জয়পুরহাটে কলেজছাত্রী আয়েশা হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটনের বিষয়টি জানাতে সংবাদ সম্মেলন করেন জেলা পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা পিপিএম। ছবি: জয়পুরহাট জেলা পুলিশ

আয়েশা সিদ্দিকা (২১) জয়পুরহাট সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। তাঁর মা ২০০৭ সালে মারা যান এবং বাবা ঋণখেলাপির একটি মামলায় কারাগারে রয়েছেন। আয়েশার ভাই (মামলার বাদী) মো. মোস্তাক হোসেন স্ত্রী, এক সন্তান এবং ছোট বোন আয়েশাকে নিয়ে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি থানাধীন মাঝিনা গ্রামের নিজ বাড়িতে বাস করেন। ৫ মে বিকেল চারটার দিকে মো. মোস্তাক হোসেন স্ত্রী-সন্তানসহ শ্বশুরবাড়ি নওগাঁর বদলগাছী থানাধীন পাহাড়পুর গ্রামে যান। বাড়িতে ছিলেন কেবল তাঁর বোন আয়েশা। আয়েশা তাঁর চাচাতো ভাই মো. খলিলের বাড়িতে রাতের খাবার খান।

খাওয়া শেষে রাত ১০টার দিকে খলিলের মেয়ে সানজিদা, ইশরাতসহ বাড়িতে ফিরে সদরগেট ভেতর থেকে তালা দেন। আয়েশা সানজিদা ও ইশরাতকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়বেন বলে তাঁর ভাই মোস্তাক ও বড় বোন ফাতেমাকে ফোন করে জানান। পরের দিন সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে সানজিদা ও ইশরাত ঘুম থেকে উঠে ঘরের বাইরের দরজা খুলতে গেলে দেখেন, ঘরের দরজা বাইরে থেকে ছিটকানি আটকানো। এরপর তাঁরা পাশের কক্ষের পকেট দরজা দিয়ে বারান্দা দিয়ে বের হয়ে আসেন। তাঁরা আয়েশার ঘরের দরজা খোলা দেখে ঘরের ভেতরে ঢুকে আয়েশা সিদ্দিকাকে বিছানার ওপর চিত হয়ে পা দুটি মেঝেতে ঝোলানো ও বিবস্ত্র অবস্থায় দেখতে পান।

তখন সানজিদা দৌড়ে তাঁদের বাড়িতে গিয়ে তাঁর মা শামীমা আক্তারকে ঘটনাটি জানান। তৎক্ষণাৎ তাঁরা আয়েশার বাড়িতে লোকজনসহ আসেন। ওই ঘটনার বিষয়ে সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জয়পুরহাটের পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা পিপিএমের দিকনির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম ও অপস্) ফারজানা হোসেন, সহকারী পুলিশ সুপার (পাঁচবিবি সার্কেল) ইশতিয়াক আলম, পাঁচবিবি থানার অফিসার ইনচার্জ পলাশ চন্দ্র দেব, জেলা গোয়েন্দা শাখা ও সিআইডি পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং ঘটনার তদন্ত শুরু করেন।

ঘটনার তদন্তকালে পুলিশ জানতে পারে, মাঝিনা গ্রামের শংকর মহন্তের ছেলে রনি মহন্ত (৩০) ও আয়মাপাড়া গ্রামের খোরশেদ মণ্ডলের ছেলে মো. জাহিদ হাসান দীর্ঘদিন আয়েশাকে উত্ত্যক্ত করতেন। এ কারণে আয়েশার ভাই মোস্তাক তাঁদের শাসিয়েছিলেন। ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তাঁদের পুলিশ নজরদারিতে রাখে।

তদন্তকালে পুলিশ জানতে পারে, আসামি রনির বুকে খামচানো রক্তাক্ত দাগ রয়েছে। তখন ওই দুজনের প্রতি সন্দেহ ঘনীভূত হওয়ায় তাঁদের পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জানান, আয়েশাকে ধর্ষণ করার উদ্দেশ্যে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে তাঁরা সুযোগ খুঁজছিলেন। আয়েশার ভাই মোস্তাক তাঁর শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার আগে আয়েশা ও তাঁদের বাড়িঘরের প্রতি খেয়াল রাখার জন্য আসামি রনিকে অনুরোধ করেন। রনি জানতে পারেন, আয়েশা রাতে বাড়িতে একা অবস্থান করবেন।

বাড়িতে সবার অনুপস্থিতির বিষয়টি রনি জানতে পেয়ে তাঁর সহযোগী জাহিদসহ ৭ মে রাত একটার দিকে পরস্পর যোগসাজশে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ভিকটিমের বাড়ির সামনের তালাবদ্ধ সদর গেটের দেয়াল টপকিয়ে বাড়িতে ঢোকেন। তাঁরা আয়েশা সিদ্দিকার শয়ন ঘরের দরজা খোলা ও তাঁকে বিছানায় কাঁথা গায়ে শোয়া অবস্থায় মোবাইলে কথা বলতে দেখেন। সেখানে তাঁরা প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করেন।

সুযোগ বুঝে রাত দুইটার দিকে ওই দুজন আসামি আয়েশার ঘরে প্রবেশ করেন। তাঁরা আয়েশাকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এ সময় আয়েশা তাঁদের প্রাণপণ বাধা দেন এবং একপর্যায়ে রনির বুকে খামচিয়ে ধরেন। তখন আসামিরা আয়েশার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর গলা চেপে ধরলে একপর্যায়ে আয়েশা বিছানায় নিস্তেজ হয়ে পড়েন। এরপর আসামিরা পালিয়ে যান।

এ ঘটনায় ৭ মে পাঁচবিবি থানায় মামলা হয়েছে। সিআইডির বিশেষজ্ঞ দল ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন জৈবিক আলামত সংগ্রহ করেছে। আলামতগুলো পরীক্ষাপূর্বক বিশেষজ্ঞ মতামতের জন্য পাঠানো হয়েছে।