শেখ আবুল বাশার

কোনোদিন সকাল নয়টায়, আবার কোনোদিন সকাল আটটায়ই রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দেখা যায় তাঁকে। কখনো তাঁকে বসে থাকতে দেখা যায় না। পায়চারি করতে করতে অথবা দাঁড়িয়ে চারদিকে নজর রাখতে থাকেন। কে আসছে, কে যাচ্ছে, কে কী বলছে- সবদিকেই নজর তাঁর। তাঁর আচরণ ও অবস্থান পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে দেয়, তিনি মানবাধিকার ও মানবতায় বিশ্বাসী।

এভাবেই পুলিশ পরিদর্শক শেখ আবুল বাশারকে উপস্থাপন করেছে নিউজিল্যান্ডের সুপরিচিত সাময়িকী দ্য ওয়েলিংটন ম্যাগাজিন। তাঁকে নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ আবুল বাশার দায়িত্বশীলতা ও মানবিকতার প্রতীক।

ওয়েলিংটন ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ

দ্য ওয়েলিংটন ম্যাগাজিনের বিশেষ সংখ্যায় প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে। এই সংখ্যায় নোবেল পুরস্কারবিজয়ী মালালা ইউসুফজাই, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ শামসুন্নাহারসহ বেশ কয়েকজনকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। বিশেষ সংখ্যাটির শিরোনাম ‘যেসব মানুষ জাতিকে আলোকিত করেছেন’।

প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিদিনই মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচিসহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। সবকিছুই পর্যপবেক্ষণের দায়িত্বে থাকেন পুলিশ পরিদর্শক শেখ আবুল বাশার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা হিসেবে তাঁকে একদিকে যেমন শান্তি ও শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে হয়, একইভাবে তাঁকে জনগণের অধিকারও নিশ্চিত করতে হয়, যাতে তাঁরা শান্তি ও শৃঙ্খলার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পর্য ন্ত নিজেদের বক্তব্য পৌঁছাতে পারে।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিদিনই কোনো না কোনো গোষ্ঠীর আগমন ঘটে। কখনো শ্রমিকেরা বেতন-ভাতার দাবিতে এখানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন, কখনো নির্যাকতন-নিপীড়ন-ধর্ষণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ হয়, আবার অন্য কোনো দাবিতেও কারও কারও আগমন ঘটে। কখনো কখনো দাবি জানানো ব্যক্তিরা, বিক্ষোভকারীরা দীর্ঘসময় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নেন। এই মানুষগুলোকে শান্তিপূর্ণভাবে তাঁদের দাবি জানানোয় সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন পুলিশ পরিদর্শক শেখ আবুল বাশার। শুধু তা-ই নয়, ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলোও তিনি স্বচ্ছতার সঙ্গে সম্পন্ন করেন। যেমন বিক্ষোভকারীদের বিক্ষোভ যখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে উপক্রম হয়, শেখ আবুল বাশার তখন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দেন, যা সাধারণ মানুষের কাছে অবিশ্বাস্যই মনে হতে পারে।

ওয়েলিংটন ম্যাগাজিনে শেখ আবুল বাশার নিয়ে প্রতিবেদন

শেখ আবুল বাশারের দক্ষতা সম্পর্কে ধারণা পেতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সংগঠনের সদস্য মোহসিনর বক্তব্যই যথেষ্ট। তিনি বলেন, ‘আমরা অন্ধ। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আমরা যখন বিশেষ কোটার দাবিতে বিক্ষোভ করছিলাম, আমরা তখন শেখ আবুল বাশারের মানবিক আচরণ প্রত্যক্ষ করেছি। তিনি আমাদের সহযোগিতা করেছেন, অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। তাঁর আচরণের কারণে পুলিশ সম্পর্কে আমাদের ধারণা পাল্টে গেছে।’

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, শেখ আবুল বাশার ১৯৬৪ সালে গোপালগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা শেখ আবুল কাশেমও পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। ১৯৮৯ সালে স্নাতক সম্পন্ন করে শেখ আবুল বাশার পুলিশে সার্জেন্ট পদে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগের শাহবাগ থানার টহল পুলিশ পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।