যশোরে নবনির্বাচিত মেম্বার উত্তম সরকার হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয় পাঁচজনকে, যাদের কাছ থেকে অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়। ছবি: পুলিশ নিউজ

যশোরের অভয়নগর থানাধীন সুন্দলী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত মেম্বার উত্তম সরকার হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ।

এ ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে অস্ত্র, গুলি ও বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতদের পরিচয়
খুলনার ডুমুরিয়া থানার রুদাঘরা উত্তরপাড়া এলাকার ইকরামুল গোলদার ওরফে জুয়েল (১৯), যশোরের অভয়নগর থানার ভদ্দর বিশ্বাস সুন্দলী পূর্বপাড়া এলাকার প্রজিৎ বিশ্বাস ওরফে বুলেট (৪৬), একই জেলার মনিরামপুর থানার সুজাতপুরের পল্লব বিশ্বাস ওরফে সুদীপ্ত (২৪), সাতক্ষীরার শ্যামনগরের দক্ষিণ কদমতলা গ্রামের প্রশান্ত মন্ডল (৩৮) এবং খুলনার ডুমুরিয়া থানার দিঘলিয়া গ্রামের বিজন কুমার মন্ডল ওরফে বিনোদ (৪২)।

উদ্ধারকৃত আলামত
লোহার তৈরি একটি ওয়ান শুটারগান, তিনটি গুলি, দুটি গুলির খোসা, ছয়টি ১২ বোর কার্তুজ, একটি লোহার রড, একটি ককটেল, ১০ গ্রাম বোমা তৈরির পাউডার, ৫০ গ্রাম বোমা তৈরির তারকাঁটা, একটি শপিং ব্যাগ, উত্তম মেম্বার হত্যার মিশনে আসামিদের ব্যবহৃত ৫টি মোবাইল ফোন, দুটি মোটরসাইকেল ও একটি এয়ারগান।

উত্তম মেম্বারকে হত্যা যেভাবে
১০ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে যেকোনো সময় অভয়নগর থানাধীন সুন্দলী ইউনিয়নের হরিশংকরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের মাঠে নবনির্বাচিত মেম্বার উত্তম সরকারকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনার পরের দিন অভয়নগর থানায় মামলা হয়।

যেভাবে হত্যা রহস্য উদ্ঘাটন
মামলাটি ক্লুলেস ও চাঞ্চল্যকর হওয়ায় যশোরের পুলিশ সুপার (এসপি) প্রলয় কুমার জোয়ারদার, বিপিএম (বার) পিপিএম দ্রুত সময়ে রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখাকে (ডিবি) তদন্তের নির্দেশ দেন।

এসপির দিকনির্দেশনায় অন্য জ্যেষ্ঠ কর্তৃপক্ষের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ডিবির অফিসার ইনচার্জ রুপন কুমার সরকার, পিপিএম কাজ শুরু করেন। তাঁর সার্বিক সহযোগিতায় পুলিশ পরিদর্শক শেখ শাহিনুর রহমানের নেতৃত্বে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শামীম হোসেন ও এসআই মফিজুল ইসলাম, পিপিএমদ্বয়ের সমন্বয়ে একটি চৌকস দল তদন্তে নামে।

তদন্তের অংশ হিসেবে শনিবার রাত দেড়টা থেকে রোববার ভোর পাঁচটা পর্যন্ত খুলনার ডুমুরিয়া থানার বিভিন্ন এলাকা, যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর ও কেশবপুর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঘটনায় জড়িত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই সময় তাঁদের হেফাজত থেকে অস্ত্রসহ অন্য সরঞ্জামগুলো উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেপ্তার ও পলাতক আসামিরা একটি সংঘবদ্ধ কথিত নিউ বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য। তাঁরা পরস্পর যোগসাজশে দলীয় ছদ্মনাম ব্যবহার করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ অস্ত্র, বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহার করে হত্যা, চাঁদাবাজি সংঘটন করে থাকে। তাঁদের মধ্যে অনেকেই ইতিপূর্বে বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশে আত্মসমর্পণ করে আবার সংঘবদ্ধ হয়েছে। নতুন সদস্য সংগ্রহ করে নতুন দল গঠন করে তাঁরা যশোরের অভয়নগর, মনিরামপুর, কেশবপুরসহ আশপাশের জেলাগুলোতে মাছের ঘের দখল, চাঁদাবাজি ও হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকে।

এরই ধারাবাহিকতায় গ্রেপ্তার ও পলাতক আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ১০ জানুয়ারি রাতে অভয়নগর থানাধীন হরিশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের মাঠে ৩ নম্বর সুন্দলী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত ইউপি সদস্য উত্তম সরকারের কাছে চাঁদা দাবি করেন। সেই টাকা না পেয়ে তাঁকে গুলি করে হত্যা করেন তাঁরা।