প্রতীকী ছবি

গাজীপুর জেলার শ্রীপুরে রেললাইন কেটে নাশকতার ঘটনার মূল সমন্বয়ক ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতিসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সিটিটিসির ক্রাইম ইউনিটের স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ যাত্রাবাড়ী থানাধীন শনির আখরা কাঁচাবাজার এলাকা থেকে ২৪ ডিসেম্বর রাতে রেললাইন কাটায় ব্যবহৃত সরঞ্জামাদিসহ এ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
গ্রেপ্তাররা হলেন মো. ইখতিয়ার রহমান কবির (৪৩) ও মো. ইমন হোসেন (১৯)।

কবির ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি ও বর্তমান যুবদল নেতা। মো. ইমন হোসেন লালবাগ থানার ২৪ নং ওয়ার্ড মহানগর ছাত্রদল সভাপতি।

১৩ ডিসেম্বর ভোরে চলমান হরতাল অবরোধের অংশ হিসেবে দুর্বৃত্তরা গাজীপুর জেলার শ্রীপুরের বনখড়িয়া এলাকায় রেললাইন কেটে ফেললে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের ৭টি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে ১ জন নিহত এবং ১২ জন আহত হয়। এ ঘটনার ফলে ২৬ ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে।

উল্লেখ্য, গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে কয়েক দফায় হরতাল, অবরোধ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার কারণে দূরপাল্লার গণপরিবহন কম চললেও রেলপথের কোনো প্রভাব পরিলক্ষিত হয়নি। এ দেশের সাধারণ জনগণ রেলপথকে নিরাপদ বাহন হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এ অবস্থায় রেললাইনে নাশকতা সৃষ্টি করে সাধারণ জনগণের মাঝে ভীতি সঞ্চার এবং ব্যাপক প্রাণনাশের পরিকল্পনা থেকে যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মো. ইখতিয়ার রহমান কবিরের সাথে যোগাযোগ করে বলে দলীয় উচ্চপর্যায় থেকে বড় কিছু করার চাপ আছে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইখতিয়ার রহমান কবির আজিমুদ্দিন কলেজের সাবেক আহ্বায়ক তোহা ও গাজীপুর মহানগর ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুমের সাথে যোগাযোগ করেন। পরিকল্পনা অনুসারে গ্যাসের সিলিন্ডার গাজীপুর থেকে আর রেললাইন কাটার যাবতীয় সরঞ্জাম ঢাকার নবাবপুর মার্কেট থেকে সংগ্রহ করে। ১২ ডিসেম্বর তোহা ও মাসুম এসব সরঞ্জাম গাজীপুরে নিয়ে যাওয়ার জন্য ইমনের কাছ থেকে নিয়ে যায়। একই দিনে কবির ও ইমন সন্ধ্যা কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে রওনা দিয়ে জয়দেবপুর রেলস্টেশনে পৌঁছান। তোহা ও মাসুম একটি মাইক্রোবাসসহ স্টেশনের একটু সামনে থেকে কবির ও ইমনকে গাড়িতে ওঠান। পরে তাঁরা গাড়ি নিয়ে রেললাইন কেটে নাশকতা ঘটানোর উদ্দেশ্যে পথিমধ্যে বিভিন্ন স্থান থেকে বেশ কয়েকজনকে গাড়িতে ওঠান। তাঁরা রাতে শিমুলতলীতে হান্ডি রেস্টুরেন্টে খাবার খান। দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার সময় বনখড়িয়া এলাকায় ঘটনাস্থল থেকে ৪/৫ কি.মি দূরত্বে বনের পাশে গাড়ি রেখে, হেঁটে তাঁরা গ্যাস সিলিন্ডারসহ যাবতীয় সরঞ্জাম নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ২ জনকে পাহারায় রেখে বাকিদের সহায়তায় রাত ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে ইমন রেললাইন কেটে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। কাজ শেষে গ্যাসের সিলিন্ডার ওখানেই ফেলে বাকি সরঞ্জামসহ তাঁরা গাড়িতে ফিরে আসেন। ঘটনার ২ দিন পরে কবির, ইমনকে ফোন দিয়ে চকবাজার এলাকায় সাক্ষাৎ করে তাকে তিন হাজার টাকা দিয়ে আত্মগোপনে চলে যেতে বলেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি ও বর্তমান যুবদল নেতা মো. ইখতিয়ার রহমান কবির জানান, তিনি ঢাকার ডেমরা, যাত্রাবাড়ীসহ নিউমার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, বংশাল এলাকায় গাড়িতে অগ্নিসংযোগের নির্দেশদাতা ও মূল পরিকল্পনাকারী। তিনি উল্লিখিত এলাকায় অগ্নিসংযোগের পরিকল্পনা, নির্দেশ ও অর্থ প্রদানের দায় স্বীকার করেছেন।

উল্লেখ্য, বংশাল থানা এলাকায় বাসে অগ্নিসংযোগের চেষ্টার সময় হাতেনাতে ধৃত আসামি মো. জামাল হোসেনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেও ইখতিয়ার রহমান কবিরের নাম এসেছে।
গ্রেপ্তার আসামিদের বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হয়েছে।