রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় চাঞ্চল্যকর ভ্যানচালক মিয়াজান মিয়া (৪২) হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। পুলিশ এ ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মাফলার ও ছিনতাই করা ভ্যানটি জব্দ করেছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, মিয়াজান মিয়া মিঠাপুকুর গড়ের মাথা-ফুলবাড়ী রাস্তায় নিয়মিত ভ্যান চালাতেন। গত ২০ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তিনি ব্যাটারিচালিত ভ্যান নিয়ে বের হন। এরপর আর বাড়িতে ফেরেননি। পরের দিন মিঠাপুকুর থানাধীন ৮ নম্বর চেংমারী ইউনিয়নের রামেশ্বরপুর গ্রামের একটি আমবাগান থেকে গাছের সঙ্গে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। হত্যাকারীরা তাঁর ভ্যান ও মোবাইল ফোনসেট নিয়ে চলে যায়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ হত্যাকাণ্ড গুরুত্বসহকারে প্রচার করা হয়। মিয়াজান মিয়ার স্ত্রী রোমানা বেগম (৩৬) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মিঠাপুকুর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

এরপর মিঠাপুকুর থানার পুলিশ দ্রুত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে অভিযানে নেমে পড়ে। রংপুরের পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলী চৌধুরীর দিক-নির্দেশনায়, সার্কেল এএসপি মো. কামরুজ্জামান, পিপিএম-সেবা, (মিঠাপুকুর-পীরগঞ্জ) ও মিঠাপুকুর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. জাকির হোসেনের সরাসরি তদারকিতে এবং ওই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মিঠাপুকুর থানার এসআই এনামুল হকের সার্বিক প্রচেষ্টা ও অন্যান্য অফিসার ও ফোর্সদের বিভিন্ন সহযোগিতায় গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে মিঠাপুকুর থানাধীন রামেশ্বরপুর গ্রাম থেকে মো. মনিরুজ্জামান মনির (১৭) নামের এক কিশোরকে আইনের হেফাজতে নেওয়া হয়। এরপর তাঁর কাছ থেকে মিয়াজানের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি জব্দ করা হয়। মনিরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তাঁর বাড়ি থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মাফলার জব্দ করা হয়।

মনিরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অপর কিশোর মো. মেহেদি হাসানকে (১৬) কাশিমপুর সরকারপাড়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে আইনের হেফাজতে নেওয়া হয়। পরে মেহেদীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রংপুরের গঙ্গাচড়া থানাধীন গজঘন্টা ইউনিয়নের একটি গ্যারেজ থেকে মিয়াজানের ভ্যানটি জব্দ করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে ওই কিশোরেরা জানায়, মনির ও মেহেদি হাসান ২০২১ সালে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। তারা খুব ভালো বন্ধু এবং একই সাথে চলাফেরা করে। তাদের কাছে কোনো টাকা না থাকায় তাদের সমস্যার কথা তাদের প্রতিবেশী পলাতক আসামি মো. বুলবুল আহমেদকে (২৬) জানায়। তখন বুলবুল তাদের বলে, তারা যাত্রীবেশী একটি ভ্যান ভাড়া করবে। এরপর নির্জন জায়গায় গিয়ে চালকের কাছ থেকে জোর করে ভ্যান কেড়ে নিয়ে যাবে। এরপর ভ্যান বিক্রি করে তারা টাকা ভাগ করে নেবে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী বুলবুল, মেহেদি ও মনির ২০ জানুয়ারি রাত সাড়ে ১১টায় মিয়াজানের ভ্যানে ওঠে। আমবাগানের পাশে নির্জন জায়গায় পৌঁছালে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী বুলবুল তার মাফলার ভিকটিম মিয়াজানের গলায় পেঁচিয়ে ধরে এবং মিয়াজানসহ ভ্যানটি নিয়ে মূল রাস্তা থেকে ৩০০ মিটার দূরে আমবাগানে নিয়ে যায়। এরপর গলায় মাফলার পেঁচিয়ে তিনজন মিলে মিয়াজানকে হত্যা করে। এরপর তারা মিয়াজানের মরদেহ তাঁর ভ্যানে থাকা দড়ি দিয়ে বেঁধে আমগাছের সাথে বেঁধে রাখে। এরপর তারা ভ্যানটি নিয়ে রাতেই রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া থানাধীন গজঘন্টা এলাকায় চলে যান। পরের দিন তারা ভানটি বিক্রি করে বাড়িতে ফেরত আসে এবং স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে থাকে। ২২ জানুয়ারি তারা মিয়াজানের জানাজাতেও অংশগ্রহণ করে।

ওই দুই কিশোর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।