নিজের ঈদ বোনাসের টাকায় ‘ডেলিভারিম্যান’ এহসানুল আবেদীনকে এই বাইসাইকেল কিনে দিয়েছেন পুলিশ কনস্টেবল জিহাদ হাসান ছবি: সংগৃহীত

ঘরে বিধবা মা আর ভাই। বাইসাইকেল চালিয়ে ডেলিভারিম্যান হিসেবে যে টাকা পান, তা দিয়ে সংসার চালান এহসানুল আবেদীন (শিহাব) নামের এক যুবক। কিন্তু সেই সাইকেল মেরামতে খরচ বেশি পড়ায় বিক্রি করে দেন। তারপর ফেসবুক পেজে চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে নতুন একটি সাইকেল কিনতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হন এহসানুল। সাইকেল বিক্রির সব টাকা হারিয়ে রাস্তায় ঘুরতে থাকেন তিনি। তাঁর চোখের পানি দেখে নিজের ঈদের বোনাসের টাকা দিয়ে তাঁকে নতুন একটি বাইসাইকেল কিনে দিয়েছেন এক পুলিশ কনস্টেবল। ওই পুলিশ সদস্যের নাম জিহাদ হাসান। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত তিনি।
এহসানুলের বাসা নগরের বাকলিয়া এলাকায়। গত ২১ মার্চ ফেসবুকে ‘বাইসাইকেল শপিং’ নামের একটি পেজে বিজ্ঞাপন দেখেন। সেখানে ঈদ উপলক্ষে ৬৫ শতাংশ মূল্যছাড়ে সাড়ে তিন হাজার টাকায় বাইসাইকেল বিক্রির বিজ্ঞাপন দেখেন।
প্রাথমিকভাবে বিকাশের মাধ্যমে ৫৫০ টাকা পাঠান। পরে আরও তিন হাজার টাকা পাঠান। ২৩ মার্চ তাঁর বাইসাইকেলটি পাওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে ফোন করে তাঁকে আরও ৩ হাজার ৫০০ টাকা পাঠাতে বলা হয়। বলা হয়, এই টাকা সাইকেলটি বুঝিয়ে দেওয়ার সময় ফেরত দেওয়া হবে। ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে তিনি ওই টাকাও দিয়ে দেন। কিন্তু সাইকেল আর বুঝে পাননি এহসানুল। একপর্যায়ে তিনি বুঝতে পারেন, প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
এহসানুল আবেদীন বলেন, ‘লোভে পড়ে কম টাকায় জিনিস কিনতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছি। আমার মতো এ রকম ভুল যাতে কেউ না করে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতারণার ঘটনায় বাকলিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। জানতে চাইলে বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রহিম বলেন, প্রতারক চক্রটিকে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।
এহসানুলের এভাবে প্রতারণার শিকার হওয়ার বিষয়টি ১ এপ্রিল ফেসবুকে দেখতে পান পুলিশ কনস্টেবল জিহাদ হাসান। পরে তিনি তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ইতিমধ্যে পেয়ে যান ঈদের বোনাস। আর সেই টাকায় ১৫ এপ্রিল ১৪ হাজার টাকা দিয়ে একটি বাইসাইকেল কিনে এহসানুলের হাতে তুলে দেন পুলিশ সদস্য জিহাদ।
ঈদের বোনাসের টাকা মানুষ সাধারণত নিজে কিংবা পরিবারের জন্য খরচ করে, অচেনা এক লোকের জন্য কেন খরচ করলেন? এ প্রশ্নের জবাবে জিহাদ হাসান আজ মঙ্গলবার বলেন, ‘সাইকেলটি পাওয়ার পর এহসানুলের মুখে যে হাসি দেখেছি, সেটির মূল্য আমার কাছে অনেক। তাঁর হাসিতে আমার সুখ।’
২০১৬ সালে বাংলাদেশ পুলিশে কনস্টেবল হিসেবে যোগ দেন কুমিল্লার মুরাদনগরের বাসিন্দা জিহাদ হাসান। তিনি জানান, চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে কোনো বছর দুই ঈদের বোনাসের টাকা নিজের জন্য খরচ করেননি। কারও চিকিৎসায় কিংবা কাউকে স্বাবলম্বী করতে ব্যয় করেছেন। আগামী ঈদুল আজহার বোনাসের সঙ্গে আরও কিছু টাকা জোগাড় করে চাকরি হারানো এক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে স্বাবলম্বী করতে তাঁর হাতে তুলে দেওয়ার ইচ্ছা আছে।
জিহাদ হাসান যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়তেন, তখন তাঁর বাবাকে হারান। পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে ছোটবেলা থেকেই কষ্ট করে বেড়ে উঠেছেন। জিহাদ বলেন, ‘মানুষের কষ্ট দেখলে নিজের কষ্টের দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যায়। এ জন্য নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী পাশে থাকার চেষ্টা করি। রেশনেরও কিছু অংশ মানুষকে দিই।’
ছেলের এই কাজে গর্ব করছেন জিহাদের মা জেসমিন বেগম। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে প্রয়োজনমতো আমাদের জন্য খরচ করে। বাড়তি বিলাসিতা না করে বোনাসের টাকায় গরিব–দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটবে, এটি অনেক বড় পাওয়া।’
নতুন সাইকেল পেয়ে খুশি এহসানুল আবেদীন। তিনি বলেন, ‘প্রতারণার শিকার হয়ে যখন ভেঙে পড়ছিলাম, তখনই সাইকেলটি পেয়ে আবার কাজ শুরু করি।’ সূত্র: প্রথম আলো।