বাংলাদেশ পুলিশের পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন (পিসিএসডব্লিউ) ফেসবুক পেজটি ভেরিফায়েড হয়েছে। ৩ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) পেজটিতে ভেরিফায়েডের নীল রঙের টিকচিহ্ন সংযোজিত হয়।

ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার) গত বছরের ১৬ নভেম্বর পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন-এর উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন গত প্রায় ১০ মাসে ৭ হাজার ৩০২ জনকে সেবা দিয়েছে। গত ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন ফেসবুক পেজের অনুসারীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৪৮ হাজার ৪২৮।

গত ১ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে ‘পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন’ পেজের পরিচালনাকারী পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এলআইসি শাখার সার্বিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, উদ্বোধনের পর থেকে পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেনের ফেসবুক পেজে ১৪ হাজার ৬২৩টি মেসেজ, হটলাইন নম্বরে ২২ হাজার ৮৬৮টি ফোনকল ও ইমেইলে ৩২৯টি অভিযোগ এসেছে। গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তালিকাভুক্ত মোট সেবাপ্রত্যাশীর সংখ্যা ১৪ হাজার ৬২৩ জন। তাঁদের মধ্যে ১ হাজার ২২৭ জন অভিযোগকারী সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন থেকে সেবা গ্রহণ করেছেন নাম প্রকাশ না করে এমন এক শিক্ষার্থী (১৯) পুলিশ নিউজকে বলেন, ‘আমাকে অপরিচিত দুটি আইডি থেকে ফেসবুকে ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি দিয়ে মেসেজ পাঠাত। বিষয়গুলো এতটাই কুরুচিপূর্ণ ছিল যে, আমি আমার আত্মীয়স্বজনকে বিষয়টি জানাতে সংকোচ বোধ করছিলাম। তখন আমি এই পেজে অভিযোগ করি। পুলিশ খুবই দ্রুত স্টেপ নিয়ে হুমকিদাতাকে গ্রেপ্তার করেছে।’

ওই প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, মোট ৩ হাজার ৭৪০টি নন-সাইবার অপরাধ এবং পুরুষ সেবাপ্রত্যাশী থেকে প্রাপ্ত অভিযোগের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ইউনিট-সম্পর্কিত তথ্য দেওয়া হয়েছে। ২ হাজার ৭৩৪ জন অভিযোগকারী প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে অনাগ্ৰহ প্রকাশ করেছেন। ৮৪৭ জনের অভিযোগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নথির জন্য যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে এবং এই অভিযোগগুলো অনুসন্ধানাধীন রয়েছে।

পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন থেকে সেবা নেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া আরেক শিক্ষার্থী (২১) বলেন, ‘আমার সাথে একজনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিছুদিন আগে আমাদের সম্পর্ক ভেঙে যায়। এরপর সে আমার ছবি এডিট করে আমাকে হয়রানি শুরু করে। এই পেজে আমি অভিযোগ জানাই। তারা আমাকে মামলা করার পরামর্শ দেয়। সেই অনুযায়ী আমি মামলা করি। এরপর পুলিশ হয়রানিকারীকে গ্রেপ্তার করেছে।’

অভিযোগের ধরন সম্পর্কে পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন এলআইসি শাখার সার্বিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভুক্তভোগীর ছবি বা পরিচয় অথবা উভয় ব্যবহার করে মিথ্যা আইডি খোলা বা বেনামে আইডি খুলে ভুক্তভোগীর ছবি, ভিডিও বা তথ্য প্রচার করা অর্থাৎ ফেইক আইডিসংশ্লিষ্ট অভিযোগ ৩ হাজার ৭৬২টি (২৬%)। কারও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আইডি বিভিন্ন লিংক বা অ্যাপস ব্যবহার করে হ্যাক করা, পাসওয়ার্ড চুরি করে অ্যাকাউন্টের দখল নেওয়া, অর্থাৎ আইডি হ্যাকডের অভিযোগ ১ হাজার ৫৬টি (৭%)।

পূর্বপরিচয় বা সম্পর্কের জের ধরে বা অন্য কোনোভাবে প্রাপ্ত ছবি, ভিডিও বা তথ্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে কোনো সুবিধা আদায় বা টাকা দাবি করা, অর্থাৎ ব্ল্যাকমেলিংয়ের অভিযোগ ১ হাজার ৪৪৬টি (১০%)। মুঠোফোন ব্যবহার করে বুলিয়িং, হয়রানি বা ভয় দেখানোর অভিযোগ ৯৮১টি (৭%)। বিভিন্ন মাধ্যমে অশ্লীল শব্দ, লেখা, ছবি বা ভিডিও পাঠিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ ৫৪২টি (৪%)। অন্যান্য অভিযোগ ৩ হাজার ১১৬টি (২১%)।

পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন থেকে সেবা নেওয়া এক গৃহবধূ (৩২) পুলিশ নিউজকে বলেন, ‘আমার নামে ফেইক আইডি খুলে একজন বিভিন্ন অশ্লীল ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে। এ ব্যাপারে আমি পুলিশের ওই পেজে যোগাযোগ করে ফেইক পেজটি বন্ধ করেছি।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ‘পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন’ নামের ফেসবুক পেজ পরিচালনাকারী পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এলআইসি শাখার এআইজি মীর আবু তৌহিদ, বিপিএম (বার) পুলিশ নিউজকে বলেন, ‘নারীদের জন্য নিরাপদ সাইবার স্পেস তৈরি করতে আইজিপি মহোদয়ের উদ্যোগে এই পেজ চালু করা হয়। পেজটি চালু হওয়ার পর থেকে আমরা সাইবার স্পেসে নারীদের বিভিন্ন অভিযোগ পাচ্ছি। বিদ্যমান আইন ও আইনি কাঠামো অনুযায়ী আমরা প্রতিটি অভিযোগ আমলে নিয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছি। এখন এই পেজটি ভেরিফায়েড হওয়ায় সেবাপ্রত্যাশীগণ সহজেই এটি খুঁজে পাবেন।’