করোনাভাইরাসের অমিক্রন ধরন বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বাড়িয়েই চলেছে। ইউরোপে এর ব্যাপক দাপট দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে ব্যাপক হারে ছড়াচ্ছে এই ধরন। মহামারি শুরুর পর থেকে এক দিনে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ দেখল এই দেশটি। স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যে নতুন করে ৮৮ হাজার ৩৭৬ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। রয়টার্সের বরাত দিয়ে এ খবর দিয়েছে প্রথম আলো।

খবরে বলা হয়, গত বুধবার যুক্তরাজ্যে নতুন করে ৭৮ হাজার ৬১০ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছিল। মহামারি শুরুর পর এটাই ছিল সংক্রমণ শনাক্তের সর্বোচ্চ সংখ্যা। গতকাল সংক্রমণ শনাক্তের এই সংখ্যা আগের দিনের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। আগামী কয়েক দিনে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যে এক দিনে সর্বোচ্চ ৬৮ হাজার ৫৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। এখন পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় ১ কোটি ১১ লাখ মানুষের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। নতুন ১৪৬ জনসহ দেশটিতে করোনায় মারা গেছেন প্রায় ১ লাখ ৪৭ হাজার মানুষ।

করোনার অতি সংক্রামক ধরন অমিক্রন শনাক্তের পর তা যুক্তরাজ্যজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। এখন পর্যন্ত দেশটিতে ১০ হাজারের বেশি মানুষের শরীরে ধরনটির উপস্থিতি মিলেছে। অমিক্রনে আক্রান্ত হয়ে কমপক্ষে ১০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, মারা গেছেন ১ জন।

প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এর মধ্যেই দেশটিতে করোনার নতুন ঢেউ আঘাত হানতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তবে সংক্রমণ মোকাবিলায় নতুন করে বিধিনিষেধ জারির পক্ষে নন যুক্তরাজ্যের ১০০ জনের বেশি আইনপ্রণেতা। গত মঙ্গলবার এক ভোটাভুটিতে তাঁরা বিধিনিষেধের বিপক্ষে অবস্থান নেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ক্রিস হোয়াইটি এমপিদের উদ্দেশে বলেন, অমিক্রন অতিমাত্রায় সংক্রমক। খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। সামনেই বড়দিনের উৎসব। মানুষজনকে নিজেদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এখন অমিক্রনে আক্রান্তদের সংখ্যা কিছুটা কম হলেও খুব শিগগির এ সংখ্যা বাড়বে। হাসপাতালগুলো এখনই রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।

মহামারি শুরুর পর থেকে অমিক্রন যুক্তরাজ্যের জন্য ‘সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হুমকি’ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির হেলথ সিকিউরিটি এজেন্সির প্রধান নির্বাহী জেনি হ্যারিস। তিনি বলেন, করোনার আগের ধরনগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে আগামী কয়েক দিনে সংক্রমণের হার হতবাক করে দেওয়ার মতো হতে পারে বলে প্রাপ্ত হিসাব–নিকাশগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে।

এদিকে অমিক্রন ছড়িয়ে পড়ায় যুক্তরাজ্যে ভ্রমণ ও সে দেশ থেকে আসার ওপর কড়াকড়ি আরোপ করতে যাচ্ছে ফ্রান্স। স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার ফ্রান্স সরকারের এক বিবৃতিতে জানায়, শনিবার মধ্যরাত থেকে যুক্তরাজ্য থেকে ফ্রান্সে আসা এবং ফ্রান্স থেকে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার সংগত কারণ দেখাতে হবে। এ ক্ষেত্রে টিকা নেওয়া এবং টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদেরও এ নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। মানুষ শুধু ভ্রমণের জন্য এবং পেশাগত কারণে যুক্তরাজ্য থেকে আসতে বা সেখানে যেতে পারবে না।