পুলিশি হেফাজতে আসামি দেলোয়ার। ছবি : বাংলাদেশ পুলিশ

রাজধানীর সদরঘাটে ২০১৯ সালের জুনে মিতালি-৭ লঞ্চের কেবিনে লিলুফা বেগম (৫৭) নামের এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। চার বছর পর সেই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ঢাকা জেলা শাখা। এ ঘটনায় জড়িত ব্রুনাইপ্রবাসী মো. দেলোয়ার মিজিকে (৪৪) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকায় লিলুফাকে হত্যা করার কথা স্বীকার করেছেন দেলোয়ার।

বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) এক সংবাদ সম্মেলনে পিবিআইপ্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার বিপিএম (বার), পিপিএম জানান, গত ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দেলোয়ারকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বাড়ি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ থানাধীন মোল্লাবাড়ি নাসিরকোর্ট গ্রামে।

পিবিআইপ্রধান জানান, ভুক্তভোগী লিলুফা ২০১৯ সালের ১৬ জুন মিতালি-৭ লঞ্চের কেবিনে চড়ে চাঁদপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। পরদিন ১৭ জুন সকালে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর ভাই দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা করেন। তদন্তের এক পর্যায়ে ব্রুনাইপ্রবাসী দেলোয়ারের সঙ্গে লিলুফার পরকীয়ার বিষয়টি জানতে পারে পুলিশ। তবে এর আগেই ব্রুনাই চলে যান দেলোয়ার। দীর্ঘ চার বছর পর ব্রুনাই থেকে ফেরার পর দেলোয়ারকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন দেলোয়ার।

দেলোয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে পিবিআইপ্রধান জানান, ভুক্তভোগী লিলুফার স্বামী নেই। ২০১২ সালের কাজের সুবাদে ভুক্তভোগীর সঙ্গে দেলোয়ারের পরিচয় হয়। ধীরে ধীরে তাঁদের মধ্যে সখ্যতা গড়ে উঠে। ২০১৭ সালে ব্রুনাই চলে যান দেলোয়ার। তবে ভিডিও কলে কথা বলতেন তাঁরা। ২০১৯ সালে দেশে ফিরে লিলুফার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়েন দেলোয়ার। এক পর্যায়ে লিলুফা তাঁকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে। কিন্তু বয়সে ১৩ বছরের বড় হওয়ায় বিয়ে করতে আপত্তি জানান দেলোয়ার। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সম্পর্কের কথা ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দেন লিলুফা। এ কারণে লিলুফাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তিনি।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, ভুক্তভোগীকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে প্রতিবেশী জাহাঙ্গীরের নামে লঞ্চের টিকিট কাটেন দেলোয়ার। উদ্দেশ্যে ছিল জাহাঙ্গীরকে ফাঁসানো। এরপর দেলোয়ার ও লিলুফা চাঁদপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। লঞ্চে লিলুফার সঙ্গে দেলোয়ারের বাগবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে লিলুফাকে হত্যা করেন দেলোয়ার। পরদিন লিলুফার ফোন নিয়ে চাঁদপুরে চলে আসেন দেলোয়ার। কয়েকদিন পর তিনি ব্রুনাইয়ে চলে যান।

পিবিআইপ্রধান জানান, আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আসামি দেলোয়ার। তাঁর বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।