শরীয়তপুরের যুবক মোহাম্মদ খায়রুল (ছদ্মনাম)। বছর দুয়েক আগে বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার সময় বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে মাদক নিতে শুরু করেন। এরপর অল্প দিনেই আসক্ত হয়ে পড়েন। বেতনের পুরো টাকাটাই খরচ করতে শুরু করেন মাদকের পেছনে।

পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট পরিচালিত মাদকাসক্তি নিরাময় ও মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ কেন্দ্র ‘ওয়েসিস: বাংলাদেশ পুলিশ

কালের কণ্ঠের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, একপর্যায়ে পরিবারের সদস্যরা বুঝতে পারেন, চাকরিতে মনোযোগ নেই খায়রুলের। বাসায় খরচের টাকাও দিচ্ছেন না। উল্টো মাদকের টাকা জোগাতে চাপ দিচ্ছেন বাসায়। শেষে পরিবারের সদস্যরা তাঁকে সুস্থ জীবনে ফেরাতে একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে নিয়ে যান। সেখান থেকে আরও একটিতে। তাতেও কাজ না হওয়ায় শেষে পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট পরিচালিত মাদকাসক্তি নিরাময় ও মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ কেন্দ্র ‘ওয়েসিস’-এ ভর্তি করান। সেখানে তিন মাস চিকিৎসাসেবা নেওয়ার পর সুস্থ জীবনে ফেরেন খায়রুল। এখন তিনি আবার আগের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। পরিবারকে খরচের টাকা দিচ্ছেন।
তুলনামূলক কম খরচে বিশ্বমানের চিকিৎসা দেওয়াই ওয়েসিস মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের মূল লক্ষ্য। ছবি: সংগৃহীত

‘ওয়েসিস’ কেন্দ্রে গত ২৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে খায়রুল শোনান তাঁর মাদক ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার গল্প। গত এক বছরে খায়রুলের মতো মাদকে আসক্ত শতাধিক ব্যক্তি ‘ওয়েসিস’-এ চিকিৎসাসেবা নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন। তাঁদের বেশির ভাগের বয়স ১৮ থেকে ৩৫ বছর।

গত বছরের ৭ অক্টোবর পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে বসুন্ধরা রিভারভিউ প্রকল্পে যাত্রা শুরু করে ‘ওয়েসিস’। নান্দনিক পরিবেশে উন্নত ব্যবস্থাপনায় মাদক নিরাময় ও পুনর্বাসনের এই কেন্দ্র ৬০ শয্যার। বর্তমানে প্রায় সব শয্যায় রোগী আছে।

*যে কারণে অনন্য ওয়েসিস*
অলাভজনক এই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছে পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্ট। সাততলাবিশিষ্ট আধুনিক এই মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র ২৪ ঘণ্টা খোলা। চিকিৎসাসেবার জন্য প্রতিষ্ঠানটি সবার জন্য উন্মুক্ত। খ্যাতিমান চিকিৎসক ও টেকনিশিয়ানরা কেন্দ্রটিতে যত্নসহকারে চিকিৎসাসেবা দেন। তুলনামূলক কম খরচে বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবা পাওয়া যায় কেন্দ্রটিতে।

পাশাপাশি কেন্দ্রটিতে নারী মাদকাসক্ত এবং মানসিক অবসাদে যাঁরা ভুগছেন, তাঁদের জন্য আলাদা চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে।

কেন্দ্রের রোগীদের বিনোদনের জন্য রয়েছে অত্যাধুনিক ব্যবস্থা। ছবি: সংগৃহীত

*বিনা মূল্যে ২৪ ঘণ্টা টেলিমেডিসিন সেবা*
‘ওয়েসিস’ কেন্দ্রে বিনা মূল্যে ২৪ ঘণ্টা টেলিমেডিসিন সেবা দেওয়া হয়। মাদকাসক্ত কিংবা মানসিক অবসাদে যাঁরা ভুগছেন, ২৪ ঘণ্টা তাঁরা টেলিমিডিসিন সেবা নিতে ফোন করতে পারছেন—০১৯৩০-৪০৪০৪০ এই নম্বরে। বর্তমানে প্রতিদিন সারা দেশ থেকে অন্তত ৩০ জন রোগী ফোন করে টেলিমেডিসিন সেবা নিচ্ছেন।

*রোগীদের সেবা দিচ্ছেন যাঁরা*
চিকিৎসার সেবা নিতে ওয়েসিস কেন্দ্রে যাঁরা আসছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ব্যাংকার, ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থী। রয়েছেন ইয়াবা, ফেনসিডিল, পেথিডিন, আইস মাদকে আসক্ত রোগীরা এই কেন্দ্রে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এই রোগীদের চিকিৎসা দিতে কেন্দ্রটিতে রয়েছে বিশেষজ্ঞ মনোরোগ চিকিৎসক, সাইকোলজিস্ট, সাইকোথেরাপিস্ট, ফিজিওথেরাপিস্ট, ইয়োগা এক্সপার্ট এবং অভিজ্ঞ অ্যাডিকশন কাউন্সেলর। এ ছাড়া রয়েছে স্বতন্ত্র কাউন্সেলিং ব্যবস্থা, উন্নত মানের শরীরচর্চা কেন্দ্র, বিনোদন সুবিধা, ইনডোর ও আউটডোর গেমস, কর্মমুখী প্রশিক্ষণ এবং জীবনমুখী শিক্ষার নানা আয়োজন।

পুনর্বাসন কেন্দ্রটিতে থাকছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ব্যায়ামাগার। ছবি: সংগৃহীত

প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গোলাম মোর্শেদ প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক।

ডিআইজি হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা যারা এখানে কাজ করি, এখানে আসা রোগীদের নিজ পরিবারের সদস্যদের মতো বিবেচনা করি। সেভাবে তাদের চিকিৎসাসেবা দিই। যেন তারা দ্রুত সুস্থ হয়ে পরিবার ও সমাজে ফিরে যেতে পারে। আর চিকিৎসাসেবা নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়াদের নিয়মিত খোঁজখবর রাখা হয়। মাদকাসক্তদের মাদকমুক্ত করে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছে ওয়েসিস।