ভালোবেসে শ্রাবন্তী আক্তারকে বিয়ে করেছিলেন মো. মাঈনুল মীর (২০)। পরিবারের মত না থাকায় গোপনে কোর্ট ম্যারেজ করেন তাঁরা। কিন্তু বিয়ের ১০০ ঘণ্টা পার না হতেই আগের প্রেমিকার হাতে খুন হতে হয়েছে মীরকে। পুলিশ এ হত্যাকাণ্ডের তিন ঘণ্টার মধ্যে আসামি জাহান মীমকে (২০) গ্রেপ্তার করেছে।

মীর ও মীমের বাড়ি নরসিংদীর পলাশ থানার দক্ষিণ চরপাড়ায়। আর শ্রাবন্তীর বাড়ি নরসিংদী সদর থানায়। ৬ ফেব্রুয়ারি বিয়ে করেন মীর ও শ্রাবন্তী। মীম পেশায় মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট। আর মীর দাঁতের চিকিৎসকের সহকারী।

পুলিশ জানায়, শ্রাবন্তীকে বিয়ের কথা জানতে পেরে মীরকে ডেকে নেন তাঁর পুরোনো প্রেমিকা মীম। এরপর কৌশলে চেতনানাশক ইনজেকশন পুশ করে মীরের গলায় ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেন মীম। এ ঘটনায় ১২ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) সন্ধ্যায় মীমকে আটক করে নরসিংদীর পলাশ থানা-পুলিশ। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছেন, মীমই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।

মীমকে জিজ্ঞাসাবাদের তথ্যের বরাত দিয়ে পলাশ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ইলিয়াছ বলেন, মীম ও মীর একই এলাকার বাসিন্দা ও সহপাঠী ছিলেন। একসময় দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তবে কিছুদিন পরই সে সম্পর্কে ফাটল ধরে। গত বছরের মাঝামাঝি মীম আরেক ছেলেকে বিয়ে করেন। তিন মাস পর সেই বিয়ে ভেঙে যায়। এরপর আবার মীরের সঙ্গে পুরোনো সম্পর্ক জোড়া লাগে মীমের। কিন্তু এরই মাঝে শ্রাবন্তীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান মীর। পরিবারকে না জানিয়ে ৬ ফেব্রুয়ারি শ্রাবন্তীকে বিয়ে করেন মীর। এরপর স্ত্রীকে নিয়ে নিজ বাসায় বসবাস শুরু করেন। খবর পেয়ে ৭ ফেব্রুয়ারি শ্রাবন্তীর বাবাসহ স্বজনেরা মীর ও শ্রাবন্তীর বাসায় হাজির হন। তাঁরা মেয়েকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দেন। তবে কোনোভাবেই মেয়ে রাজি হননি।

১০ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) কাজে যেতে বাসা থেকে বের হন মীর। রাতে বাড়িতে না ফিরলে স্ত্রী ও স্বজনেরা কল করে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পান। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করে সন্ধান পেয়ে ১১ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) সকালে পুলিশকে জানায় পরিবার। এরপর পুলিশ নানামুখী তদন্ত শুরু করে। একপর্যায়ে জানা যায়, একই এলাকার মীমের সঙ্গে মীরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ঘটনার মোড় নেয় ১২ ফেব্রুয়ারি (শনিবার) বিকেলে। ডেন্টাল চিকিৎসক সিহাবুল হক প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তালা খোলার পর অভ্যর্থনাকক্ষে মীরের গলা কাটা লাশ দেখতে পান। দ্রুত তিনি পুলিশে খবর দেন। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। লাশ উদ্ধারের তিন ঘণ্টার মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে ও প্রাথমিক তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে সন্দেহভাজন মীমকে বাসা থেকে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একপর্যায়ে মীম সব স্বীকার করেন। তিনি জানান, মীরের বিয়ের কথা জানতে পেরে চেতনানাশক ইনজেকশন কেনেন মীম। কৌশলে মীরকে তার কর্মস্থলে ডেকে নেন। একপর্যায়ে মীরের ঘাড়ে ইনজেকশন পুশ করেন মীম। অচেতন হয়ে পড়লে তাঁর গলায় ছুরিকাঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন তিনি। এরপর কর্মস্থলে তালা দিয়ে পালিয়ে যান।

নরসিংদীর পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম বলেন, হত্যার আদ্যোপান্ত জানিয়ে পুলিশের কাছে বক্তব্য দিয়েছেন মীম। ১৩ ফেব্রুয়ারি (রোববার) তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।