কুষ্টিয়ায় মানবপাচারের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া দুজন। ছবি: কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ

কুষ্টিয়ায় সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ইউনিট (সিসিআইইউ) সঙ্ঘবদ্ধ মানব পাচার চক্রের রহস্য উদঘাটন ও দুই আসামিকে আটক করেছে।

এ বিষয়টি জানিয়ে শনিবার বেলা ১২টায় কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ সুপার মো. খাইরুল আলম প্রেস ব্রিফিং করেন। তিনি জানান, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার মো. আবদুস সামাদ (৪৮) নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে মানবপাচার সংক্রান্ত ঘটনায় এজাহার দায়ের করেন। তাতে রেজাউল করিম হিমেল, সোভন হোসেন (৪০) (বর্তমানে কম্বোডিয়া প্রবাসী), মো. ইদ্রিস মণ্ডলসহ (৪৭) অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনকে আসামি করা হয়।
এ ঘটনা সংক্রান্তে জেলা পুলিশ সুপারের প্রত্যক্ষ দিকনির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে কুষ্টিয়া জেলার সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ইউনিটের (সিসিআইইউ) ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মো. আনিসুল ইসলামের নের্তৃত্বে একটি চৌকস দল তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আসামিদের অবস্থান নির্ণয়-পূর্বক দেশ ও প্রবাসের সংঘবদ্ধ মানব মানবপাচারের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত চক্রের রহস্য উদঘাটন ও দুজন আসামি আটক করে। আটক ব্যক্তিরা হলেন মো. রেজাউল করিম হিমেল (এজাহার নামীয়) এবং অজ্ঞাতনামা আসামিদের মধ্যে মোহাম্মদ পারভেজ রানাকে (২৭)।

সংঘবদ্ধ মানব পাচার চক্রের সদস্যরা এক লাখ টাকা বেতনে বিদেশে পাঠানোর কথা বলে বাদীর কাছ থেকে ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা নেয়। তারা গত ২৪ জুন ভিকটিম বাদীর ছেলে ইশরাক শাহরিয়ার জয়কে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে ক্যাসিনোতে কাজ করার কথা বলে কম্বোডিয়ায় পাঠিয়ে দেয়। সেখানে ভিকটিমকে উল্লেখিত কাজ না দিয়ে দেশ ও প্রবাসের লোকদের কাছ থেকে প্রতারণামূলকভাবে অর্থ উপার্জন করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। ভিকটিম ইশরাক শাহরিয়ার সেখানে একমাস কাজ করার পর ওই কাজ করতে অস্বীকার করলে কম্বোডিয়ায় অবস্থানরত এজাহার নামীয় আসামি মো. সুমন হোসেনসহ ৩/৪ জন অজ্ঞাতনামা আসামি ভিকটিমকে অজ্ঞাতস্থানে আটক করে আট লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। বিষয়টি জানতে পেরে বাদী আসামি রেজাউল করিম হিমেলকে অবগত করলে তিনি কম্বোডিয়াতে অবস্থানরত আসামি সুমন হোসেনের সাথে যোগাযোগ করে বাদীর ও তার ছেলের সাথে ভিডিওকলে কথা বলিয়ে দেয়। বাদীর ছেলে ইশরাক শাহরিয়ার জয় ভিডিওকলে আর্তনাদ করেন এবং বাবাকে জানান, তিনদিন তাঁকে কিছুই খেতে দেয়নি, শুধু পানি খেয়ে আছে; তাকে আসামিরা মারধর করে ও ইলেকট্রিক শক দেয়। জয় আরো বলেন, তাঁকে উদ্ধার করতে না পারলে সে আর বাঁচবে না অথবা আসামিদের দাবি করা টাকা না পেলে তাঁকে অন্য জায়গায় বিক্রি করে দেবে বলে জানান। পরবর্তীতে বাদী তার ছেলেকে সুস্থ শরীরে দেশে ফেরত ও প্রাণ রক্ষার জন্য টাকা দিতে রাজি হয়।

এ পরিপ্রেক্ষিতে গত ২২ আগস্ট বাদী তার আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে টাকা ধার-দেনা করে দৌলতপুর উপজেলা বাজারের সজিব কম্পিউটার বিকাশ ঘর থেকে ১ নম্বর আসামী রেজাউল করিম হিমেলের কথা অনুযায়ী ছেলের প্রাণ রক্ষার স্বার্থে আসামীদের দেওয়া ৫টি বিকাশ নম্বরে সর্বমোট চার লাখ টাকা দেন বাদী। পরবর্তীতে ২ নম্বর আসামির বাবা মো. ইদ্রিস আলীর একটি নম্বরে আরো ৬০ হাজার টাকা পাঠানোর কথা বললে বাদী তা পাঠিয়ে দেন। এরপর আরো তিন লাখ টাকা দাবি করে আসামিরা ওই টাকা দিতে ব্যর্থ হলে বাদীর ছেলের ব্যক্তিগত দুটি স্মার্টফোন নগদ ৯০ হাজার টাকা ও ভিসা পাসপোর্ট কেড়ে ভিকটিম জয়কে বের করে দেয়। বিষয়টি পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ অবগত হয়ে কম্বোডিয়াতে বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস না থাকায় থাইল্যান্ড দূতাবাসের মাধ্যমে কম্বোডিয়া থেকে আউটপাসের মাধ্যমে থাইল্যান্ড হয়ে গত ২৬ সেপ্টেম্বর তাঁকে বাংলাদেশে ফেরত আনা হয়।

আটক করা আসামি রেজাউল করিম হিমেল ইতিপূর্বে প্রায় ১০ ধরে সিঙ্গাপুরে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। ২০১৯ সালে তিনি বাংলাদেশে এসে মানবপাচার চক্রের সাথে জড়িত হয়ে মানব পাচার কার্যক্রম শুরু করেন। তার কোন রিক্রুটিং লাইসেন্স নেই। তিনি শুধুমাত্র ট্রাভেলিং লাইসেন্স এর মাধ্যমে বিভিন্ন সাধারণ মানুষকে বিদেশে উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কম্বোডিয়াসহ বিভিন্ন দেশে মানব পাচার করে থাকে।

মানবপাচার চক্রের রহস্য উদঘাটন ও ২ আসামীকে গ্রেফতার করার বিষয়টি জানিয়ে শনিবার ব্রিফিং করেন কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ সুপার। ছবি: কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ

প্রেস ব্রিফিংয়ে আরো উপস্থিত ছিলেন মো. ফরহাদ হোসেন খাঁন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, জেলা বিশেষ শাখা, মোঃ আবু রাসেল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সদর সার্কেল, জেলা পুলিশের অন্যান্য পদমর্যাদার কর্মকর্তাবৃন্দ, সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ইউনিটের সদস্য বৃন্দ এবং ইলেকট্রনিকস ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকেরা।