেকৈ ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত এবং জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ২৮ অক্টোবর থেকে এ বছরের ৫ মার্চ পর্যন্ত মামলাটির তদন্ত করেন।

৫ মার্চ পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের নির্দেশে পিবিআই, ময়মনসিংহ জেলা মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে।

পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি, বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম এর তত্ত্বাবধানে পিবিআইর ময়মনসিংহ জেলার পুলিশ সুপার মো. রকিবুল আক্তারের দিক নির্দেশনা ও তদারকিতে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোহাম্মদ বিল্লাল মিয়া তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডাকাতির সময় নিয়ে যাওয়া ট্রাক চালকের ফোনের সূত্র ধরে ৩ এপ্রিল সন্দেহভাজন ডাকাত মো. শুভ শেখকে (২৪) নারায়ণগঞ্জের পাইনাদি নতুন মহল্লা হতে গ্রেপ্তার করেন এবং তার হেফাজত হতে মোবাইল ফোনটি জব্দ করেন। এরপর বাকি তিন ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তাদের দেয়া তথ্যমতে ডাকাতিতে ব্যবহৃত প্রাইভেটকারটি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকা হতে জব্দ করা হয়।

এ বিষয়ে পিবিআই, ময়মনসিংহ জেলার পুলিশ সুপার মো. রকিবুল আক্তার বলেন, এটি বেশ চাঞ্চল্যকর ডাকাতির ঘটনা। অজ্ঞাতনামা ডাকাত দল সাতচল্লিশ লক্ষ টাকার সুপারি ভর্তি ট্রাক ডাকাতি করে নিয়ে যায়। যা প্রিন্ট মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচারিত হতে থাকে। ইতোমধ্যে আমরা ডাকাত দলের চারজন সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত ডাকাত দলের সদস্যরা ঘটনার সাথে জড়িত থাকার বিষয় স্বীকার করেছেন।

গত ৪ এপ্রিল গ্রেপ্তারকৃত ডাকাত দলের সদস্যদের আদালতে সোপর্দ করা হলে তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।