পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার মিঠুন। ছবি: আরএমপি

রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানার লক্ষ্মীপুর মোড়ে আবাসিক হোটেল ড্রিম হ্যাভেনে নারী খুনের ঘটনার ২৪ ঘন্টার মধ্যে রহস্য উদঘাটন করেছে আরএমপি’র রাজপাড়া থানা-পুলিশ। সেই সঙ্গে খুনের ঘটনায় জড়িত ঘাতক মো. মিঠুন আলীকে (২৮) গ্রেপ্তার করেছে। খবর আরএমপির।

মিঠুন নাটোর জেলার সদর থানার আগদিঘা গ্রামের মো. মকবুল হোসেনের ছেলে।

আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় আরএমপি সদর দপ্তর কনফারেন্স রুমে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিক এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান।

ঘটনা সূত্রে জানা যায়, ১৭ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টায় রাজপাড়া থানার লক্ষ্মীপুর মোড়ের ড্রিম হ্যাভেন হোটেলের ম্যানেজার মোবাইল ফোনের মাধ্যমে রাজপাড়া থানা-পুলিশকে জানান, তাঁর হোটেলের একটি রুমে তালাবদ্ধ অবস্থায় থাকলেও ভেতরে একজন নারী অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন।
এ সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে রাজপাড়া থানা-পুলিশের একটি টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে তালাবদ্ধ ৪র্থ তলার ৪০৩ নম্বর রুমে তালা ভেঙে প্রবেশ করে একজন অজ্ঞাত নারীকে খাটের ওপর অচেতন অবস্থায় দেখতে পায়। নারী পুলিশ অফিসারের সহায়তায় পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, তিনি বেশ কয়েক ঘন্টা আগে মারা গেছেন।

পরে সিআইডির ক্রাইমসিন ইউনিটের সহযোগিতায় রাজপাড়া থানা-পুলিশ অজ্ঞাতনামা নারীর নাম-ঠিকানা শনাক্ত করাসহ মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত সংগ্রহ করে।

মৃতের পরিচয় নিশ্চিত করে মৃত জয়নব বেগমের (৪০) আত্মীয়স্বজনের সাথে যোগাযোগ করে। সংবাদ পেয়ে মৃতের আত্মীয়স্বজন এসে লাশ শনাক্ত করেন এবং বড় ভাই মো. তছলেম প্রামাণিক (৪৫) বাদী হয়ে রাজপাড়া থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন।

মামলার পর আরএমপির পুলিশ কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিকের সার্বিক দিকনির্দেশনায় রাজপাড়া থানা-পুলিশের একটি টিম মামলার রহস্য উদঘাটনসহ আসামি শনাক্তপূর্বক গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করেন।

পরে উপ-পুলিশ কমিশনার (বোয়ালিয়া) মো. সাজিদ হোসেনের তত্ত্বাবধানে অফিসার ইনচার্জ মো. জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে পুলিশ পরিদর্শক মো. মাইদুল ইসলাম, এসআই কাজল কুমার নন্দী ও তাঁর টিম হোটেলের ভিডিও ফুটেজ এবং রেজিস্টার পর্যালোচনা করেন।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, হোটেলের পুরুষ রেজিস্টারে মিজানের নাম এবং মহিলা রেজিস্টারে জুলেখার নাম। তাঁদের উভয়ের ঠিকানা গোদাগাড়ী এবং সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী। ১৭ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০টায় তাঁরা ড্রিম হ্যাভেন হোটেলের ৪র্থ তলার ৪০৩ নম্বর কক্ষে প্রবেশ করেন। একই দিন বেলা ২টায় মিজানকে রুমে তালা দিয়ে মুখ আড়াল করে হোটেল ত্যাগ করতে দেখা যায়।

এরপর থানা-পুলিশের ওই টিম আরএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সহযোগিতায় তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে আসামির নাম-ঠিকানা ও তাঁর অবস্থান শনাক্ত করে।

পরে ১৮ এপ্রিল রাত সাড়ে ৮টায় নাটোর জেলার সদর থানার আগদিঘা গ্রামে অভিযান চালিয়ে আসামি মো. মিঠুনকে তাঁর নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় আসামির ঘর তল্লাশি করে তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও অপরাধের সময় পরা পোশাকসহ অন্যান্য আলামত জব্দ করে।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার আসামি জানান, মৃত জয়নব বেগমের সাথে তাঁর ৩ মাসের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। দুই সপ্তাহ ধরে জয়নব তাঁকে বিয়ের জন্য চাপ ও হুমকি প্রদান করে আসছিলেন। তাই তিনি পরিকল্পনা করে ১৭ এপ্রিল জয়নাবকে স্ত্রীর পরিচয় দিয়ে মিথ্যা নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে ড্রিম হ্যাভেন হোটেলে ওঠেন। এরপর তিনি হোটেল কক্ষে জয়নব বেগমকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে হোটেল কক্ষ থেকে পালিয়ে যান।

গ্রেপ্তার আসামির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।