গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ২০০০ সালে বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ও মুফতি হান্নানের ঘণিষ্ঠ সহযোগী মো. আজিজুল হক রানা ওরফে শাহনেওয়াজ ওরফে রুমানকে (৪৪) গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) বিভাগ।

রাজধানীর খিলক্ষেত থানার খিলক্ষেত বাজার মসজিদের সামনে থেকে ১ মার্চ আজিজুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় দায়ের অন্য একটি মামলায় তিনি ২০ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি।

সিটিটিসির ইকোনমিক ক্রাইম অ্যান্ড হিউম্যান ট্রাফিকিং টিম ২ মার্চ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, গ্রেপ্তারের পর আজিজুলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তিনি ১৯৮৭ সালে গাজীপুরের শ্রীপুরে জামিয়া আনোয়ারিয়া মাদ্রাসায় নূরানী বিভাগে ভর্তি হন এবং ওই মাদ্রাসার শিক্ষক ও মুফতি হান্নানের অনুসারী নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের (হুজি-বি) সক্রিয় সদস্য মাওলানা আমিরুল ইসলামের সংর্স্পশে আসেন। আমিরুল তাঁকে হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশে যোগদানের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। ওই মাদ্রাসায় মুফতি হান্নান, আব্দুর রউফ, আব্দুস সালামসহ হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের বিভিন্ন সিনিয়র সদস্যদের যাতায়াত ছিল এবং সেখানে হুজি-বির সদস্যদের গোপন বৈঠক হতো।

আজিজুল সংগঠনে যোগ দেওয়ার পর অন্য ছাত্রসহ প্রশিক্ষণ ও তালিম নিতে হুজি-বি নেতা মুফতি ইজহারের চট্টগ্রামের লালখান মাদ্রাসায় যান । সেখানে তিনি বোমা তৈরিসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণনেন। মুফতি হান্নান সংগঠনের অপারেশনাল কার্যক্রমের জন্য লোক সংগ্রহের দায়িত্ব দেন মাওলানা আমিরুলকে। এরপর আজিজুলকে বাছাই করনে আমিরুল। পরে আমিরুল গোপালগঞ্জ গিয়ে সোনার বাংলা সাবান ও মোমবাতি তৈরির কারখানায় মুফতি হান্নানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। মুফতি হান্নান এরপর আজিজুলের ছদ্মনাম দেন ‘শাহনেওয়াজ’।

আজিজুল কারখানায় কাজ শুরু করেন। ওই কারখানায় মোমবাতি ও সাবান তৈরির আড়ালে বোমা তৈরির কাজ চলত। বোমা তৈরির কাজে আজিজুলসহ মো. ইউসুফ ওরফে মোসহাব, মেহেদী হাসান ওরফে আ. ওয়াদুদ, ওয়াসিম আক্ত ওরফে তারেক হোসেন, মো. মহিবুল ওরফে মফিজুর রহমান, শেখ মো. এনামুল হক, আনিসুল ইসলাম ওরফে আনিস প্রমুখ জড়িত ছিলেন। ২০০০ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তাঁর সফরসঙ্গীদের হত্যার উদ্দেশ্যে কোটালীপাড়ায় শেখ লুৎফর রহমান সরকারি আদর্শ কলেজ মাঠে অবস্থিত সভামঞ্চের পাশে মাটির নিচে একটি ৪০ কেজি ওজনের বোমা এবং হেলিপ্যাড সংলগ্ন (ডহর পাড়া) পাশের মাটির নিচে একটি ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখে জঙ্গিরা। আজিজুল মুফতি হান্নানের সঙ্গে বোমা পুঁতে রাখার দায়িত্বে ছিলেন। ঘটনাটি প্রকাশ পেলে বোমা দুটি উদ্ধারের পর আজিজুল পালিয়ে ঢাকায় চলে আসেন এবং মাওলানা আমিরুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করেন।

এরপর আজিজুল দীর্ঘ ২১ বছর বিভিন্ন ছদ্মপেশার আড়ালে আত্মগোপনে ছিলেন এবং অত্যন্ত গোপনে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন। তিনি কখনো দরজির কাজ করেছেন, কখনো মুদি দোকানদার, বই বিক্রেতা, গাড়িচালক এবং সবশেষ প্রিন্টিং ও স্টাম্পপ্যাড বানানোর কাজ করেছেন।

সিটিটিসির বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আজিজুলের কাছ থেকে জিহাদী বই, দুটি মুঠোফোন, পেনড্রাইভ, কম্পিউটারের হার্ডডিক্স জব্দ করা হয়েছে এবং সাংগঠনিক কার্যক্রমের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ঘটনায় খিলক্ষেত থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়েছে।