শেরপুর জেলা হিজড়া কল্যাণ সংস্থার পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বিপিএম ও শেরপুর পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) সভানেত্রী সানজিদা হক মৌকে বরণ করে নেওয়া হয়। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বিপিএম হিজড়া জনগোষ্ঠীর পাশে থেকে তাদের জীবনমান উন্নয়নের এবং বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। শেরপুর জেলা হিজড়া কল্যাণ সংস্থার পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই প্রতিশ্রুতি দেন।

কেক কেটে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হয়। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

শেরপুর সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের আন্ধারিয়া সুতিরপাড় এলাকায় হিজড়া আবাসন প্রকল্প চত্বরে ৩০ অক্টোবর (রোববার) বিকেলে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শেরপুর জেলা হিজড়া কল্যাণ সংস্থা। অনুষ্ঠানে আলোচনা সভার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক আয়োজনও ছিল।

জনউদ্যোগ শেরপুর শাখার আহ্বায়ক মো. আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান, বিপিএম। প্রিয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেরপুর পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) সভানেত্রী সানজিদা হক মৌ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বিপিএম। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বিপিএম হিজড়াদের পাশে থেকে তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের এবং তাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, হিজড়াদের মৃত্যুর পর তাদের শেষকৃত্য নিয়ে তারা অনেক সামাজিক প্রতিকূল পরিবেশের সম্মুখীন হয়। সেই সমস্যা সমাধানে তাদের জন্য কবরস্থানের জায়গা নিজ অর্থায়নে করে দেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা দ্রুত ব্যস্তবায়নের ব্যবস্থা গ্রহণের আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, তিনি যেখানেই থাকুন না কেন, এই জনগোষ্ঠীর কারও শেষকৃত্যের সব খরচ তিনি সারা জীবন বহন করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।

হিজড়াদের আর্থিকভাবে সচ্ছল হতে স্থায়ী আয়-উপার্জনের মাধ্যম তৈরি করতে গৃহপালিত পশু কিনে দেওয়ারও ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেন পুলিশ সুপার। যাদের হস্তশিল্পের দক্ষতা রয়েছে, তাদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মশালা এবং তাদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে সব রকমের সহায়তা দিতে শেরপুর জেলা পুলিশ পাশে থাকবে বলেও আশ্বাস দেন পুলিশ সুপার। হিজড়া জনগোষ্ঠী যাতে সমাজের অন্য সবার মতো সাধারণ জীবনযাপন করতে পারে এবং নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারে, সামাজিক রাষ্ট্রীয় সব সুযোগ-সুবিধা পায়, সে জন্য জনপ্রতিনিধিদের ও স্থানীয় এলাকাবাসীর প্রতি আহ্বান জানান পুলিশ সুপার।

প্রিয় অতিথি জনাব সানজিদা হক মৌ, সভানেত্রী, পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক), শেরপুর তাঁর বক্তব্যে বলেন, পুনাক সাম্প্রতিক সময়ে গণমানুষ বিশেষ করে নারী সমাজের কল্যাণে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করছে। পুনাক নানা ধরনের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, শিশু-কিশোরদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন, সমাজের দুস্থ ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি বৃহত্তর পরিসরে দেশের নারী সমাজের ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নে অত্যন্ত বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে আসছে।

প্রিয় অতিথির বক্তব্য দেন শেরপুর পুনাক সভানেত্রী সানজিদা হক মৌ। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

প্রিয় অতিথির বক্তব্যে শেরপুর পুনাক সভানেত্রী সানজিদা হক মৌ মানবিক সেবার অংশ হিসেবে হিজড়া জনগোষ্ঠীর জন্য পুনাকের বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, কর্মমুখী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে পুনাক সব সময় এই জনগোষ্ঠীর পাশে থাকবে।

পুনাক সভানেত্রী বলেন, হিজড়াদের মধ্যে যে যে বিষয়ে পারদর্শী, তাকে সেই বিষয় আরও প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে পুনাক। শেরপুর জেলা হিজড়া কল্যাণ সংস্থার সব সদস্যের মধ্যে পুনাকের পক্ষ থেকে সামনের শীতে কম্বল বিতরণের ঘোষণা দেন তিনি।

হিজড়া জনগোষ্ঠীর সদস্যদের সঙ্গে শেরপুর পুনাক সভানেত্রী। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

শেরপুর জেলা হিজড়া কল্যাণ সংস্থার সভাপতি নিশি সরকারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন শেরপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলা) সাবিহা জামান শাপলা প্রমুখ।