পুলিশের হেফাজতে গ্রেপ্তার রনি মিয়া। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ।

স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে রনি মিয়া (২৫) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা-পুলিশ।

আজ ২৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান।

প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার বলেন, গত ১৫ সেপ্টেম্বর সকালে রনি ও স্ত্রী ফারজানার পুরাতন প্রেমের সম্পর্কগুলো নিয়ে তাঁদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ শুরু হয়। নিহত ফারজানা এবং তাঁর পুরাতন প্রেমিক কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে শিক্ষানবিশ নার্স হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। সে জন্য তাঁর স্বামী তাকে সন্দেহ করা শুরু করেন। এ বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে এর আগেও একাধিকবার ঝগড়া-বিবাদ হয়েছে। ঘটনার দিন ফারজানা তাকর ঘর করবেন না মর্মে তাঁকে ডিভোর্স দিয়ে দেবেন বলে জানান। এতে তাঁর স্বামী সেদিনই ফারজানাকে হত্যার জন্য একটি সূক্ষ্ম পরিকল্পনা করে ফেলে। সেই দিন রাতে রাতের খাওয়া শেষে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে ফারজানাকে নিয়ে বছিলা ব্রিজ-সংলগ্ন নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির পেছনে বুড়িগঙ্গা নদীর পারে অত্যন্ত নির্জন ও গভীর জলাধারের কাছে নিয়ে আসে এবং প্রেমালাপ শুরু করেন। কিছুক্ষণ পরেই পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী রনি মিয়া ফারজানাকে জোরে ধাক্কা দিয়ে গভীর পানিতে ফেলে দেন। নদীতে প্রচন্ড স্রোত থাকায় ফারজানা পানির গহিন তলে ডুবে যান। ফারজানা বোরকা পরে ছিলেন এবং সাঁতার না জানার কারণে আর ওপরে উঠতে পারেননি।
ফারজানার স্বামী আসামি রনি মিয়া নৌবাহিনীর একজন সাবেক সদস্য। পানির স্রোত সম্পর্কে তাঁর ভালো ধারণা থাকার জন্যই মূলত সে তাঁর সাতার না জানা স্ত্রীকে পানিতে ফেলে হত্যা করেন। তারপর ঘটনাস্থল থেকে রনি মিয়া চলে আসেন এবং আত্মীয়স্বজনকে ফোন দিয়ে বলেন, রাতে ফারজানা তাঁর স্বামীর সাথে ঝগড়া করে মোবাইল বাসায় রেখে কালো বোরকা পরে বাসা থেকে বের হয়ে গেছেন। এ ঘটনায় নিখোঁজ ফারজানার স্বামী রনি মিয়া বাদী হয়ে ফারজানার মাকে (শাশুড়ি)সহ থানায় এসে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার জিডি করেন।

তিনি আরও বলেন, কেরানীগঞ্জ মডেল থানা-পুলিশ নিখোঁজ জিডির সূত্র ধরে ফারজানাকে খুঁজতে থাকে। নিখোঁজ ফারজানার স্বামী রনি মিয়া পুলিশকে জানান, ফারজানার বিয়ের আগে নাদিম নামে একটি ছেলের সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এ বিষয়ে তাঁদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হলে ফারজানা রাগ করে বাসা থেকে চলে যান। পুলিশ ফারজানার বিয়ের আগের প্রেমিক নাদিমের কাছে ফারজানা গিয়ে থাকতে পারে এই ধারণা করে প্রাথমিক অনুসন্ধান করতে থাকে। ফারজানার পরিবারও তাঁর বিবাহের পূর্বে নাদিমের সাথে প্রেমের সম্পর্কের সত্যতা নিশ্চিত করে।

নিখোঁজ ফারজানাকে খুঁজে বের করতে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা-পুলিশের একটি চৌকস আভিযানিক দল ফারজানার সাবেক প্রেমিক নাদিম, তাঁর বান্ধবীদের থানায় নিয়ে এসে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে।

ফারজানা কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে শিক্ষানবিশ নার্স হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। তাঁর সাবেক প্রেমিক এবং বন্ধুবান্ধবী সবাই একই হাসপাতালে শিক্ষানবিশ নার্স হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন।

গত ২১ সেপ্টেম্বর বিকেলে ৯৯৯ এর মাধ্যমে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ জানতে পারে, জাজিরা নামার বোর্ড ঘাটের বাদশা ব্যাপারীর ইটখোলার পশ্চিম পার্শ্বে পানি ও কচুরিপানার ভেতরে ভাসমান অর্ধগলিত অবস্থায় অজ্ঞাতনামা এক নারীর মৃতদেহ ভেসে রয়েছে। তাঁর পরিহিত কালো বোরকা, সবুজ রঙের সালোয়ার এবং দেহের গঠন দেখে ফারজানার স্বামী রনি মিয়া জানান, মৃতদেহটি তাঁর নিখোঁজ স্ত্রী ফারজানার।

পরবর্তীতে চাঞ্চল্যকর ও নৃশংস এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় ফারজানার ভাই আরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।

ফারজানা নিখোঁজ হওয়ার আগে তাঁর সর্বশেষ অবস্থান ছিল কেরানীগঞ্জের বছিলা ব্রিজ। কিন্তু ফারজানার লাশ পাওয়া গিয়েছে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার পার্শ্ববর্তী দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন জাজিরা নামার বোর্ড ঘাটের বাদশা ব্যাপারীর ইটখোলার পশ্চিম পার্শ্বে খালে। থানা পুলিশ ঘটনাস্থলের বিভিন্ন আলামত ও পারিপার্শ্বিক তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করে এবং লাশটি কীভাবে ভাসতে ভাসতে ১৫ কিলোমিটার দূরে চলে এল, সে ব্যাপারে ব্যাপক পর্যালোচনা করে অত্যন্ত চাঞ্চল্যকর তথ্য পেতে শুরু করে। এ বিষয়ে পুলিশ ভিকটিম ফারজানার স্বামী রনি মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি একেক সময় একেক ধরনের তথ্য দেন। অপরদিকে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে ফারজানার স্বামী রনি মিয়ার ঘটনার রাতে বছিলা ব্রিজ সংলগ্ন নদীর পাড়ে অবস্থান দেখা যায়। রনির দেওয়া তথ্য এবং ঘটনার রাতে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে তার রাত্রীকালীন বিভিন্ন অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে পুলিশ ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। এবং রনি মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে আসামি রনি মিয়া তাঁর স্ত্রী ফারজানাকে কীভাবে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করে লাশ গুম করেছেন, সে ব্যাপারে পুলিশকে তথ্য প্রদান করেন।