মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ও রাজস্ব দপ্তর বাংলাদেশের আইজিপি, র‌্যাবের মহাপরিচালকসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাত সদস্যের বিরুদ্ধে যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, তাতে ঘাবড়ে যাওয়ার অবস্থায় বাংলাদেশ নেই বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ।

তিনি বলেছেন, এই সময়ে এসে নিষেধাজ্ঞার কারণ হতে পারে, জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে। বেশ কিছু কারণেই তিনি এটা করছেন। প্রথমে বলা যায়, ক্যাপিটল হিলের ওপর যে হামলা হলো, তাতে বিশ্বজুড়ে মার্কিন গণতন্ত্র একটি কার্টুনে পরিণত হয়ে পড়ে। এটা তো অস্বীকার করলে চলবে না। এটা অন্য কোনো দেশে হলে তার পেছনে একেবারে ব্যর্থ রাষ্ট্র তকমা জুড়ে দেওয়া হতো। এটা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অচিন্তনীয় বিষয়। আরেকটি বিষয় কিন্তু অনেকেই খেয়াল রাখছে না; সেটি হলো, এখন পর্যন্ত জো বাইডেনকে স্বীকার করে নেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। এখন পর্যন্ত বলছেন, তিনি অবৈধ প্রেসিডেন্ট। তাঁর পেছনে প্রায় সাত কোটি ভোটারের সমর্থন আছে। এর কিছু প্রভাব আমরা দেখছি। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রাজ্যে টিকা না নেওয়া থেকে শুরু করে নানা কর্মকাণ্ডে এসব চোখে পড়ছে। গণতন্ত্রের প্রধান রক্ষাকারী যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থা তো কাঙ্ক্ষিত নয়।
প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইমতিয়াজ আহমেদ এসব কথা বলেন।

ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, আফগানিস্তান থেকে যে পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রায় বাধ্য হয়ে চলে যেতে হলো, সেই লজ্জাজনক পরিস্থিতিরও একটা প্রলেপ তো চাই। রাতের অন্ধকারে চলে যাওয়া, আফগান সরকারের না জানা—এসব পরিস্থিতিকে সামলাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। তাই এই আফগানিস্তানে পরাজয়, ক্যাপিটল হিলে হামলা, ব্ল্যাক লাইভ ম্যাটারসের মতো বিষয়গুলো—সব মিলিয়ে তার গণতন্ত্রকে উদ্ধারের চেষ্টা সে করবেই। আর এমন একটা সময় এসে পড়েছে, যখন চীন বড় ধরনের একটি অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র নিয়ে একই অবস্থায় পড়ে ছিল। তখন কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন অর্থনৈতিক শক্তি ছিল না। আর চীন তো আশপাশেই ছিল না। কিন্তু চীন এখন একটি বিশাল অর্থনৈতিক শক্তি। ঠিক এ সময়ে গণতন্ত্রের এই সম্মেলনের মূলে আছে চীনের বিরোধিতা। চীন ও উত্তর কোরিয়ার মতো দেশের পাশাপাশি এখানে বাংলাদেশকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা অনেক বেশি। আমার কথা হলো, বাংলাদেশের বিষয়টা বাংলাদেশে সমাধান হওয়া উচিত। তাদের অনেক বেশি হয় বলে আমাদের দেশেও হতে হবে, সেটা কখনোই হতে পারে না। আমাদের দেশে একটিও বিচারবহির্ভূত হত্যা হতে পারবে না—এই পরিবেশ সৃষ্টি করা দরকার।’