রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি : সংগৃহীত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয় পেয়েছেন দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। স্থানীয় সময় আজ সোমবার (১৮ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা। এর মধ্য দিয়ে পুতিনের ৬ বছরের জন্য ক্ষমতায় থাকা নিশ্চিত হলো।

আল-জাজিরা জানিয়েছে, এবারের নির্বাচনে প্রায় ৮৭ শতাংশ ভোট পড়েছে তাঁর পক্ষে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে বিশাল জয়ের মাধ্যমে নিজের ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করেছেন।

যদিও এই নির্বাচন গণতান্ত্রিক বৈধতার সংকটে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। নির্বাচন-পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে পুতিন পশ্চিমা বিশ্বকে উপেক্ষা করার এবং ইউক্রেন আক্রমণ করার সিদ্ধান্তের রায় হিসেবে এই ফল তুলে ধরেন।

সোমবার ভোরে নিজের প্রচারণা সদর দপ্তর থেকে পুতিন এক ভাষণে বলেন, ‘কে বা কতটা তারা আমাদের ভয় দেখাতে চায়, কে বা কতটা তারা আমাদের দমন করতে চায়, আমাদের সংকল্প, আমাদের চেতনা—ইতিহাসে কেউই এমন কিছুতে সফল হতে পারেনি।’

তার ভাষায়, ‘এটি (পশ্চিমাদের এই কৌশল) এখনো কাজ করছে না এবং ভবিষ্যতেও কাজ করবে না। কখনোই না।’

আল জাজিরা বলছে, রোববার ভোট শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পরই প্রাথমিক ফলাফলে ইঙ্গিত পাওয়া যায়: পুতিন তার চলমান শাসন আরও ছয় বছরের জন্য বাড়িয়ে নেবেন।

রাশিয়ার কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের মতে, প্রায় ৬০ শতাংশ নির্বাচনী এলাকার ভোট গণনা শেষে পুতিন প্রায় ৮৭ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। আর এই ফলাফলের অর্থ হলো ৭১ বছর বয়সী পুতিন ক্ষমতায় থাকার মেয়াদের দিক থেকে জোসেফ স্টালিনকে ছাড়িয়ে যাবেন এবং গত ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে রাশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি নেতা হয়ে উঠবেন।

অন্যদিকে প্রাথমিক ফলাফলে যে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, তাতে কমিউনিস্ট প্রার্থী নিকোলাই খারিটোনভ মাত্র ৪ শতাংশের নিচে ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে, নবাগত ভ্লাদিস্লাভ দাভানকভ তৃতীয় এবং অতি-জাতীয়তাবাদী লিওনিড স্লুটস্কি চতুর্থ অবস্থানে রয়েছেন।

টানা তিন দিনের ভোট গ্রহণ শেষে রোববার ভোট বন্ধ হওয়ার সময় রাশিয়াজুড়ে ভোটদানের হার ৭৪ দশমিক ২২ শতাংশ ছিল বলে নির্বাচনী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এবারের নির্বাচনে ২০১৮ সালের চেয়ে বেশি ভোট পড়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভোটদানের হার ছিল ৬৭.৫ শতাংশ। আল জাজিরা বলছে, নির্বাচনে পুতিনের বিজয় কখনোই সন্দেহের মধ্যে ছিল না। কারণ, তাঁর সমালোচকেরা বেশির ভাগই হয় জেলে, না হয় নির্বাসনে বা মৃত। এ ছাড়া পুতিনের নেতৃত্বের প্রতি জনসাধারণের সমালোচনাও দমিয়ে রাখা হয়েছে।

রুশ এই প্রেসিডেন্টের সবচেয়ে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আলেক্সি নাভালনি গত মাসে দেশটির আর্কটিক কারাগারে মারা যান। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ভোট অবাধ বা সুষ্ঠু হয়নি। হোয়াইট হাউসের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র বলেছেন, ‘নির্বাচন স্পষ্টতই অবাধ বা সুষ্ঠু নয়, যেভাবে পুতিন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে বন্দি করেছেন এবং অন্যদের তাঁর বিরুদ্ধে লড়াই করতে বাধা দিয়েছেন।’

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছেন, ভোটটি ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মতো হয়নি’। আর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ‘এই নির্বাচনী জালিয়াতির কোনো বৈধতা নেই এবং হতেও পারে না’।

প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে জয়ী হওয়ায় এখন তিনি পঞ্চমবারের মতো প্রেসিডেন্ট হবেন এবং সে ক্ষেত্রে তাঁর ক্ষমতার মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়বে। সেই সঙ্গে রাশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে প্রেসিডেন্ট পদে থাকার রেকর্ডটিও তার হয়ে যাবে। বর্তমানে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পদে থাকার রেকর্ডের মালিক জোসেফ স্টালিন এবং লিওনিদ ব্রেজনেভ। সাবেক সোভিয়েত আমলে দুজনেই ২৪ বছর করে ক্ষমতায় ছিলেন। সূত্র : বাংলাদেশ জার্নাল