শিশুকে অপহরণের পর হত্যার রহস্য উদঘাটন নিয়ে বুধবার দুপুরে প্রেস ব্রিফিংয়ে বক্তব্য দেন বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বিপিএম। ছবি: বগুড়া জেলা পুলিশ

বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য নয় বছরের শিশু রাজ মামুনকে হত্যা করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার অপহরণের অভিযোগ পাওয়ার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আসামিকে গ্রেপ্তার এবং আসামির স্বীকারোক্তি অনুযায়ী শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার সারিয়াকান্দির বেড়া পাঁচবাড়িয়া গ্রামের মো. সুলতান শেখ নামের এক ব্যক্তি সারিয়াকান্দি থানায় এসে এজাহার দায়ের করেন। তাতে তিনি বলেন, তাঁর ছেলে মো. রাজ মামুন (৯) গত ৫ ডিসেম্বর মাগরিবের নামাজ আদায়ের জন্য বাড়ির পূর্ব পাশের মসজিদে যায়। এরপর সে বাড়ি ফেরেনি। বাদী জানতে পারেন, মাগরিবের নামাজ পড়ার পর তাঁর ছেলে মসজিদেই ছিল। এশার নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে রাজার মোড়ে পাকা রাস্তায় পৌঁছালে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় এসে তাঁর ছেলেকে অপহরণ করে। পরে অপহরণকারীরা বাদীর ফোন নম্বরে ফোন করে মুক্তিপণ হিসেবে ২০ হাজার টাকা বিকাশে পাঠাতে বলেন এবং বিকাশের একটি এজেন্ট নম্বর দেন।

এ অভিযোগে মামলা হওয়ার পর বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বিপিএমের সার্বিক দিকনির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আলী হায়দার চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে মঙ্গলবারই তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বগুড়ার ডিবির ইনচার্জ মো. সাইহান ওলিউল্লাহ, সারিয়াকান্দি থানার ওসি মো. মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে ডিবি ও থানার যৌথ দল ঢাকার সাভার থানাধীন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মুক্তিপণ দাবিকারী মো. ফরিদুলকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাঁকে সঙ্গে নিয়ে সারিয়াকান্দি থানাধীন বেড়া পাঁচবাড়িয়া গ্রামের (চর এলাকা) ধানখেত থেকে মঙ্গলবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে শিশু মো. রাজ মামুনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তার ফরিদুল রংপুরের পীরগাছা থানাধীন চররহমত গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফরিদুল জানান, ঘটনার কিছুদিন আগে বগুড়া সদর থানাধীন এরুলিয়া এলাকায় ধান কাটার কাজের জন্য আসেন তিনি। তিনি অনেক টাকা ঋণগ্রস্ত হওয়ায় ধান কাটার পারিশ্রমিকে তাঁর চাহিদা না মেটায় তিনি এরুলিয়া এলাকা থেকে সারিয়াকান্দি থানাধীন জামথল এলাকার উদ্দেশে রওনা দেন। এর আগে ওই এলাকায় কাজ করার সুবাদে এলাকাটি তাঁর পূর্বপরিচিত। ০৫ ডিসেম্বর বিকেলে সারিয়াকান্দি নদী পার হয়ে জামথল গ্রামে যান তিনি। সেখানে গিয়ে কোনো কাজ না পাওয়ায় গ্রামের একটি মুদিখানা দোকানের পাশে অবস্থান নিয়ে তিনি কয়েকটি বাচ্চাকে খেলা করতে দেখে একজনকে অপহরণ করার পরিকল্পনা করেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী একটি মুদিখানা দোকানের পাশে অবস্থান করেন। এশার নামাজ শেষে রাজ মামুন (৯) মসজিদ থেকে বের হলে তাকে ঘুঘু পাখির বাচ্চা দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে ধানখেতের পাশে গাছের নিচে নিয়ে যান। রাত গভীর হলে রাজ মামুন চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করলে তাৎক্ষণিক তাঁকে গলা টিপে শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ ধানখেতে ফেলে রাখেন। তারপর তিনি আজাহার আলীর মুদিখানা দোকান থেকে কৌশলে দোকানদারের ফোন নম্বর নিয়ে ওই গ্রাম ত্যাগ করেন। পরের দিন ৬ ডিসেম্বর দোকানদার আজাহারকে ফোন করে রাজ মামুনের বাবাকে চান। তখন দোকানদার আজাহার বলেন, রাজ মামুনের বাবা সুলতান ওখানেই উপস্থিত আছেন বলে তাঁর কাছে ফোন ধরিয়ে দিলে আসামি ফরিদুল রাজ মামুনের সন্ধান দেবে বলে তার বাবা সুলতানের কাছে মুক্তিপণ বাবদ ২০ হাজার টাকা দাবি করেন।