রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে অনলাইনে জুয়া ও অবৈধ মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎকারী চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। খবর ডিএমপি নিউজের।

গ্রেপ্তার আসামিদের নাম মো. সাদ্দাম হোসেন মিজি, সহিদুল ইসলাম আলমগীর ও মো. আলমগীর খান। রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে ৯ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) তাদের গ্রেপ্তার করে ডিবি-সাইবারের অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম। তাদের কাছ থেকে অনলাইনে জুয়া ও অবৈধ মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কার্যক্রম পরিচালনার কাজে ব্যবহৃত পাঁচটি মোবাইল ফোন ও সাতটি সিম কার্ড জব্দ করা হয়েছে।

গোয়েন্দা-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. নাজমুল হক জানান, গ্রেপ্তার আসামিরা ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে জুয়া ও অবৈধ মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কার্যক্রম পরিচালনা করত। বেটিং সাইট ও মোবাইল অ্যাপস পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ দুটির গঠন প্রণালিতে প্রথমে রয়েছে সুপার অ্যাডমিন, তারপর পর্যায়ক্রমে ম্যানেজার, ভিআইপি এজেন্ট এবং সর্বশেষে ইউজার। মূলত সুপার অ্যাডমিন ফ্রান্স থেকে ওয়েবসাইট ও অ্যাপস নিয়ন্ত্রণ করে। বিভিন্ন দেশে দেখভালের জন্য বেশ কিছু ম্যানেজার নিয়োগ করা আছে। সংশ্লিষ্ট ম্যানেজাররা কোনো একটি নির্দিষ্ট এলাকা টার্গেট করে সেখানে একজন এজেন্টকে অধিক কমিশনের প্রলোভন দেখিয়ে আকৃষ্ট করে। এজেন্টরা মূলত ইউজার সংগ্রহে সহায়তা ও বিভিন্ন সমস্যা হলে সরাসরি ম্যানেজারের সাথে যোগাযোগ করে সমাধানের কাজ করে। এজেন্টরা সদস্য সংগ্রহ করে তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং তথা পিরামিড সিস্টেমে কমিশন পেয়ে থাকে।

এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এজেন্টরা ২ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ হারে রেফারেল কমিশন পেত। তা ছাড়া এজেন্টরা একজন নতুন গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট খুলতে ৩ হাজার ২০০ টাকা নিত। নতুন গ্রাহক অ্যাকাউন্ট খোলার পর তাকে বিভিন্ন মেয়াদে ডিপোজিট বা বিনিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হতো। তিন দিন থেকে ৪৫ দিনের বিনিয়োগে ২ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে ৩ দশমিক ১ শতাংশ হারে প্রতিদিন মুনাফার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতো। বেশি মুনাফায় আকৃষ্ট হয়ে গ্রাহক বা ইউজাররা বিনিয়োগ করত। নতুন সদস্যদের ৩ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকার ডিপোজিট বা বিনিয়োগে ২০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৭৭৭ টাকা পর্যন্ত আপলাইন গ্রাহককে কমিশনের অফার করত। নতুন অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়ার জন্য রেফারেলকারীকে ৩ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত মাসিক আয়ের অফার করত।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সম্পর্কে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. নাজমুল হক বলেন, গ্রেপ্তার সাদ্দাম এজেন্ট এবং সহিদুল ও আলমগীর তার সহযোগী হিসেবে কাজ করত। সাদ্দাম বিভিন্ন এলাকা থেকে ইউজার সংগ্রহ করে মোবাইল অ্যাপসে অ্যাকাউন্ট তৈরি ও তাতে ডিপোজিট করতে সহায়তা করত। ডিপোজিট করা টাকা ডিজিটাল হুন্ডির সহায়তায় দেশের বাইরে পাচার হয়ে যেত। গ্রেপ্তার আসামিদের নিবন্ধিত অ্যাকাউন্টের তথ্য পর্যালোচনা করে প্রায় ৩ কোটি টাকা লেনদেন ও লেনদেন করা টাকা বিভিন্ন মাধ্যমে বিদেশে পাচার হওয়ার প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে। চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।