বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএসএ) নতুন কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠান। একবিন্দুতে এসেই যেন মিলিত হয়েছেন সবাই। ভিন্ন এক আমেজ। প্রিয় সব মুখের উপস্থিতিতে সরগরম মিরপুর পুলিশ কনভেনশন হল। জ্যেষ্ঠদের উপস্থিতিতে প্রাণের উচ্ছ্বাস তরুণ কর্মকর্তাদের। আনন্দময় এক মিলনমেলা।
অনুষ্ঠানে ছিলেন মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার) ও ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম। ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মনিরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামান।
মঙ্গলবার অভিষেক অনুষ্ঠানটি আরও পূর্ণতা পেল বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কবির বিন আনোয়ার ও মহাসচিব মো. খলিলুর রহমানের আবেগ-ভালোবাসার সংমিশ্রণ মেশানো কথামালায়।
পেশাগত উৎকর্ষ সাধন ও সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের এই অনুষ্ঠানে আরও দক্ষ ও শক্তিশালী পুলিশ বাহিনী গড়ে তুলতে সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান কামাল।
‘এসেছি অনেক দূর, যেতে হবে বহুদূর’—এই মন্ত্রে শাণিত পুলিশপ্রধান ড. বেনজীর আহমেদ আধুনিক, দক্ষ ও যুগোপযোগী পুলিশ বাহিনী গড়তে ২০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনার প্রস্তাবনাও তুলেছেন সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে। বলেছেন, আত্মমর্যাদাশীল পুলিশ বাহিনী গড়তে নিজেদের স্বপ্ন, সংগ্রাম, সংকল্প আর দুর্বার গতিতে কাজ করে যাওয়ার অদম্য মানসিকতার কথাও।
মানবিকতার দিক থেকে পুলিশ আগের চেয়ে এগিয়ে
পুলিশ বদলে যাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশনারি লিডারশিপ বদলে দিয়েছে পুলিশকে। এখনকার পুলিশ মানবিকতার দিক থেকে আরও এগিয়ে—বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, করোনা মহামারির সময় পুলিশ ফ্রন্টলাইন ফাইটার হিসেবে কাজ করছে। সন্তান যখন তার মায়ের দাফন না করে পালিয়েছে, বাংলাদেশ পুলিশ সেই সময় দাফন সম্পন্ন করেছে। ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দিয়েছে। ব্যবস্থা করেছে চিকিৎসার। তাই মানবিকতার দিক থেকে পুলিশ আগের চেয়ে এগিয়ে। মহামারির সময় শত শত পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তারপরও জনগণকে সেবা দিতে পিছপা হননি। দেশের মানুষ পুলিশকে এখন বেশি সম্মান করে।
দেশ-বিদেশে পুলিশের প্রশংসার সারকথা জানিয়ে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আমরা দেশ-বিদেশে সর্বত্রই আমাদের দেশের পুলিশের প্রশংসা শুনতে পাই। বাংলাদেশ পুলিশ অত্যন্ত দক্ষতা, নিষ্ঠাবান ও কর্তব্যপরায়ণ হয়ে দেশের মানুষের জন্য কাজ করছে। শুধু জঙ্গিবাদ নয়, যেকোনো চ্যালেঞ্জ সফলভাবে মোকাবিলা করে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে পুলিশ।’
পুলিশে সংস্কার, মহাপরিকল্পনায় জোর আইজিপির
২০৪১ সালের উন্নত ও ধনী দেশের উপযোগী পুলিশ বাহিনী গড়তে ২০ বছর মেয়াদি এক মহাপরিকল্পনার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ। তিনি নিজ বাহিনীর ব্যাপক সংস্কারের বিষয়েও জোর দিয়েছেন।
সময়ের চেয়েও প্রাগ্রসর পুলিশের এই সর্বোচ্চ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘পুলিশকে আধুনিক, দক্ষ ও সময়োপযোগী করে গড়ে তুলতে ব্যাপক সংস্কার করতে হবে।’
ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের তত্ত্বাবধানে আত্মমর্যাদাশীল পুলিশ বাহিনী গড়তে আমরা দুর্বার গতিতে কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন সামাজিক প্রত্যাশা, রাষ্ট্রের চাহিদা পূরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছি।’
বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের এই প্রধান পৃষ্ঠপোষক নবগঠিত কমিটিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘আশা করি আগামী এক বছর এই কমিটি তাদের দায়িত্ব অত্যন্ত সফলভাবে পালন করবে। পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই কমিটি কাজ করবে।’
পুলিশপ্রধান বলেন, ‘আমরা দুই বছর ধরে মহামারির মধ্য দিয়ে সময় পার করছি। এ সময় বাংলাদেশ পুলিশের ১২৬ জন সদস্য করোনাকালীন দায়িত্ব পালনকালে জীবন উৎসর্গ করেছেন। ২৬ হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ২৫ হাজারের বেশি সদস্য সুস্থ হয়ে আবারও দেশপ্রেমে মানুষের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করেছেন।’
সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় বিপিএসএ
বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের গত কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম। তিনি ওই সময় গুরুত্বপূর্ণ কাজের স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন প্রধানমন্ত্রীর ভিশন-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ইতিমধ্যে পুলিশ তার সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে।’
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘আমার সময়ে গত বছর মহামারি করোনার কারণে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দুই কোটি টাকা সহায়তা তুলে দিয়েছি। এ ছাড়া অসহায় জনগণের মাঝেও খাবার বিতরণ করা হয়েছে। করোনাকালে পুলিশের যেসব সদস্য জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাঁদের আমরা সাধ্যমতো সহায়তা করেছি। সর্বশেষে নতুন কমিটি তাদের দক্ষতা ও যোগ্যতায় পুলিশ বাহিনীকে আরও অনন্য ভূমিকায় আসীন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছি।’
প্রধানমন্ত্রীর ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে পুলিশ
অনুষ্ঠানের সভাপতি বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এসবি প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম পুলিশ পরিবারের সদস্যদের জন্য দিনটি আনন্দের উল্লেখ করে বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশ সরকারের অনুগত বাহিনী। বাংলাদেশ পুলিশের গৌরবময় ইতিহাসের উত্তরাধিকারী হতে পেরে আমরা গর্ববোধ করি।’
প্রধানমন্ত্রীর ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে বাংলাদেশ পুলিশ নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই দেশেও অপরাধের ধরন পরিবর্তন হচ্ছে। অপরাধীরাও তাদের অপরাধের কৌশল প্রতিনিয়ত পরিবর্তন করছে। তাদের প্রতিরোধে বাংলাদেশ পুলিশকেও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা হচ্ছে।
শুধু করোনাকালীন নয়, যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় অতীতের মতো ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ পুলিশ এ দেশের মানুষের পাশে থাকবে।’
অনুষ্ঠানে পুলিশের অতিরিক্ত আইজি ড. মঈনুর রহমান চৌধুরী, মো. নাজিবুর রহমান, র্যাব ডিজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত আইজিপি মোশাররফ হোসেন, এস এম রুহুল আমিন, ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান, ইব্রাহিম ফাতেমীসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।