যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের অর্ধশতকের বন্ধুত্বকে আরও এগিয়ে নিতে সহযোগিতার ক্ষেত্র আরও সম্প্রসারণ এবং কৌশলগত অংশীদারত্ব বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, ‘যে সনাতন দৃষ্টিভঙ্গিতে আমরা আমাদের দুই দেশের সম্পর্ককে দেখি, তাতে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। এখন আমাদের অংশীদারত্ব হওয়া দরকার সত্যিকার অর্থেই কৌশলগত।’

আর সে জন্য শান্তিরক্ষা, সন্ত্রাস দমন, মেরিটাইম এবং এভিয়েশন সিকিউরিটির মতো ক্ষেত্রেও দুই দেশের অংশীদারত্ব আরও সম্প্রসারণ করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান। খবর বিডিনিউজের।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বুধবার লন্ডনে ব্রিটিশ ফরেইন, কমনওলেথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের লকার্নো রুমে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দুই দেশের সম্পর্কের রূপরেখা নিয়ে কথা বলছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর ১৯৭২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় যুক্তরাজ্য। সেই সঙ্গে ইউরোপীয় এবং কমনওয়েলথভুক্ত বিভিন্ন দেশের স্বীকৃতি পেতেও সহযোগিতা করে।

বাংলাদেশ কমনওয়েলথে যোগ দেয় ১৯৭২ সালের ১৮ এপ্রিল। ওই বছরই ঢাকায় মিশন খোলে যুক্তরাজ্য। বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীর মতো দুই দেশের এই কূটনৈতিক সম্পর্কও অর্ধশতকে পৌঁছাচ্ছে।

ব্রিটিশএশিয়ান ট্রাস্ট আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ মন্ত্রী পেনি মরটন, হাউজ অব লর্ডসের সদস্য জিতেস গাধিয়া, ব্রিটিশ পার্লামেন্টের তিন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপি রুশনারা আলী, রূপা হক, আপসানা বেগমসহ বেশ কয়েকজন এমপি।

শেখ হাসিনা বলেন, দুই দেশের এই অংশীদারত্বের কেন্দ্রে রয়েছে প্রাণবন্ত ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটি।

“প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়ে আমরা গর্বিত। ওয়েস্টমিনস্টারে তাদের প্রতিনিধিত্ব ক্রমশ বাড়ছে, তাতে আমি খুবই আনন্দিত। এখন যে চারজন (বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি) আছেন, তাদের সবাই নারী।”

শেখ হাসিনা বলেন, ভবিষ্যতে এ কমিউনিটির আরও অনেকে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে জায়গা করে নেবে, এ বিষয়ে তিনি আত্মবিশ্বাসী।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে সত্যিকার অর্থেই বিশ্ব নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে চায়। শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্ব বাড়ানোর যে আগ্রহ যুক্তরাজ্য দেখিয়েছে, তাকে তিনি স্বাগত জানান।
রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান খুঁজে বের করতে যুক্তরাজ্যের যে ভূমিকা, সে কথা প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় স্মরণ করেন। কিন্তু বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে থাকা বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের অবস্থানের কারণে কক্সবাজারের আইনশঙ্খলা রক্ষা করা যে দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে, সে কথাও তিনি বলেন।

নিরাপত্তার এই চ্যালেঞ্জ যে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সমস্যার কারণ ঘটাতে পারে, সে বিষয়ে সতর্ক করে শেখ হাসিনা বলেন, “মিয়ানমারের নাগরিক এই রোহিঙ্গারা যাতে দ্রুত নিরাপদে এবং আত্মমর্যাদার সাথে তাদের দেশে ফিরে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব। আর এটাই এ সঙ্কট সমাধনের একমাত্র পথ।”

গ্লাসগোতে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পর বুধবার দুপুরেই লন্ডনে পৌঁছান শেখ হাসিনা। সন্ধ্যার অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর আরেক মেয়ে শেখ রেহানাও ছিলেন তাঁর সঙ্গে।

এ ছাড়া মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশএশিয়ান ট্রাস্টের এ অনুষ্ঠানে।