পুলিশের হেফাজতে গ্রেপ্তার আসামি। ছবি: বাংলাদেশ পুলিশ।

মানিকগঞ্জে নির্মাণাধীন ভবনে বালুর নিচে পুঁতে রাখা অজ্ঞাত পরিচয় এক নারীর মরদেহ উদ্ধারের দুই দিনের মধ্যে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনসহ আসামিকে গ্রেপ্তার করছে পুলিশ। পারিবারিক কলহের জের ধরে স্বামী মো. বাবুল (৩৮) তার দ্বিতীয় স্ত্রী রোকসানাকে (৪৫) হত্যা করে মরদেহ গুম করার জন্য নির্মাণাধীন ভবনের মেঝেতে পুঁতে রাখেন।

নিহত রোকসানা মানিকগঞ্জে সিংগাইর উপজেলার বায়রা নয়াবাড়ী এলাকার মৃত ছইজুদ্দীনের মেয়ে। তিনি সৌদি আরব প্রবাসী।

শুক্রবার(২০ অক্টোবর) দুপুরে মানিকগঞ্জ সদর থানায় এক প্রেসব্রিফিং এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান।

পুলিশ সুপার জানান, পারিবারিক তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রবাসী রোকসানাকে হত্যা করা হয়। নিজ বাড়িতে স্ত্রী রোকসানাকে হত্যা করে তার মরদেহ পাশের ভবনের মেঝেতে পুঁতে রেখে পালিয়ে যান স্বামী মো. বাবুল তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বাবুলকে খুলনা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রোকসানাকে হত্যার কথা স্বীকার করেন বাবুল।

সদর থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার দরিকান্দি এলাকার শেখ কাশেম আলীর ছেলে বাবুল তিন বছর আগে রোকসানাকে গোপনে বিয়ে করেন। বিয়ের পরেই সৌদি আরবে চলে যায় রোকসানা। বিদেশ থেকে নিয়মিত স্বামীর কাছে টাকা পাঠাতেন তিনি। সেই টাকা দিয়ে শানবান্দা এলাকায় জমি কিনে একতলা বাড়ি নির্মাণ করেন বাবুল।

গত ৬ অক্টোবর ছুটিতে দেশে আসেন রোকসানা। পরে সাভারের একটি ভাড়া বাসায় স্বামী বাবুলকে নিয়ে থাকেন। এর পর ১৩ অক্টোবর শানবান্দা গ্রামর ওই নির্মাণাধীন বাড়িতে আসেন রোকসানা-বাবুল দম্পত্তি। রাতে সেখান পারিবারিক বিষয়ে বাবুলের প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে তালাক নিয়ে রোকসানার সঙ্গে বাবুলের কথা কাটাকাটি হয়। এরপর রোকসানা ঘুমিয়ে যান। গভীর রাতে রোকসানাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে পাশের রুমের বালুর মধ্যে মরদেহ পুঁতে রেখে পালিয়ে যান বাবুল।

এরপর মঙ্গলবার ওই বাড়ি থেকে প্রচণ্ড দুর্গন্ধ আসলে আশপাশের লোকজন নির্মাণাধীন ওই বাড়িতে প্রবেশ করেন এবং রুমের ভেতর থেকে গন্ধের কারণ অনুসন্ধান করতে থাকেন। পরে রুমের ভেতরের মাটি-বালু সরালে নিহত ওই নারীর হাত বেড়িয়ে আসে।

পরে বিষয়টি মানিকগঞ্জ সদর থানা পুলিশকে অবহিত করলে সদর থানা পুলিশ অজ্ঞাত পরিচয় ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করেন। পরে নিহতের ভাই ফজল খবর পেয়ে জেলা হাসপাতালে গিয়ে তার বোন রোকসানার মরদেহ শনাক্ত করেন।

সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রউফ জানান, এ ঘটনায় মামলার পর তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে খুলনার একটি পার্ক থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার বাবুলকে গ্রেপ্তার করেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি বাবুল তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার জন্য রাজি হয়েছেন।

এদিকে পুলিশের হেফাজতে থাকা বাবুল জানান, রোকসানার সঙ্গে তার পরিচয় হওয়ার পর তাকে বিয়ে করেন। দুই বছর আগে রোকসানা সৌদি আরব যান। সেখান থেকে বাড়ি করার জন্য সাত থেকে আট লাখ টাকা পাঠান। ঘটনার দিন ১৩ অক্টোবর রাতে তার বাবা-মা ও স্ত্রী-সন্তানদের গালি দেন রোকসানা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে দ্বিতীয় স্ত্রী রোকসানাকে হত্যা করেন তিনি।