শেরপুরে এপিবিএনের অভিযানে গ্রেপ্তার যুবক। ছবি: পুলিশ নিউজ

শেরপুরে এপিবিএনের অভিযানে অশ্লীল ছবি ও ভিডিও টিকটক ও ফেসবুকে ভাইরাল এবং ধর্ষণের ঘটনায় যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, শেরপুরের নালিতাবাড়ী থানার লাভলু আহম্মেদের (২৮) সঙ্গে ভুক্তভোগী তরুণীর পরিচয় হয় মোবাইল ফোনে। একপর্যায়ে প্রেমের সম্পর্ক থেকে গত ৭ জুন ময়মনসিংহ জেলার নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে অ্যাফিডেভিট করে তাঁরা আদালতের মাধ্যমে বিয়ে করেন। পরে ময়মনসিংহে থাকা শুরু করেন দুজন, কিন্তু কিছুদিন পরই লাভলু তাঁর গ্রামের বাড়িতে চলে যান। তরুণী খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন, লাভলুর আরেকজন স্ত্রী আছে।

তরুণী জানান, লাভলু বিয়ের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে কৌশলে আনুমানিক ৪০ হাজার টাকা নিয়েছেন। উপরন্তু লাভলু তরুণীর কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন, কিন্তু তরুণীর দরিদ্র পরিবার এত টাকা দিতে অপারগতা জানায়।

তিনি আরও জানান, এর পর থেকে ভিকটিমকে পাঁচ লাখ টাকার জন্য বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন বিবাদী। ওই টাকা না দিলে বিবাদী ভিকটিমকে জিম্মি করে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে টাকা আদায় করবেন এবং আরও হুমকি দেন যে, ভিকটিম ও বিবাদী একসঙ্গে থাকাকালীন বিবাদীর মোবাইল ফোনে কৌশলে গোপনে ধারণকৃত বিভিন্ন আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেবেন।

বিষয়টি নিয়ে বিবাদী প্রায় সময়ই ভিকটিমকে ভয়ভীতিসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাণনাশের হুমকি দেন। বিবাদী তাঁর দাবিকৃত টাকা না পেয়ে ভাড়া বাসায় থাকাকালীন ভিকটিমের অজান্তে গোপনে ধারণকৃত একান্ত মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও ফেক ফেসবুক আইডি খুলে ভাইরাল করে দেন, যা ভিকটিম তাঁর নিজ বাড়ি শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ীর কালিনগর গ্রামে অবস্থানকালে ২৫ আগস্ট মোবাইল ফোনে দেখতে পান। এ ছাড়াও বিবাদী ভিকটিমের ফেইসবুক আইডিটি হ্যাক করে মেসেঞ্জারের মাধ্যমে তার অশ্লীল ছবি ও ভিডিও ভিকটিমের ছোট ভাইয়ের ফেসবুক মেসেঞ্জারে পাঠান এবং একাধিক আইডিতে শেয়ারসহ আরও অনেককে ছবি ও ভিডিও পাঠান।

বিবাদীর তৈরিকৃত ফেক আইডিতে ভিকটিমের মোবাইল নম্বর উল্লেখ করে দেন এবং অশ্লীল কথাবার্তা লিখে পোস্ট করেন যার কারণে ভিকটিমকে বিভিন্ন সময় অপরিচিত লোকজন ফোন দিয়ে বিরক্তসহ খারাপ কথা বলে।

বিবাদীর এ ধরনের কর্মকাণ্ডে সম্মান বাঁচাতে ভিকটিম আইনগত সহায়তা চেয়ে জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’-এ কল দিলে ৯৯৯ ভিকটিমকে ২ এপিবিএন, মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহের সাইবার টিমের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেয়।

ভিকটিম ২ সেপ্টেম্বর ২ এপিবিএন, মুক্তাগাছা, ময়মনসিংহের অপস্ অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স শাখায় উপস্থিত হয়ে বিস্তারিত ঘটনা জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২ এপিবিএনের সাইবার টিম বিবাদীর তৈরিকৃত ফেক ফেইসবুক আইডিতে ভাইরালকৃত ভিকটিমের ছবি ও ভিডিও রিমুভ করার জন্য ফেইসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট করে।

৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে বিবাদী Baba নামক ইমু আইডি থেকে ভিকটিমের ইমু আইডিতে কল করে জানান, নালিতাবাড়ী থানাধীন আড়াইআনি এলাকায় ভিকটিম যদি দেখা না করেন, তাহলে বিবাদীর কাছে থাকা ভিকটিমের বাকি অশ্লীল ভিডিও ও ছবি ভাইরাল করে দেবেন। ভিকটিম তাঁর সম্মান বাচাতে বিবাদীর সঙ্গে দেখা করতে রাজি হন। একই সঙ্গে এ বিষয়ে ২ এপিবিএনের সাইবার টিমকে জানান।

বিবাদীর কথামতো ভিকটিম ৫ সেপ্টেম্বর রাত ৮টায় বর্ণিত স্থানে যান। আনুমানিক ১ ঘণ্টা পর বিবাদী তাঁর বন্ধু জনৈক সাকিব ও অন্য একজনকে ইজিবাইকে করে ভিকটিমকে নিতে পাঠায়।

ভিকটিম বিবাদীর কথামতো তাদের সঙ্গে ইজিবাইকে করে খালভাঙ্গা গ্রামের নদীর পাড় নামের নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করা বিবাদীর কাছে গেলে তাঁর বন্ধুরা ভিকটিমকে রেখে চলে এলে বিবাদী আনুমানিক রাত পৌনে ১০টার দিকে ভিকটিমকে ধর্ষণ করেন।

২ এপিবিএনের সাইবার ইউনিট এপিবিএন হেডকোয়ার্টার্সের সিআইএ শাখার উন্নত প্রযুক্তির সহায়তায় বিবাদীর অবস্থান শনাক্ত করে এবং সাইবার টিমের সহায়তায় ৫ সেপ্টেম্বর রাত সোয়া ১০টায় শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী থানাধীন খালভাঙ্গা গ্রামের চাঁন মিয়ার বাড়ির সামনে থেকে বিবাদী লাভলু আহম্মেদকে আটক ও ভিকটিমকে উদ্ধার করে।

পরবর্তী সময়ে আটককৃত আসামি ও উদ্ধারকৃত ভিকটিমকে নালিতাবাড়ী থানা হেফাজতে দেওয়া হয়।

গ্রেপ্তার যুবকের নামে নালিতাবাড়ী থানায় বুধবার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রন আইনে নিয়মিত মামলা করা হয়।