যশোর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফিং দিচ্ছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ।

চিরযৌবন পাওয়ার নেশায় যশোরের বাঘারপাড়ায় বৃদ্ধকে খুন করে চোখসহ বিভিন্ন অঙ্গ কেটে নেওয়া লিটন ও এক কবিরাজকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। উদ্ধার করা হয়েছে কেটে নেওয়া অঙ্গপ্রত্যঙ্গ।

যশোর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গত ৩০ মে সকাল ৯টার দিকে বাঘারপাড়া থানাধীন পশ্চিম পাইকপাড়া এলাকায় জনৈক বেনজির আহম্মেদের বসতবাড়ি থেকে নকিম উদ্দিনের (৬০) মৃতদেহ উদ্ধার করে বাঘারপাড়া থানা-পুলিশ।

জানা যায়, গত ২৬ মে নকিম উদ্দিন তাঁর নিজ বাড়িতে কাউকে কিছু না বলে বাঘারপাড়া ছাতিয়ানতলা বাজারে কিষান দেওয়ার জন্য গেলে সেখান থেকে তাঁকেসহ ৩ জন কিষানকে গৃহস্থ বেনজির আহম্মেদ তাঁর বাড়িতে নিয়ে যান। তাঁদের মধ্যে একজন কিষান দুদিন পরে চলে যান। এরপর ৩০ মে সকাল অনুমান ৬টার সময় বাড়িওয়ালা বেনজির আহম্মেদ কিষানদের ডাকতে গেলে সাড়া না পেয়ে ঘরের দরজা খুলে দেখতে পান, নকিম উদ্দিনের মৃতদেহ খাটে পড়ে আছে। অপর কিষানকে ঘরে পাওয়া যায় না। মৃত নকিম উদ্দিনের সুরতহাল করে দেখা যায়, তাঁর ১টি চোখ ও পুরুষাঙ্গ নেই। এ ঘটনায় নকিম উদ্দিনের ছেলে মো. মাজহারুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করলে বাঘারপাড়া থানায় মামলা হয়।

এরপর জেলার পুলিশ সুপারের দিকনির্দেশনায় জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জ রুপন কুমার সরকার পিপিএমের তত্ত্বাবধানে ডিবির এসআই মফিজুল ইসলাম পিপিএম ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে। এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মো. শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি চৌকস টিম ৩১ মে থেকে যশোর, মাগুরা, ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে। এরপর ১ জুন দুপুর সাড়ে ১২টার সময় মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর থানার চর ঘিওর মাঠে কিষান সেজে অভিযান চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি কিষান লিটনকে গ্রেপ্তার করে। এরপর তাঁর স্বীকারোক্তি মোতাবেক নিহত কিষান নকিম উদ্দিনের চোখের মণি, অন্ডকোষ ও পুরুষাঙ্গ একটি খড়ের পাল্লার মধ্য থেকে উদ্ধার করে।

পরে গ্রেপ্তার করা আসামি লিটনের স্বীকারোক্তি মোতাবেক একই দিন রাত সাড়ে ১১টার সময় চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা থানাধীন লোকনাথপুরে অভিযান চালিয়ে তান্ত্রিক কবিরাজ আ. বারেককে গ্রেপ্তার এবং তাঁর বসতঘর থেকে কবিরাজির বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।

হত্যার আলামতসহ গ্রেপ্তার আসামিরা। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ

গ্রেপ্তার আসামিদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তান্ত্রিক কবিরাজ আ. বারেকের নির্দেশে বিকৃত মানসিকতার অধিকারী লিটন যৌনশক্তি বৃদ্ধি ও চিরযৌবনপ্রাপ্ত হওয়ার নেশায় দীর্ঘদিন ধরে নরহত্যা করে পুরুষাঙ্গ, অন্ডকোষ ও চোখের মণি সংগ্রহ করার চেষ্টা করে আসছেন।

দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করে কিষানের কাজ, রিকশা চালিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে টার্গেট করে হত্যার চেষ্টা ও পুরুষাঙ্গ, অন্ডকোষ ও চোখের মণি সংগ্রহের চেষ্টার একপর্যায়ে বাঘারপাড়া সাতিয়ানতলা বাজারে এসে কিষান হিসেবে নিয়োজিত হওয়ার আগে নিহত কৃষান নকিম উদ্দিনের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। নকিম উদ্দিনকে টার্গেট করে তাঁর সঙ্গে গৃহস্থ বেনজির আহম্মেদের বাড়িতে কিষানের কাজে নিয়োজিত হয়ে কবিরাজ বারেকের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করে তাঁর নির্দেশে রশি দিয়ে নকিম উদ্দিনের গলায় ফাঁস দিয়ে হত্যা করেন লিটন।

হত্যার পর নকিম উদ্দিনের পুরুষাঙ্গ ও অন্ডকোষ কর্তন এবং ডান চোখের মণি নিয়ে পালিয়ে যান লিটন।