ঈদের আগমুহূর্তেও গাজীপুরে যানজটমুক্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক। এই অসম্ভব সম্ভব হয়েছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের ঐকান্তিক চেষ্টায়। ছবি: সংগৃহীত

ঈদযাত্রায় গাজীপুর যেন এত দিন এক আতঙ্কের নাম ছিল। ঈদের ছুটি শুরু হতে না হতেই গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট যেন নিয়মিত চিত্র ছিল। শুধু গাজীপুরই নয়, ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক, সিরাজগঞ্জ-বগুড়া মহাসড়ক, নারায়ণগঞ্জে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কসহ সব মহাসড়ক, আঞ্চলিক মহাসড়ক ও সড়কে এবারের ঈদযাত্রা বেশ স্বস্তির হয়েছে। আর এমন স্বস্তির ঈদযাত্রা উপহার দিতে পেরে প্রশংসায় ভাসছে পুলিশ।

ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গসহ বিভিন্ন রুটের যাত্রীদের গন্তব্যের অন্যতম দুটি রুট ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক। এই দুই মহাসড়কের গাজীপুর ও টাঙ্গাইলে ঈদযাত্রায় যানজট যেন একেবারেই নিয়মিত ঘটনা ছিল। এ ছাড়া সিরাজগঞ্জ-বগুড়া মহাসড়কেও যানজটমুক্ত ঈদযাত্রা কল্পনা করাও কঠিন ছিল। এসব মহাসড়কে দুই ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে কেটে যেত পাঁচ-ছয় ঘণ্টা, কখনো কখনো তারও বেশি।

এদিকে চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্বাঞ্চলের রুটের যাত্রীদের গন্তব্যের অন্যতম রুট ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক। এই দুই মহাসড়কেও নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন পয়েন্ট ঈদযাত্রায় যানজট ও ভোগান্তি নিয়মিত ঘটনা ছিল। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ঢাকার গাবতলী থেকেই শুরু হয়ে যেত যানজট।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকা ঈদযাত্রা শুরু হওয়ার পরও রয়েছে যানজটমুক্ত। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ পুলিশ বলছে, ঈদ সামনে রেখে সড়ক-মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি স্বাভাবিক ঘটনা। তবে এবারের ঈদযাত্রায় বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের ট্রাফিক বিভাগসহ অন্যান্য বিভাগের ঐকান্তিক চেষ্টায় সড়ক-মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখা সম্ভব হয়েছে। ফলে ঘরমুখী মানুষ ভোগান্তি ছাড়াই গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন।

ঈদযাত্রায় গাজীপুরকে যানজট মুক্ত রাখতে পারার বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম জানান, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক টঙ্গী ব্রিজ থেকে রাজেন্দ্রপুর অংশে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক। এ সড়কে প্রতিদিন গড়ে ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করে। অন্যান্য মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্নভাবে বিপুলসংখ্যক গণপরিবহন ও পণ্য পরিবহনকারী যানবাহন চলাচল করে। যানবাহনের শৃঙ্খলা আনতে জিএমপি ট্রাফিক বিভাগের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সড়কের উন্নয়ন প্রকল্পের চলমান নির্মাণকাজ। বিশেষ করে আব্দুল্লাহপুর থেকে রাজেন্দ্রপুর পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার এবং উলুখোলা থেকে মিরের বাজার, ভোগড়া বাইপাস হয়ে জিরানী বাজার পর্যন্ত ২৯ কিলোমিটার এলাকা। উন্নয়ন প্রকল্পগুলো ভবিষ্যতের জন্য সহায়ক হলেও বর্তমানে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করছে। চলমান নির্মাণকাজের জন্য স্টেশনকেন্দ্রিক রাস্তার প্রশস্ততা হ্রাস, খানা-খন্দের সৃষ্টি, রোড ডিভাইডার না থাকা, বর্ষাকালে ড্রেনেজ সিস্টেম যথাযথভাবে কার্যকর না হওয়ায় নিচু অংশে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ধীরগতি ও যানজট দুঃসহনীয় পর্যায়ে নিয়ে যায়। তদুপরি সড়ক যানজটমুক্ত করতে এবং শৃংখলা আনয়নে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। সবার চেষ্টায় ঘরমুখী যাত্রীদের আমার নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে কাজ করছি।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে গাজীপুরের ওপর দিয়ে চলাচলকারী একটি পরিবহনের বাসচালক জাকির হোসেন বলেন, এ বছর ঈদের আগমুহূর্তেও যানজট ছাড়াই ঢাকায় যাতায়াত করা যাচ্ছে। বিগত ৮-১০ বছরে ঈদের আগ মুহূর্তে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক এমন যানজটমুক্ত দেখিনি। মানুষ অনেকটাই স্বস্তিতে এ মহাসড়ক দিয়ে গন্তব্যে যেতে পারছে।

একই ধরনের অনুভূতির কথা জানিয়েছেন ঢাকা থেকে অন্যান্য মহাসড়কে যাতায়াতকারী যাত্রী ও পরিবহনচালকেরা। ঢাকা থেকে বগুড়াগামী একটি পরিবহনের বাসচালক শওকত আলী বলেন, এ বছর ঈদযাত্রায় তেমন কোনো যানজট ও ধীরগতি ছাড়াই সিরাজগঞ্জের মহাসড়ক পার হতে পেরেছি। এবারের সিরাজগঞ্জ মহাসড়কের ঈদযাত্রা সত্যিই যেকোনো বছরের চেয়ে স্বস্তিদায়ক হয়েছে।

এদিকে ঈদযাত্রায় যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে যানজট যাতে না হয়, সে জন্য হাইওয়ে পুলিশ, জেলা পুলিশ ও নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগ যৌথভাবে কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দায়িত্বে থাকা কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের শিমরাইল ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. শরফুদ্দিন জানান, ঈদযাত্রা যাতে ভোগান্তিহীন হয়, সে জন্য হাইওয়ে পুলিশ কাজ করছে। যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দায়িত্বে থাকা ভুলতা হাইওয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক ওমর ফারুক জানান, ঈদযাত্রা সামনে রেখে হাইওয়েতে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তারা কাজ করছেন। মহাসড়কে চাপ নেই।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কেও নেই চিরচেনা সেই যানজটের চিত্র। ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লার যাত্রী শরীফুল ইসলাম তনয় বলেন, ‘এবার বিগত যেকোনো সময়ের চেয়ে যানজট একেবারেই কম। যে গরম, তার সঙ্গে যদি যানজট থাকতো, তাহলে অনেক মানুষ পথেই অসুস্থ হয়ে পড়ত।’

একই চিত্র ঢাকা-আরিচা মহাসড়কেও। ট্রাফিক পুলিশ জানিয়েছে, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, জিপ, মোটরসাইকেল ও ছোট মালবাহী পিকআপ ভ্যানের জন্য আলাদা লেন থাকায় এ যানবাহনগুলো সহজে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের টেপড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে পাটুরিয়া ঘাটে চলে যেতে পারছে। পর্যাপ্ত ফেরি সচল থাকায় এসব যানবাহন অল্প সময়ের মধ্যেই পদ্মা নদী পার হয়ে পাটুরিয়া থেকে রাজবাড়ির দৌলতদিয়া প্রান্তে যেতে পেরেছে।