মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত দাবা প্রতিযোগিতা নিয়ে শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। ছবি : পুলিশ নিউজ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলার পথে এখন গোটা জাতি। দেশ ও জাতির স্বপ্নের সেই কান্ডারি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষে শুরু হচ্ছে ‘জয়তু শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক গ্র্যান্ডমাস্টারস দাবা’।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষে গত বছরের সেপ্টেম্বরে হয়েছিল ‘জয়তু শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক অনলাইন দাবা টুর্নামেন্ট’। ওই টুর্নামেন্টের সমাপনী অনুষ্ঠানে ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ, সাউথ এশিয়ান চেস কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সভাপতি ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) এবং সহসভাপতি চৌধুরী নাফিজ সরাফাত প্রতিবছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে গ্র্যান্ডমাস্টার টুর্নামেন্ট আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। সে ঘোষণা অনুযায়ী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত হচ্ছে এবারের টুর্নামেন্ট।

টুর্নামেন্টে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেলে আগামী রোববার (১৯ সেপ্টেম্বর) উদ্বোধন হবে ৯ দিনের এই টুর্নামেন্ট। তবে বিভিন্ন রাউন্ডের খেলা অনুষ্ঠিত হবে হোটেল ৭১-এ।

আজ শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে তিনটায় রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল হাসান, বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সহসভাপতি, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, বোর্ড অব ট্রাস্টিজ ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, ফেডারেশনের সহসভাপতি কে এম শহীদুল্লাহ্, দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. শোয়েব রিয়াজ আলম, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান শাহনুল হাসান খান, সিনিয়র অ্যাডভাইজার অধ্যাপক ড. জহিরুল হক।

বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সহসভাপতি বলেন, মানবতার জননী ও সর্বকালের অন্যতম প্রজ্ঞাবান নেতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষে ‘জয়তু শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক দাবা টুর্নামেন্ট’ আয়োজন করতে পারা অত্যন্ত আনন্দ ও সম্মানের বিষয়।

তিনি বলেন, ‘আমাদের জন্য এটা অত্যন্ত বিশেষ মুহূর্ত। টুর্নামেন্টটির নামকরণ এমন একজন নেতার নামে, যিনি নিজে একজন শান্তির প্রতীক, যিনি দেশের ও মানুষের উন্নতির জন্য তাঁর পুরো জীবন, আবেগ ও নিষ্ঠা নিয়ে পরিশ্রম করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুরো বিশ্বকে তাঁর “মানবতার নেতৃত্ব” দিয়ে অনুপ্রাণিত করেছেন এবং অসীম মমতায় আমাদের সবাইকে উৎসাহিত করেছেন নিজের দেশ ও জনগণের সেবা করার জন্য।’

দাবা মূলত দার্শনিকের খেলা উল্লেখ করে চৌধুরী নাফিজ সরাফাত বলেন, ‘এটি জীবনের সঙ্গে জড়িত, যেখানে দুটি পরিচ্ছন্ন মস্তিষ্ক কোনো পুরস্কারের জন্য নয় বরং সম্মানের জন্য লড়াই করে। এ কারণে আমাদের গত বছরের টুর্নামেন্টটিও সফল হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘কোনো বাধ্যবাধকতা নয়, মানবতার জননীর প্রতি শ্রদ্ধা থেকেই আয়োজন করা হয়েছে এ টুর্নামেন্ট। এ ইভেন্টটিকে এ বছর এবং সামনের বছরগুলোতে আরও উচ্চতায় নিয়ে যেতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।’

আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এরই মধ্যে বাংলাদেশে কানাডার মানের শিক্ষা প্রদান করে শিক্ষাক্ষেত্রে নিজেদের আলাদা জায়গা করে নিয়েছে। কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটিতে আমরা কেবল শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষিত করার লক্ষ্য রাখছি না, এটি এমন একটি যাত্রা, যেখানে শিক্ষার্থীরা নিজেদেরকে উন্নত মানুষে পরিণত হতে শেখেন। এ ছাড়া তাঁরা শিখবেন, শ্রেষ্ঠত্ব কোনো অবস্থান নয় বরং এটি একটি অভ্যাস। দাবা অনুশীলন ও প্রশিক্ষণ উচ্চমানের ভাবনার দক্ষতা যেমন সমস্যা সমাধান, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সমালোচনামূলক ভাবনা, পরিকল্পনা ও সৃজনশীল চিন্তার বিকাশকে সমর্থন করে। এটি সাধারণ জ্ঞানীয় ক্ষমতা ও শিক্ষাগত অর্জনকে উন্নত করতে সহায়তা করে, বিশেষত কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটির মতো একটি প্রায়োগিক শিক্ষার পরিবেশে।’

সংবাদ সম্মেলনে টুর্নামেন্টের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক। প্রতিযোগিতা আয়োজনে আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ায় তিনি দাবা ফেডারেশনের পক্ষ থেকে ফেডারেশনের সহসভাপতিকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

বাংলাদেশসহ ১০টি দেশের ১২ জন গ্র্যান্ডমাস্টার, ১৬ জন আন্তর্জাতিক মাস্টার ও তিনজন নারী আন্তর্জাতিক মাস্টার এ টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছেন।

বিদেশি খেলোয়াড়েরা হলেন গ্র্যান্ডমাস্টার দীপ দাস গুপ্ত (ভারত), এহসান ঘাইম মাগামি (ইরান), মাসোউদ মোসাদেগপোর (ইরান), ভাদিম মালাখাটকো (বেলজিয়াম), অড্রে সুমেটস (ইউক্রেন), জুভারেভ আলেক্সান্ডার (ইউক্রেন) ও আলেক্সেউ কিসলিনসি (চেক রিপাবলিক)।

আন্তর্জাতিক, ফিদে ও ক্যান্ডিডেট মাস্টাররা হলেন শেখ মোহাম্মদ নুবাইর শাহ (ভারত), আবদিহাপার আসিলবেক (কিরগিজস্তান), মাহমুদ লোদি (পাকিস্তান), অরোক ঘোষ (ভারত), কোস্তোভ চ্যাটার্জি (ভারত), চক্রবর্তী রেড্ডি মেরেড্ডি (ভারত), মিত্রভা গুহ (ভারত), মোকশকুমার অমিতকুমার দোশি (ভারত), নিলাশ সাহা (ভারত), সামেদ সেকুয়ার সেটি (ভারত), সায়ন্তন দাস (ভারত), সোমক পালিত (ভারত), শ্রীজিত পাল (ভারত), শুভায়ন কুন্ডু (ভারত), সংকল্প গুপ্ত (ভারত), সংকেত চক্রবর্তী (ভারত), সৌরথ বিশ্বাস (ভারত), অরপিতা মুখার্জী (ডাব্লিউআইএম ভারত), লিয়ানাগে রানিদু দিলশান (সিএম, শ্রীলঙ্কা), সাসিথ নিপুন পিউমান্থা (এফএম, শ্রীলঙ্কা) এবং রুপেশ জসওয়াল (এফএম, নেপাল)।

এ ছাড়া দেশের পাঁচ গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোরশেদ, জিয়াউর রহমান, রিফাত বিন সাত্তার, মোল্লা আব্দুল্লাহ আল রাকিব, এনামুল হোসেন রাজীব, তিন আন্তর্জাতিক মাস্টার আবু সফিয়ান শাকিল, মোহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিন, মোহাম্মদ ফাহাদ রহমান, দুই নারী আন্তর্জাতিক মাস্টার রানী হামিদ, শারমীন সুলতানা শিরিনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের খেলোয়াড়দের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
৯ রাউন্ড সুইস লিগ পদ্ধতিতে অনুষ্ঠেয় এ প্রতিযোগিতায়তায় গ্র্যান্ডমাস্টার, আন্তর্জাতিক মাস্টার, নারী গ্র্যান্ডমাস্টার ও নারী আন্তর্জাতিক মাস্টারের নর্ম অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রতিযোগিতায় মোট নগদ ১৫ হাজার মার্কিন ডলার অর্থ পুরস্কার দেওয়া হবে। এর মধ্যে মূল পুরস্কার থাকবে ১৩ হাজার মার্কিন ডলার (চ্যাম্পিয়ন ৪ হাজার, রানারআপ ২ হাজার ৫০০, তৃতীয় ১ হাজার ৫০০, চতুর্থ ১ হাজার, পঞ্চম ১ হাজার, ষষ্ঠ ১ হাজার, সপ্তম ১ হাজার, অষ্টম ১ হাজার ডলার)।

বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের জন্য দুই হাজার মার্কিন ডলার (প্রথম ৭০০, দ্বিতীয় ৫০০, তৃতীয় ৪০০, চতুর্থ ২০০, পঞ্চম ২০০ ডলার) পুরস্কার দেওয়া হবে।

১৯ সেপ্টেম্বর বেলা তিনটায় হোটেল ৭১-এ প্রতিযোগিতার খেলা শুরু হবে।